Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
International Mother Language Day

International Mother Language Day: একুশের আঁচ, ভাষা-সেতু গড়ার ডাক

লোপামুদ্রা বলছেন, “মাতৃভাষা চর্চা করেন এমন "ভারতীয়দের খুঁজতে গিয়েই মনে হয়েছে, ভাষা তো জাতীয় সংহতিরও উপাদান! বহুভাষিকতা ভারতের দুর্বলতা নয়। বরং সব ভাষাকে সম্মান জানাতে পারার মধ্যেই দেশপ্রেমের বিকাশও সম্ভব।”

লোপামুদ্রা মোহান্তি

লোপামুদ্রা মোহান্তি

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৩৩
Share: Save:

নিজের মাতৃভাষা ‘নারে’ গান গাইছিলেন মেঘালয়ের জয়ন্তিয়া জনজাতির সদ্য তরুণ হিতেশ সুনা। হঠাৎ আবেগে গলা বুজে এল তাঁর! মুম্বইয়ে বসে সেই মুহূর্তটি লোপামুদ্রা মোহান্তির জন্যও অন্য ভাবে চোখ খুলে দিয়েছে।

আদতে ভুবনেশ্বরের মেয়ে লোপা দু’দশকের বেশি মুম্বইয়ে আছেন। কয়েক বছর হল ইংরেজিতে গল্প বলার পেশায় শামিল হলেও ভারতীয় ভাষা নিয়ে তেমন মাথাব্যথা ছিল না। ২০১৯-এ স্কটল্যান্ডে একটি গল্প বলার (স্টোরিটেলিং) আসরে প্রথম দেখলেন, গল্প বলা হচ্ছে নানা ভাষায়। ইংরেজিতে তার ভাষান্তরও চলছে। তখনই মনে হয় ভারতে এত ভাষার মধ্যে গল্প বলার মঞ্চ গড়ে তোলার কথা! এর পরই চলছে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার সম্মিলিত মঞ্চ গড়ে লোপামুদ্রার ভাষা দিবসের উদযাপন। গত দু’বছরে কোভিডের বিচ্ছিন্নতার দিনেই একুশের ডাক তাঁকে মিলিয়ে দিয়েছে মেঘালয়ে নার ভাষাভাষী হিতেশের মতো কত জনের সঙ্গে। নিয়মিত মাতৃভাষায় গল্প, কবিতা বলার মঞ্চে লোপার সঙ্গী প্রায় জনা ৮০ ভারতীয়। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষাভাষী বান্ধবী অনুরাধার কাছে শোনা, কিছু কথাও লোপাকে তীব্র ভাবে নাড়া দেয়। “মাতৃভাষা মুছে যাওয়ার আশঙ্কা কী মারাত্মক, তখনই বুঝতে পেরেছি! এখন শুনি, দুনিয়ায় ১৪ দিনে একটি করে ভাষা মুছে যাচ্ছে”, বলছিলেন লোপা। এটা ভেবেই একুশে ফেব্রুয়ারির আগে এক মাস ধরে বিভিন্ন ভাষাভাষী বন্ধুদের ছোট ছোট ভিডিয়ো উপস্থাপনার অনুষ্ঠান করছেন মুম্বইবাসী উৎকলকন্যা। তাতে বাংলা, ওড়িয়া, মরাঠি, তামিল ইত্যাদি ছাড়াও এ দেশের কিছু বিপন্ন ভাষার চর্চাও উঠে এসেছে।

লোপামুদ্রা বলছেন, “মাতৃভাষা চর্চা করেন এমন "ভারতীয়দের খুঁজতে গিয়েই মনে হয়েছে, ভাষা তো জাতীয় সংহতিরও উপাদান! বহুভাষিকতা ভারতের দুর্বলতা নয়। বরং সব ভাষাকে সম্মান জানাতে পারার মধ্যেই দেশপ্রেমের বিকাশও সম্ভব।”

রবীন্দ্রনাথের গান এবং চট্টগ্রামে মাস্টারদা সূর্য সেন ও তাঁর সঙ্গীদের বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে গান্ধী শেষ জীবনে বাংলা শিখতেন। তিনি বলতেনও, “আমি ভারতীয়, তাই আমি বাঙালিও!” সুভাষচন্দ্র আবার উর্দু মেশা হিন্দুস্তানিতে ভারতীয়ত্বের উপাদান খুঁজে পেয়েছিলেন। আজাদ হিন্দ ফৌজকেও ইতমাদ, ইত্তেহাদ, কুরবানির আদর্শে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি। অতএব বিভিন্ন অচেনা ভাষাকেও কাছে টানার মধ্যে ইতিহাসেরই শিক্ষা দেখছেন লোপামুদ্রা। ইতিমধ্যে তিনটি বিপন্ন ভাষা নার, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, দক্ষিণ কর্নাটকের কোডাভার সাংস্কৃতিক ভান্ডার সংরক্ষণে তাঁরা হাত দিয়েছেন। তিনটি ভাষার স্বেচ্ছাসেবীরাই সাহায্য করছেন। আর একটি কাজ, ‘ইয়ং ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ ক্রুসেডার’ বলে খুদে ভাষা-সৈনিক তৈরি। এই ছোটদের এক এক জনের দায়িত্ব, আরও তিন জন করে বিভিন্ন ভাষার ছেলেমেয়ে খুঁজে আনা। সকলেই নিজের ভাষায় কিছু পড়বেন, বলবেন, চর্চা করবেন। ইংরেজি, হিন্দির দাপটে মুখর বড় শহরগুলোয় অনেক অভিভাবকই এই উদ্যোগের নেপথ্যে। দিল্লিপ্রবাসী পঞ্চম শ্রেণি অরুণাভ সেনগুপ্ত-র স্কুলে বাংলা নেই। কিন্তু এই ভাষাচর্চার মঞ্চে ঢুকে গত এক মাসে ৩০ দিন ধরেই নানা বাংলা গল্প পাঠ করে পোস্ট করেছে লীলা মজুমদারের অন্ধ ভক্ত ছেলেটি।

আজ, সোমবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ইউনেস্কো বহুভাষী শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহারে জোর দিচ্ছে। এই কাজই লোপামুদ্রারা করে চলেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE