রুজির টানে রানিগঞ্জ-জামুড়িয়ার পাথর খাদানে গিয়ে বয়ে এনেছিলেন সিলিকোসিস। ভাঙা স্বাস্থ্য নিয়ে মিনাখাঁর গ্রামে ফিরে গত দু’বছরে মারা গিয়েছেন অন্তত ১৪ জন। ক্রমান্বয়ে সিলিকোসিসে মৃত্যুর সেই ঘটনা সামনে এসে পড়ায় এ বার উত্তর ২৪ পরগনার গোয়ালদা এবং দেবীতলা গ্রামে ফুসফুসে সংক্রমণে আক্রান্ত গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিল বর্ধমান জেলা প্রশাসন।
মাত্র দিন কয়েক আগেই সুন্দরবন লাগোয়া মিনাখাঁ ব্লকের ওই দুই গ্রামে গিয়েছিল চন্দননগরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। গ্রাম-ঘুরে ওই সংগঠনের পক্ষে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে দরবার করেছিলেন পরিবেশবিদ তথা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন-অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। আর তার জেরে নড়েচড়ে বসেছে বর্ধমানের জেলা কর্তারা। এখন খোঁজ পড়েছে, জেলায় বেআইনি পাথর খাদানের। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জি) সম্প্রতি আসানসোলের মহকুমাশাসককে দ্রুত খাদানগুলি ঘুরে দেখে ও সিলিকোসিস আক্রান্ত ওই সব শ্রমিকের শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখেয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিত ভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে, মিনাখাঁর ওই দুই গ্রামের বাসিন্দারা জানান, এ নিয়ে হেলদোল নেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কর্তাদের। মৃতদের আর্থিক অনুদান তো দূর অস্ত্, সিলিকোসিস আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যাপারেও এগিয়ে আসেনি জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক অবশ্য আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘‘সরকার অবশ্যই ওই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াবে।’’ শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাথর খাদান কেন্দ্রীয় খনিমন্ত্রকের অধীন। শ্রমিকদের অভাব-অভিযোগ দেখভালের দায়ও ওই মন্ত্রকের। তবে এ ক্ষেত্রেও কি দিল্লির দিকেই চেয়ে থাকবে গোয়ালদার মানুষ? মলয়বাবু জানান, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে। সিলিকোসিসে আক্রান্ত শ্রমিকদের সাহয্যের ব্যাপারটিও ভেবে দেখা হচ্ছে বলে ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
আয়লার পরবর্তী বছরগুলিতে বিধ্বস্ত সুন্দরবন থেকে রোজগারের টানে শহরের পথে পা বাড়িয়েছিলেন বহু গ্রামবাসী। সেই তালিকায় ছিল মিনাখাঁও। গ্রামবাসীরা জানান, ওই গ্রামগুলি থেকে কয়েকশো বাসিন্দা পাড়ি দেন আসানসোল-রানিগঞ্জের বিভিন্ন পাথর খাদানে। বছরখানেকের মধ্যেই তাঁরা টের পেয়েছিলেন শরীরে তাঁদের বাসা বেঁধেছে মারণ রোগ। ২০১২ সালে শুরু হয় মৃত্যু-মিছিল। তালিকায় প্রথম নাম ছিল হোসেন মোল্লার (৩০)। তবে তাঁর রোগটা যে কী, মিনাখাঁর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তা ধরতেই পারেনি বলে হোসেনের পরিবারের দাবি। চিকিৎসা শুরু হয় কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যালে। ধরা পড়েছিল সিলিকো-টিউবারকোলিসিস।
গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম পাইক বলেন, ‘‘আট কিলোমিটার দূরে মিনাখাঁ স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু সেখানে রোগীদের নিয়ে গেলে আধ ঘণ্টা অক্সিজেন দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হত কলকাতার হাসপাতালে।’’ কলকাতার অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল প্রথমে টিবি বলেই দায় সেরেছিল। শহিদুল বলেন, ‘‘তাই সরকারি হাসপাতালের ভরসায় না থেকে গ্রামবাসীরা চাঁদা তুলে রোগীদের ভেলোরে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।’’ এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘তাতে রোগ-মুক্তি হয়নি, মৃত্যুকে ক’দিন ঠেকানো গিয়েছিল মাত্র।’’ গত দু’বছরে মারা গিয়েছেন অন্তত ১৪ জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy