Advertisement
০১ মে ২০২৪

শিশুর হাতে মোবাইল ডেকে আনছে নানা বিপদ

প্রযুক্তির পীঠস্থান পশ্চিমি দুনিয়াও ইদানীং বুঝতে পারছে, ছোটদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিলে কী অবস্থা হতে পারে। কিন্তু সেই সচেতনতা বনগাঁ-হাবড়ার গ্রামে আর কতটুকু!

মোবাইল-মগ্ন: শিশুর হাতে মোবাইল। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

মোবাইল-মগ্ন: শিশুর হাতে মোবাইল। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র 
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:০০
Share: Save:

আড়াই বছরের বাচ্চাকে খাওয়াতে বসতে মায়ের কেটে যায় ঘণ্টা তিনেক সময়। কিছুই মুখে তুলতে চায় না সে। একমাত্র উপায়, মোবাইল ফোনে কার্টুনের ভিডিয়ো চালিয়ে তার হাতে তুলে দেওয়া। তা হলে কপকপ খেয়ে নেয় ছেলে। এ ভাবে কিছু দিন চলার পরে মায়ের মোবাইল হঠাৎ খারাপ। দোকানে বলেছে, তিন দিন লাগবে সারাতে। ব্যস, মাথায় হাত মায়ের। এই তিন দিন ছেলেটা কিছু মুখে তুললে হয়!

তিন দিন পরে যা হোক, মোবাইল ফিরল। সে ক’টি দিন খাওয়া নিয়ে অতটুকু ছেলের সঙ্গে যুদ্ধ চলল মায়ের। মোবাইল ফিরলে মায়ের স্বস্তিও ফিরল।

কিন্তু কয়েক মাসের মাথায় অন্য সমস্যা। বনগাঁ শহরের শিশুটির চোখ দিয়ে খামোখা জল পড়তে শুরু করে। চিকিৎসক ওষুধপত্র দেওয়ার পরে বলেছেন, সন্তানের হাতে যেন মোবাইল কোনও ভাবেই দেওয়া না হয়। ছেলের বাবার কথায়, ‘‘কান্নাকাটি করলেও এখন ওর হাতে মোবাইল দিই না। খাওয়ানোর সময়ে ওর মাকে বলেছি, বই পড়ে শোনাবে।’’

ঘটনাটা বিশেষ ব্যক্তিক্রমী নয়। বনগাঁ ও হাবড়া শহরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বহু পরিবারের শিশুই মোবাইলে আসক্ত।

সম্প্রতি মাইক্রোসফট কর্তা বিল গেটস অভিভাবকদের অনুরোধ করেছেন, কোনও অবস্থাতেই তাঁরা যেন চোদ্দো বছরের সন্তানের হাতে মোবাইল তুলে না দেন। তাঁর নিজেরও ২০, ১৭, ১৪ বছরের তিন সন্তান। তাদের কেউই হাইস্কুলে ওঠার আগে মোবাইল হাতে পায়নি। গেটস জানিয়েছেন, বাবা-মায়ের দায়িত্ব পালন খুব সহজ কাজ নয়। অভিভাবকেরাই ঠিক করবেন, একজন শিশুর বেড়ে ওঠা কেমন হবে। তাই শিশুর হাতে কখন মোবাইল তুলে দেবেন, কত দিন পর্যন্ত দেবেন না— সেই সিদ্ধান্ত তাঁদেরই নিতে হবে।

প্রযুক্তির পীঠস্থান পশ্চিমি দুনিয়াও ইদানীং বুঝতে পারছে, ছোটদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিলে কী অবস্থা হতে পারে। কিন্তু সেই সচেতনতা বনগাঁ-হাবড়ার গ্রামে আর কতটুকু!

৫-১০ বছরের বাচ্চারাও মোবাইলে দিব্যি সড়গড় হয়ে উঠছে। হাবড়ায় একটি চায়ের দোকানে বসে এক অভিভাবক গর্ব করে বলছিলেন, ‘‘আমি নিজে স্মার্ট ফোন ঠিকমতো চালাতে পারি না। কিন্তু ছেলে সব পারে।’’ জানা গেল, ছেলের বয়স সবে দশ ছুঁয়েছে।

কিছু দিন আগেও সাইবার কাফেতে দেখা যেত, অভিভাবকেরা শিশু সন্তানদের গেম খেলতে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন আর কাফেগুলিতে ভিড় হচ্ছে না। শিশুরা বাড়িতে বাবামায়ের মোবাইলেই গেম খেলছে।

অভিভাবকরাও এ ক্ষেত্রে নিজের মতো যুক্তি সাজাচ্ছেন। কেউ বলেন, বাচ্চাদের হাতে যে মোবাইল দেওয়া উচিত নয়, এটা জানতেন না। কারও কারও দাবি, তাঁরা সন্তানদের হাতে মোবাইল বেশিক্ষণের জন্য দেন না। কেউ বলেন, না দিয়ে উপায় নেই। কান্নাকাটি শুরু করে, খেতে চায় না।

অভিভাবকেরা আত্মপক্ষ সমর্থনে যা-ই বলুন না কেন, এ কথা ঠিক, বাচ্চাদের হাতে মোবাইল ঘুরছেই। ফলে ক্ষতিও হচ্ছে তাদের।

কী রকম ক্ষতি? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শিশুরা মোবাইলে আসক্ত হলে, তাদের চোখের রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মানসিক ব্যধিও হতে পারে। লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে ছেলেমেয়েরা।

বিকল্প উপায় হিসাবে বই পড়ার অভ্যাস বাড়ানোর কথা বলছেন বিশেষজ্ঞেরা। বলছেন, গান শোনা, ছবি আঁকার কথা। কোনও একটা দিকে আগ্রহ তৈরিতে ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দেওয়ার কথা। কিন্তু সে সবে বাবামায়ের ধৈর্য লাগে, সময় লাগে। হাতের কাছে পড়ে আছে সব রোগের এক ওষুধ মোবাইল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE