Advertisement
E-Paper

বই-খাবারের সঙ্গতে জমজমাট রিডার্স কাফে

তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সৌমাভ। অফিসের শেষে ভাল লাগে না সিনেমা, ডাইন-আউটের ঝক্কি। অথচ বন্ধুদের নিয়ে নিরিবিলিতে একটু বসতে ইচ্ছে করে পছন্দের বই, গান, আড্ডা, কফি নিয়ে।

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৭ ০২:০৬
উপভোগ: সল্টলেকের একটি রিডার্স কাফে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

উপভোগ: সল্টলেকের একটি রিডার্স কাফে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

কলেজপড়ুয়া যুবক শান্তনু। বই পড়তে পছন্দ করেন। অথচ হস্টেলের ভিড়ে নিভৃতি মেলে না। ভাল লাগে না লাইব্রেরির গুরুগম্ভীর পরিবেশও।

মধ্যবয়সী গৃহবধূ মন্দিরা। অলস দুপুরে বই নিয়ে বসে বিকেল গড়িয়ে গেলে গলা শুকিয়ে ওঠে চায়ের তেষ্টায়। অথচ বই ফেলে উঠে নিজে চা করে খেতে মোটেই ইচ্ছে করে না।

তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সৌমাভ। অফিসের শেষে ভাল লাগে না সিনেমা, ডাইন-আউটের ঝক্কি। অথচ বন্ধুদের নিয়ে নিরিবিলিতে একটু বসতে ইচ্ছে করে পছন্দের বই, গান, আড্ডা, কফি নিয়ে।

সমস্যাগুলো আলাদা, কিন্তু সমাধান একই। আর তা খুঁজে নিয়েছে এ শহর নিজেই। ‘রিডার্স কাফে’। মহানগরের নতুন ট্রেন্ড। যেখানে চা-কফি-খাবারের সঙ্গে মিলবে বই পড়া আর আড্ডার অঢেল সুযোগ। আর সবটাই বেশ পকেট়-বন্ধু।

যাদবপুর এলাকায় মাস ছয়েক ধরে এমনই একটি কাফে চালাচ্ছেন জুল মুখোপাধ্যায়। চিরাচরিত রোজগারের পথে না হেঁটে এক রকম ঝুঁকি নিয়েই খুলেছিলেন তাঁর রিডার্স কাফে। জুল জানালেন, শহরে দু’দণ্ড নিজের মতো সময় কাটানোর জায়গার খুব অভাব। বড় কাফে থাকলেও, তাতে কিছু ক্ষণ বসতে অনেক টাকা লাগে। নেই খাওয়া ছাড়া অন্য কোনও বিনোদনের সুযোগও। ‘‘মানুষ বসবেন, কথা বলবেন, বই পড়বেন, খাবার খাবেন। এখানে এসে যে যেমন খুশি, যত ক্ষণ খুশি বই পড়তে পারেন, ভাল লাগলে কিনতেও পারেন। চা, কফি, স্ন্যাক্স জোগান দেওয়া হয় চাহিদা অনুযায়ী। ঘরোয়া পরিবেশে এমন একটা আড্ডা আর বই পড়ার জায়গাই তৈরি করতে চেয়েছিলাম আমি।’’— বললেন জুল।

রবিবার থেকে সল্টলেকের সিজে ব্লকে এমনই একটি রিডার্স কাফে খুলেছেন রাজা পোদ্দার। আদতে বই প্রকাশক রাজার মুখ্য চিন্তা, মানুষকে বইমুখী করা এবং সেই বই পড়তে গিয়ে অন্য কোনও রকম ভাবে সময় নষ্ট না-করতে দেওয়া। ‘‘ওঁরা এসে শুধু পড়বেন, পড়াটাই উপভোগ করবেন। চা-কফির চিন্তা আমাদের।’’— বললেন রাজা। জানালেন, দিনকে দিন ব্যস্ততা বাড়ছে জীবনযাত্রায়। বই পড়ার সময় কোথায়, সময় কোথায় নিজের মুখোমুখি দু’দণ্ড বসার। তাই বই-গান-আড্ডা-কফির নির্ভেজাল পীঠস্থান হিসেবে কাফের ভাবনা তাঁর।

জুলের কাফের মতোই রাজার কাছেও, বসে বই পড়ার পাশাপাশি চাইলে নতুন বই কেনাও যাবে। সঙ্গে মিলবে টিশার্ট, কফিমাগ, পোস্টার, বুটিক-দ্রব্য। তবে এ সব কিছুর বাইরে বইয়ের সঙ্গে নিজের মতো করে সময় কাটানোর সুযোগটাকেই শহরবাসীর সামনে তুলে ধরতে চান রাজা। ‘‘মাঝে মাঝে নানা রকম সৃজনশীল আলোচনারও আয়োজন করা হবে কাফের তরফে। সে সবেরই মুখ্য বিষয় হবে বই। আর তার সঙ্গে থাকবে মুখরোচক খাবার, চা, কফির জোগান।’’— বললেন তিনি।

পার্ক স্ট্রিটে এমন একটি কাফে বহু দিন ধরেই শহরবাসীর অবসর-যাপনের ঠিকানা হিসেবে রয়েছে। অভিনেত্রী স্বরলিপি চট্টোপাধ্যায়ও এ রকম একটা কাফে খুলেছেন যোধপুর পার্ক এলাকায়। বছর পাঁচেকের পুরনো এই কাফেতে খাবারের সম্ভারের পাশাপাশি এখানে রয়েছে নানা রকম বই, ইন্ডোর গেমস ইত্যাদি। স্বরলিপির দাবি, বছর পাঁচেক আগে তিনি এবং তাঁর স্বামী সৌম্য মুখোপাধ্যায় শহরে প্রথম এমন কাফে খোলেন। স্বরলিপি বললেন, ‘‘এই প্রজন্ম বিনোদন বলতে বোঝে উদ্দামতা। তাদের মধ্যে বই পড়া, খেলা, আড্ডা— এ সব সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার জন্যই এই কাফে খোলার সিদ্ধান্ত নিই।’’

সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, টের পাওয়া যায় বিকেলের পর এই কাফের ভিড় দেখলেই। পিছিয়ে নেই নতুনরাও। কফির কাপ হাতে, নিত্য নতুন বই পড়তে পড়তে, অবসরের বিনোদন খুঁজে নিচ্ছেন শহরবাসী।

Readers Cafe Kolkata Oxford Bookstore রিডার্স কাফে
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy