প্রতীকী চিত্র।
হেইলি বুস্টসকে সন্দেহ করার মতো কিছুই পাননি অ্যাডাম হিলারে। প্রথম ডেট, অনলাইনে পাওয়া সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড, রোম্যান্টিক ডিনার— উপস্থিত ছিল সবই। ডিনারের শেষে নিজের গাড়িতে করেই হেইলিকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন অ্যাডাম। বাড়ি ফিরেই পেলেন হেইলির রোম্যান্টিক মেসেজ। ফের দেখা করতে চায় সে। এবং এ বার অ্যাডামের বাড়িতেই। আনন্দের বাঁধ যেন ভেঙেই গেল অ্যাডামের। ৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে ফ্লোরিডার ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন তিনি। অষ্টাদশী হেইলিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন নিঃসঙ্গ অ্যাডাম।
ঘোরটা ভাঙতে সময় লাগল মাত্র ২৪ ঘণ্টা।
হেইলির জন্য সে দিন একাই ফ্ল্যাটে অপেক্ষা করছিলেন অ্যাডাম। নির্ধারিত সময়ে ডোরবেল বাজার সঙ্গে সঙ্গেই খুলে দেন দরজা। কিন্তু হেইলির সঙ্গে এরা কারা? দরজা খুলতেই তিন অচেনা যুবক চড়াও হয় তাঁর উপর। চলে মারধর। এর পরেই এক জন মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে অ্যাডামকে। খুনের পর তাঁর ফ্ল্যাট থেকে মোবাইল, এক্সবক্স, ল্যাপটপ-সহ যাবতীয় মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে পালায় হেইলি ও তার দলবল। পরে অবশ্য পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় দলটি।
হেইলির এই ঘটনা কিন্তু একেবারেই নতুন নয়। বিশ্বজুড়ে অনলাইন ডেটিং সাইট থেকে প্রতারিত হওয়ার এমন ঘটনা ভুরি ভুরি। “এ ক্ষেত্রে হেইলি নিজের সঠিক নামটাও ব্যবহার করেনি।” জানালেন ফ্লোরিডার পুলিশ প্রধান। হেইলির বিরুদ্ধে এর আগে এই ধরনের আরও অভিযোগ রয়েছে। তবে এর আগে কোনও বারই ধরা পড়েনি সে।
ঠিক কী ভাবে অপারেশন চলায় এই ধরনের গ্যাং? অনলাইনে বিভিন্ন ভুয়ো নামে প্রোফাইল খুলে শিকার খোঁজে তারা। এ ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছিন্ন বা নিঃসঙ্গ মানুষরাই হন প্রাথমিক টার্গেট। এর পর রীতিমতো হোমওয়ার্ক করে দেখা হয় তার বিষয় সম্পত্তির সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য। এ ক্ষেত্রে হেইলির মতো মেয়েদের টোপ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। অ্যাডামের ক্ষেত্রে যেমন হেইলির ‘পারিশ্রমিক’ ছিল মাত্র ২০০ ডলার।
হেইলি বুস্টস। ছবি: ইন্টারনেট।
ন্যাশনাল ফ্রড ইন্টেলিজেন্স বুরোর রেকর্ড অনুযায়ী শুধুমাত্র ব্রিটেনেই অনলাইনে পাতা টোপে প্রতারিত হয়ে এক বছরে সাড়ে তিন কোটি পাউন্ড খুইয়েছেন মানুষ। রেকর্ডে আরও দেখা যাচ্ছে, ব্রিটেনে বছরে প্রায় ৩৩ শতাংশ হারে বাড়ছে এই ধরনের প্রতারণার ঘটনা। মার্কিন মুলুকে এই সংখ্যাটা প্রায় ৩০ শতাংশ বলে জানিয়েছে এফবিআই। অস্ট্রেলিয়ার একটি সংস্থা জানাচ্ছে, শুধুমাত্র ২০১৫ সালে ২৬২০টি এই ধরনের মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। নথি অনুয়ায়ী বিশ্বজুড়ে প্রতারিতদের প্রায় ৪৪ শতাংশ মহিলা এবং ৩৯ শতাংশ পুরুষ। বাকি ১৭ শতাংশ নিজেদের পরিচয় জানাতে চাননি।
তবে এই ধরনের ক্ষেত্রে যে বেশির ভাগ সময়ে অভিযোগ দায়েরই করা হয় না, তা-ও মেনে নিয়েছেন তদন্তকারীরা। সামাজিক লজ্জাই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কারণ বলে দাবি করেছেন তিনি।
এই ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করেছে এফবিআই। অনলাইনে ডেটিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্য দিতে নিষেধ করার পাশাপাশি আরও একাধিক বিষয় সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে ইউজারদের। ধৃতদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে কঠোর ব্যবস্থা। কিন্তু এত কিছু করেও অ্যাডামদের মতো ঘটনা আটকানো তো যাচ্ছেই না, উল্টে বাড়ছে।
আরও পড়ুন:
প্রথম ডেটিং? মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলো
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy