Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

দাদু-দিদারা কত আপন, বলল পেন্টিং

আজকের ব্যস্ত জীবনে অণু পরিবারে দাদু-দিদাদের সঙ্গ পাওয়া আর হয়ে ওঠে না অনেক নাতি-নাতনিরই। ‘নো ইয়োর নেবার’-এর মতো দাদু-দিদাকে চেনার, তাঁদের সঙ্গে সময় কাটানোরও প্রয়োজন রয়েছে তাদের। সেই কথা মাথায় রেখে একটি আঁকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন রামমোহন মিশন হাই স্কুল কর্তৃপক্ষ।

টান: দাদুর হাত ধরেই প্রতিযোগিতায়। নিজস্ব চিত্র

টান: দাদুর হাত ধরেই প্রতিযোগিতায়। নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৫৫
Share: Save:

অঙ্ক ভুল করলে তা কী করে ঠিক করতে হবে, ছেলেবেলাতেই তার গুপ্তমন্ত্র ঋভুকে শিখিয়েছিলেন তার দাদু। শিখিয়েছিলেন, চোখ বন্ধ করে দু’মিনিট অঙ্কটাকে নিয়ে ভাবলেই নাকি কোথায় ভুল হচ্ছে তা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে। মাঘ মাসের মিঠে রোদ গায়ে মেখে রামমোহন মিশন হাই স্কুলের মাঠে বসে সেই দাদুর ছবিই আঁকছিল নবম শ্রেণির ঋভু বসু। বলে, ‘‘দাদু মানেই কত ধরনের গল্প। দাদুর কাছেই শুনেছি সত্তর দশকের কলকাতার গল্প।’’ তার পাশে বসে দাদুর হাত ধরে স্কুলে আসার ছবি আঁকছিল একই ক্লাসের তথাগত ভট্টাচার্য। তার কথায়, ‘‘আমার দাদু আর নেই। তাঁর হাত ধরেই প্রথম স্কুলে এসেছিলাম। সেই ছবিই আঁকছি। দাদুকে খুব মিস করি।’’ একাদশ শ্রেণির তিথি বসুর রং-তুলিতে ফুটে উঠেছে বৃদ্ধাবাস থেকে দাদু-দিদাকে হাত ধরে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য। পাশে বসে তখন ঋভু-তথাগত-তিথিদের ছবি আঁকা দেখছেন নার্সারি শ্রেণির পড়ুয়া গীতশ্রীর দাদু-দিদা রবীন্দ্রনাথ ও শিখা দত্ত।

আজকের ব্যস্ত জীবনে অণু পরিবারে দাদু-দিদাদের সঙ্গ পাওয়া আর হয়ে ওঠে না অনেক নাতি-নাতনিরই। ‘নো ইয়োর নেবার’-এর মতো দাদু-দিদাকে চেনার, তাঁদের সঙ্গে সময় কাটানোরও প্রয়োজন রয়েছে তাদের। সেই কথা মাথায় রেখে একটি আঁকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন রামমোহন মিশন হাই স্কুল কর্তৃপক্ষ। যে প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল ‘তোমার চোখে দাদু-দিদা’।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজয় বিশ্বাসের মতে, আগেকার দিনে গল্পের প্রতি ছোটদের আকর্ষণ বাড়াতে জুড়ি ছিল না দাদু-ঠাকুরমার। কিন্তু এখন গল্প শোনাবার লোক নেই কেউ। ফলে আজকালকার ছোটরা গল্পের বই পড়তেই চায় না। কারণ গল্প শোনার কানটাই তাদের তৈরি হয়নি। সুজয়বাবু বলছেন, ‘‘স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক— সবসময় তো বাবা-মায়েরাই এসে থাকেন, দাদু-দিদারা নয়। তাই এ বার শুধু তাঁদের জন্যেই আলাদা করে এই আয়োজন।’’ এই উদ্যোগের প্রশংসা করে মডার্ন হাই স্কুলের অধিকর্তা দেবী কর জানাচ্ছেন, নাতি-নাতনির জীবনে দাদু-ঠাকুরমার গুরুত্বের কথা মাথায় রেখেই প্রতি বছর স্কুলে ‘গ্র্যান্ড পেরেস্ট ডে’ পালন করা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘দাদু-দিদা তাঁদের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার নাতি-নাতনিকে উপুড় করে দেন। তাতেই সমৃদ্ধ হয় ছোটরা।’’ গোখেল মেমোরিয়ালের প্রধান শিক্ষিকা

ইন্দ্রাণী মিত্র বলেন, ‘‘শুধু গল্প কেন, আমরা তো দিদিমার কাছে বসে দেখতাম কী ভাবে রুটি বেলছেন। রুটি বেলা থেকে শুরু করে বাড়ির কত কাজ শিখেছি দিদার কাছে!’’

বাড়িতে দাদু-দিদার অনুপস্থিতির কারণে অনেক সময়ে শিশুরা একাকিত্বে ভোগে বলে মনে করছেন এ শহরের কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা। মহাদেবী বিড়লা গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অঞ্জনা সাহা বলেন, ‘‘আজকের দিনে বাচ্চারা মোবাইল ফোন নির্ভর হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে কথা বলার লোকের অভাব। মোবাইল ফোনে বাচ্চারা কার্টুন দেখে। এর থেকে অনেক ভাল ছিল যখন দাদু-দিদারা নাতি-নাতনিকে গল্প শোনাতেন। এখন কার থেকে গল্প শুনবে বাচ্চারা?’’ সাউথ পয়েন্ট স্কুলের পক্ষে কৃষ্ণ দামানিও বলেন, ‘‘দাদু-দিদারা পুরনো মূল্যবোধ শেখান। যা আজকের দিনে অপরিহার্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Grandparents Painting Relation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE