ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
পরীক্ষার আগে টেনশন স্বাভাবিক। হালকা টেনশন পরীক্ষার প্রস্তুতিকে ভাল করতে সাহায্য করে। কিন্তু টেনশন মারাত্মক আকার নিলে তা পড়ুয়ার শরীর ও মনের জন্য চিন্তার কারণ। পরীক্ষার আগে, পরীক্ষা চলাকালীন বা ফল প্রকাশের আগে-পরে অনেকেই আশঙ্কা, অবসাদ, উদ্বেগে ভুগতে থাকে। সেই উদ্বেগ সহ্য করতে না-পেরে অনেক কিশোর-কিশোরী আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়। কারণ, সময়মতো তাদের পাশে থেকে উদ্বেগ কমানোর কেউ থাকে না। তাই বিশেষ করে পরীক্ষা ও ফলের সময়ে শিশুদের প্রতি বাবা-মাকে আরও যত্নশীল হতে হবে।
অতিরিক্ত পরীক্ষাভীতি থেকে ‘অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার’ তৈরি করে। ছাত্র বা ছাত্রী একই পড়া বার-বার পড়ে। ফলে গোটা সিলেবাস শেষ না করেই তাদের পরীক্ষার হলে ঢুকতে হয়। এটা এমন একটা পর্যায়ে চলে যায়, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। শিশু অতিরিক্ত পরীক্ষাভীতিতে ভুগছে কিনা, তা কিছু লক্ষণ দেখেই বাবা-মা ধরতে পারেন। যেমন, পরীক্ষার আগে ঘন ঘন বমি করে, বুক ধড়ফড় করা, খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া, ঘুমের মাঝখানে জেগে ওঠা, দুঃস্বপ্ন দেখা, কান্নাকাটি জুড়ে দেওয়া, বার বার টয়লেটে যাওয়া। এ সব লক্ষণ দেখা দিলে বাবা-মাকে সাবধান হতে হবে। সন্তানের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করে দেখতে হবে কেন পরীক্ষা নিয়ে তার এত ভয়।
অনেক সময় বাবা-মা সন্তানের থেকে মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশা করেন। ভাল ফলের জন্য অতিরিক্ত চাপ দেন। তাঁদের বুঝতে হবে, সব শিশুর মেধা এক নয়। কিন্তু তা না-বুঝে শিশুর সামনে বাবা-মা ক্লাসে সেরা হওয়ার টার্গেট ঝুলিয়ে দিলে শিশু চাপে পড়ে যায়। অন্য কোনও শিশুর সঙ্গে শিশুর তুলনা করবেন না।
সারা বছর পড়াশোনা না-করে পরীক্ষার মাস দু’য়েক আগে কেউ পড়াশোনা শুরু করলে স্বাভাবিক ভাবে চাপ পড়বে। তখন সে মানসিক ও শারীরিক সমস্যায় ভুগতে শুরু করবে। এ সমস্যা থেকে বার হতে বাবা-মা সন্তানকে একটা রুটিন তৈরি করে দেবেন। সেই রুটিন মেনে বছরভর চললে পরীক্ষার মুখে সমস্যা হবে না। পরীক্ষার সিলেবাস শেষ করতে হবে অন্তত মাস খানেক আগে। পরীক্ষার দিন কয়েক আগে নতুন কোনও বিষয় পড়লে চলবে না। তাতে অহেতুক টেনশন তৈরি হবে।
বাবা-মাকে ইতিবাচক কথাবার্তা বলতে হবে। স্টাডি ব্রেক খুব জরুরি। বাচ্চার সঙ্গে কথা বলে জানতে হবে কোন বিষয়ে তার সমস্যা হচ্ছে, বুঝতে পারছে না বা পিছিয়ে আছে। দরকার পড়লে কিছু বিষয়ে শিক্ষক রেখে দুর্বলতা কাটাতে হবে। অঙ্ক, ব্যকরণ নিয়মিত চর্চা করতে হবে। যদি শেষ মুহূর্তে দেখা যায় শিশু কোনও একটা বিষয়ে ভাল প্রস্তুতি নিতে পারেনি তখন বাবা-মাকে বোঝাতে হবে, সেই বিষয়টিতে মোটামুটি পাশ নম্বর তুলে যে বিষয়গুলিতে সে পারদর্শী সেগুলির দিকে বেশি ফোকাস করুক। একাদশ শ্রেণিতে পাঠ্য বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সন্তানের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
খারাপ ফল হলে অহেতুক বিষাদগ্রস্ত না-হয়ে পরের পরীক্ষার ফল কী ভাবে ভাল করা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। ভাল ছাত্র বা ছাত্রী আচমকা খারাপ ফল করলে বাবা-মাকে সাবধান হতে হবে। প্রয়োজনে মনোবিদের কাছে যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy