Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ব্যবস্থা থাকবে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও

ম্যালেরিয়া রুখতে প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন। তারই অঙ্গ হিসাবে, এ বার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রেও ম্যালেরিয়া চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরির বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। রক্ত পরীক্ষার সরঞ্জাম থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ— সবই মিলছে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই। ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা গুলির উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলিতে মাসে একবার করে বৈঠকও করা হচ্ছে।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০২:১৪
Share: Save:

ম্যালেরিয়া রুখতে প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন। তারই অঙ্গ হিসাবে, এ বার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রেও ম্যালেরিয়া চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরির বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। রক্ত পরীক্ষার সরঞ্জাম থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ— সবই মিলছে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই। ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা গুলির উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলিতে মাসে একবার করে বৈঠকও করা হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসকের অভাবে দফতর ভরসা করছে স্বাস্থ্য কর্মীদের উপরেই।

এই বিষয়ে নির্দেশিকা জারি হয়েছিল স্বাস্থ্য দফতরের তরফেই। সে নির্দেশ মেনেই জেলা স্বাস্থ্য দফতর চলতি মাস থেকে কাজ শুরু করেছে। তবে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “রোগ প্রতিরোধে পরিকাঠামো তৈরির পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সেই সব এলাকার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে বলেছিল স্বাস্থ্য দফতর। আমরা সেই কাজ শুরু করে দিয়েছি।”

ম্যালেরিয়া প্রবণ জেলা গুলিতে এ ধরনের ব্যবস্থা ছিলই। এ বার নতুন করে আরও পাঁচটি জেলার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পাঁচটি জেলার মধ্যে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর ছাড়াও রয়েছে মালদা, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও মুর্শিদাবাদ।

ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। বছর কয়েক আগেও আগে কেবলমাত্র ঝাড়গ্রাম মহকুমার বেলপাহাড়িই ছিল ম্যালেরিয়া আক্রান্ত। কিন্তু এখন ঝাড়গ্রামের প্রতিটি ব্লকেই থাবা বসাচ্ছে ম্যালেরিয়া। পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন ব্লকেই দ্রুত ছড়াচ্ছে। ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে প্রতি বছ। পরিসংখ্যান বলছে গত কয়েক বছরে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে অনেকখানি। ২০১১ থেকে ২০১৩ সালে যেখানে তের সংখ্যা ছিল দু’একজন। সেখানে ২০১৪ সালে তা বেড়ে হয়েছিল ১৮। এমনকী এ বছর চার মাসে মৃত্যু হয়েছে চার জনের।

আগে আক্রান্ত হলেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটত কম। বর্তমানে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বেশি। আগে যেখানে বছরে ১-২ জনের মৃত্যু হত এখন সেখানে বেড়ে পৌঁচেছে ১৮ তে। গত বছরই ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরে ৪ মাসেই মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের!

তাই চন্দ্রকোনা, গড়বেতা, নারায়ণগড়, খড়্গপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় ১০০টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। যেখানে দ্রুত রক্ত পরীক্ষার জন্য র‌্যাপিড কিট রাখা হবে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা থানা এলাকার পরমানন্দপুরে ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল তীর্থপতি ঘোষের। সেই গ্রামে নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। কারও জ্বর হয়েছে খোঁজ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে। মশারি ব্যবহারের উপকারিতা, ম্যালেরিয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্বন্ধে বোঝানো হচ্ছে।

কিন্তু চিকিৎসা করবে কে? উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে তো চিকিৎসক থাকেন না। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীদের এ বিষয়ে বোঝাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য কর্মীরাই খোঁজ খবর নিচ্ছেন। সেই কাজ ঠিক মতো হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে প্রতি মাসে একবার করে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বৈঠকও করা হবে। চলতি মাসেও সেই বৈঠক করা হয়েছে। যেখানে ব্লক বা জেলার পদস্থ আধিকারিকেরা থাকছেন। বৈঠকে ডাকা হচ্ছে স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও।

যদি বৈঠকে দেখা যায়, প্রশিক্ষিত কর্মীদের দিয়ে কাজ হচ্ছে না, সেই এলাকায় ম্যালেরিয়া মুক্ত করা যাচ্ছে না, তখন নিয়মিত চিকিৎসক দলও পাঠানো হবে। তারই সঙ্গে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন দফতরকেও বৈঠকে ডাকা হবে। আইসিডিএস, সমাজ কল্যাণ দফতর, বন দফতর, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর তো রয়েছেই তারই সঙ্গে জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েতকেও যোগ করা হবে। ম্যালেরিয়া বিষয়ক জেলা নোডাল অফিসার তথা জেলা উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “শুধু তো পরিকাঠামো দিয়ে হবে না। প্রয়োজন সব স্তরে সচেতনতা সৃষ্টি। তাই বিভিন্ন দফতরকেও আমরা এবার যোগ করছি। যাঁরা সব স্তরের মিটিংয়ে থাকবেন। তাঁদের মাধ্যমেও সংশ্লিষ্ট জায়গায় পৌঁছে যাবে নানা তথ্য।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE