সর্ষের তেলের ছক-ভাঙা বিরিয়ানি, কিংবা মোগলাই ভেটকি-পদ ‘দম কি মছলি’ অথবা নারকেল, নলেন গুড়ের ক্ষীর— রেস্তোরাঁর বাঁধাধরা মেনুতে যা সচরাচর মেলে না।
এ সবই মা মামলিকাত বদরের কাছে শিখেছিলেন মনজিলাত ফতিমা। মায়ের আদরের সঙ্গে তাতে মিশে ইতিহাসেরও ছোঁয়াচ। কলকাতার ‘লখনউ’ মেটিয়াবুরুজে নির্বাসিত নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের পরিবারের মেয়ে বেগম মনজি। অভিজাত অন্দরমহলের এ স্বাদ-দলিল ইদানীং রসিকজনের জন্য মেলে ধরছেন তিনি।
মনজিলাত কখনও নিজের বাড়ি থেকে কেটারিং করছেন, কখনও বা নির্দিষ্ট জায়গায় দুপুর বা রাতে বসছে ভোজ-আসর। সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর পেয়ে দক্ষিণা দিয়ে চাখতে যাচ্ছেন উৎসাহীরা। এই সপ্তাহান্তেও কসবায় বসছে নৈশভোজের আসর। লেকটাউনের অঙ্গনা পালও মাসে-মাসে সুবিধেমাফিক কোনও ফ্ল্যাটবাড়িতে সাধ্যমত নির্দিষ্ট সংখ্যক অতিথির জন্য ভোজ-ইভেন্ট করছেন। পর্কপ্রেমী অঙ্গনার টেক্কা দেশ-বিদেশের বিবিধ অচেনা পর্কপদ।
এ শহরে নিউক্লিয়ার পরিবারের প্রয়োজনে ‘হোম ডেলিভারি’ সংস্কৃতি চালু হয়েছে অনেক দিনই। ঘরোয়া রাঁধুনি বা ‘হোমশেফ’দের হাত ধরে এ বার উঠে আসছে নানা ঘরানার আঞ্চলিক ভোজ-সংস্কৃতির পরিচয়। আগে কলকাতার অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মহল্লা বো ব্যারাকেও ‘আন্টি’ বা ‘আঙ্কল’রা অর্ডারমাফিক রোস্ট, পাই করতেন। এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর চাউর করে বসছে, ডিনার বা লাঞ্চের আসর। মুম্বই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু— সর্বত্র চলছে এমন ‘কড়ি ফেল, চেখে দেখ’-র আসর।
মুম্বইবাসী অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় বা শুভশ্রী বসুরা যেমন নিজের বাড়িতেই সপ্তাহান্তে ১৫-২০ জন অতিথির জন্য বিশেষ ভোজের আয়োজন করেন। অনন্যার সর্ষে মাছ, কষা মাংসের ভক্তের তালিকায় শাকাহারী গুজরাতি বা তামিল ব্রাহ্মণরাও রয়েছেন। ঘণ্ট-ছেঁচকি, ঝোল-ঝালের ফারাক কাটাছেঁড়া তাঁদের কাছে এক ধরনের সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতাও। আর পর্কবিশারদ শুভশ্রী ঢিমে আঁচে রাঁধা কিছু বিশেষ পদে তুখড়। কয়েক মাস আগে গল্ফগ্রিনের এক আসরে চিংড়ি-ইলিশ থেকে কালো জিরে— নানা কিসিমের বাংলাদেশি ভর্তার উপচারে আসর জমিয়েছিলেন গোলপার্কের মেয়ে, ঢাকার বধূ নয়না আফরোজও।
হয়তো মুম্বইয়ে বসেই কোনও গিন্নি নাগা বা অসমিয়া রান্নার জন্য তেজপুরে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়মিত বিশ্বের সব থেকে ঝাল লঙ্কা ভূত জলোকিয়া আমদানি করছেন। মুম্বইয়ের কোলাবায় বোহরি মুসলিম একটি পরিবারে মায়ের হাতের রান্নার মার্কেটিং করতে ছেলে নামী কর্পোরটের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। গোটা দেশে ঘরোয়া রাঁধুনীদের প্রতিভাকে মেলে ধরার লক্ষ্যে সক্রিয় একটি সোশ্যাল মিডিয়া ফোরামের পুরোধা হেমন্ত মান্ডালিয়া, শেরি মেটা মলহোত্ররা মনে করেন, ‘‘এটাও মেয়েদের এক ধরনের ক্ষমতায়ন।’’
একদা খাস রেঙ্গুন থেকে রকমারি শুঁটকি-মশলাপাতি আনিয়ে বেনিয়াপুকুরের বাড়ির উঠোনে ব্রহ্মদেশের রান্নার ‘ডিনার-ইভেন্ট’ আয়োজন করতেন ছন্দা দত্ত। তিনি এখন গোলপার্কে নিজের বর্মী রান্নার রেস্তোরাঁ খুলেছেন। হোমশেফদের এই প্রতিভা কি তবে চলতি রেস্তোরাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে?
নামী বাঙালি রেস্তোরাঁর অন্যতম কর্তা-কাম-শেফ সুশান্ত সেনগুপ্ত কিন্তু তা মনে করেন না। তাঁর কথায়, ‘‘আমি নিজেও কিছু হোমশেফের ভক্ত। ওঁরা আসলে আমাদের হাত শক্তই করছেন। রেস্তোরাঁতেও তাঁদের সাহায্য নেওয়া যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy