Advertisement
০৮ মে ২০২৪
বাঁকুড়া মেডিক্যালে ফের বিতর্ক

ক্যামেরা দেখে দৌড় ওষুধ সংস্থার কর্মীর

ডাক্তার সেজে দালালের রোগী দেখার অভিযোগকে ঘিরে বিতর্কে জড়িয়েছিল বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এ বার মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের সুপারিশে রোগীকে ওষুধ লেখার অভিযোগ উঠল এই হাসপাতালেরই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। সোমবার হাসপাতালের আউটডোরে ইউরোলজি বিভাগে ওঠা অভিযোগটিকে কেন্দ্র করে ফের বিতর্ক দানা বেঁধেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৩৫
Share: Save:

ডাক্তার সেজে দালালের রোগী দেখার অভিযোগকে ঘিরে বিতর্কে জড়িয়েছিল বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এ বার মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের সুপারিশে রোগীকে ওষুধ লেখার অভিযোগ উঠল এই হাসপাতালেরই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। সোমবার হাসপাতালের আউটডোরে ইউরোলজি বিভাগে ওঠা অভিযোগটিকে কেন্দ্র করে ফের বিতর্ক দানা বেঁধেছে।

হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুন্ডু নিজেও বলছেনন, “দুপুর একটার আগে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভরা হাসপাতালের আউটডোরে ঢুকতে পারেন না। এটা নিয়ম বহির্ভূত। ঘটনার কথা শোনার পরেই আমি ইউরোলজি বিভাগের প্রধানকে ফোন করে সতর্ক করেছি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

“আমি নিয়মিত এই বিভাগে চিকিৎসা করাতে আসি। ওই মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের রোজ দেখি।
কোন ব্র্যান্ডের ওষুধ লেখা উচিত, ডাক্তারদের ওঁরা বলে দেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রেসক্রিশনে
যে ওষুধ লেখা হয়, তা হাসপাতালের ন্যায্যমূল্যের ওষুধ দোকানে মেলে না।” সাধনচন্দ্র ঘোষ, বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা

এ দিন বাঁকুড়া মেডিক্যালের আউটডোরে ইউরোলজি বিভাগে রোগী দেখার সময় চিকিৎসকের সঙ্গে একাধিক মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ তোলেন রোগীরা। এমনকী কোন রোগীকে কী ওষুধ দেওয়া হবে, সেটাও চিকিৎসককে বলে দেওয়া হচ্ছিল বলে দাবি ওই রোগীদের। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের নজরে আসতেই হইচই পড়ে যায়। ক্যামেরা দেখেই বিভাগ থেকে বেরিয়ে দৌড় মারেন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভেরা। আউটডোরের ভিতর তাঁদের এই ভাবে ছুটতে দেখে হচকচিয়ে যান উপস্থিত রোগীরা। পরে ইউরোলজি বিভাগের নিয়মিত রোগীদের অনেকেই অভিযোগ করেন, এর আগেও ওই ব্যক্তিদের তাঁরা বিভাগের মধ্যে ডাক্তারের সঙ্গে থাকতে দেখেছেন।

বাঁকুড়ার ভুতশহর এলাকার বাসিন্দা সাধনচন্দ্র ঘোষ বলেন, “আমি নিয়মিত এই বিভাগে চিকিৎসা করাতে আসি। ওই মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের অনেককে প্রতিদিনই দেখি। কোন ব্র্যান্ডের ওষুধ লেখা উচিত, ডাক্তারদের ওঁরা বলে দেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রেসক্রিশনে যে ওষুধ লেখা হয়, তা হাসপাতালের ন্যায্যমূল্যের ওষুধ দোকানে মেলে না।’’ তাঁর সংযোজন, “এত দিন ওই ব্যক্তিদের হাসপাতালের লোক হিসেবেই জানতাম। চিকিৎসার নামে এমন একটা চক্র যে আউটডোরে চলছে, তা বুঝতে পারিনি।’’

ওন্দার বাসিন্দা করুণাময় পাত্রও এ দিন ইউরোলজি বিভাগে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। তাঁর কথায়, “যাঁরা দৌড়ে পালিয়ে গেলেন, তাঁরাই তো ডাক্তারকে কী ওষুধ লিখতে হবে বলে দিচ্ছিলেন। ওঁদের আচরণ দেখে রোগীরা তো তাঁদের ডাক্তার বলেই ভেবেছিল!”

কেন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের এ ভাবে নিয়ম ভেঙে বিভাগে ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল?

বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি ওই বিভাগের চিকিৎসক। এক হাউস্টাফের অবশ্য দাবি, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভেরা শুধু চিকিৎসা করাতে আসা রোগীদের লাইন ঠিক করে দিচ্ছিলেন। ডাক্তারকে ওষুধ লেখার বিষয়ে কোনও পরামর্শ দেননি। কিন্তু নিয়ম ভেঙে দুপুর ১টার আগে হাসপাতালের আউটডোরে তাঁরা আসবেন কেন? মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টিটিভদের সংগঠন ডব্লিউবিএমএসআরইউ-এর জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য কমিটির সদস্য কৌশিক ঘোষ বলেন, “মেডিক্যাল কলেজে দুপুর ১টার আগে ঢোকা আমাদের নিষেধ। এ দিন কারা ইউরোলজি বিভাগে গিয়েছিলেন, জানি না। তাঁরা আদৌ আমাদের সংগঠনের কিনা, তা-ও জানা যায়নি।’’ তবে এই ঘটনা যাতে ফের না ঘটে, তার জন্য আউটডোরে নজরদারি চালানো হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সুপার।

এর আগেও একাধিকবার বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছে বাঁকুড়া মেডিক্যালের আউটডোর। চিকিৎসা করাতে আসা রোগীদের বাইরে নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে আউটডোরে দালালরা ভিড় জমান বলে বহুবার অভিযোগ উঠেছে। বছর খানেক আগেই আউটডোরের অর্থোপেডিক বিভাগে ডাক্তার সেজে এক দালাল মহিলার চিকিৎসা করে তাঁকে নার্সিংহোমে পায়ে অস্ত্রোপচার করার নিদান দেন বলে অভিযোগ ওঠে।

সেই ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযুক্ত ওই দালালের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করার পাশাপাশি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে অর্থোপেডিক বিভাগের এক হাউস স্টাফকে বরখাস্ত করা হয় মেডিক্যাল কলেজ থেকে। বাঁকুড়া মেডিক্যালের ব্লাডব্যাঙ্কেও দালালচক্রের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে অভিযোগ উঠেছে একাধিক বার। ডাক্তারদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানিগুলির আঁতাঁত নিয়েও বাঁকুড়া মেডিক্যালের রোগীদের বড় অংশের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ দিনের ঘটনা তারই প্রমাণ বলে দাবি করছেন রোগীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE