Advertisement
০৪ মে ২০২৪
শক্তিনগর হাসপাতাল

চিকিৎসাধীন রোগীর মৃত্যু দুর্ঘটনায়, প্রশ্ন নিরাপত্তায়

প্রথমে হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হয়ে গেলেন চিকিৎসাধীন এক বৃদ্ধ। পরে তিনি দুর্ঘটনায় জখম হয়ে ফিরে এলেন সেই হাসপাতালেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে আর বাঁচানো গেল না। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের নিরাপত্তা ও চিকিৎসকদের গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে তেহট্টের হরিপুরের বাসিন্দা কানাইলাল বিশ্বাসের (৭৮)।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১১
Share: Save:

প্রথমে হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হয়ে গেলেন চিকিৎসাধীন এক বৃদ্ধ। পরে তিনি দুর্ঘটনায় জখম হয়ে ফিরে এলেন সেই হাসপাতালেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে আর বাঁচানো গেল না। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের নিরাপত্তা ও চিকিৎসকদের গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে তেহট্টের হরিপুরের বাসিন্দা কানাইলাল বিশ্বাসের (৭৮)। হাসপাতালের সুপার হিমাদ্রী হালদার জানান, প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে যে, ওই রোগীকে হাসাপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সম্ভবত বাড়ির লোক আসার আগেই হাসপাতাল থেকে চলে গিয়েছিলেন। হিমাদ্রীবাবু বলেন, ‘‘আমরা গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি। যদি কোনও নিরাপত্তারক্ষীর গাফিলতি ধরা পড়ে তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

গত ৯ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার দুপুরে পায়ে ক্ষত নিয়ে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কানাইবাবু। এ দিন রাতেই তাঁর পায়ে অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু আচমকা শনিবার সকাল থেকে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। বিভিন্ন জায়গায় পরিবারের লোকজন তাঁর খোঁজ করেও কোনও সন্ধান পাননি। শেষ পর্যন্ত রাত আটটা নাগাদ স্থানীয় কিছু যুবক গুরুতর জখম অবস্থায় কানাইবাবুকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে হাসপাতালেই তিনি মারা যান। কানাইবাবুর নাতি কুণাল মল্লিক বলেন, ‘‘আমরা সেই সময় হাসপাতালেই ছিলাম। হঠাৎ দেখি কিছু যুবক আমার দাদুকে নিয়ে আসছেন। সারা গায়ে রক্ত। মাথায় গুরুতর আঘাত। ওই যুবকেরা জানান যে, স্টেশনের কাছে আমার দাদুকে গাড়িতে ধাক্কা মেরেছে।’’

ওই ঘটনার পরে পরিবারের লোকজন জেলা হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন। কানাইবাবুর ছেলে নটবর বিশ্বাস বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের পরে বাবা সুস্থ্ হয়ে উঠছিলেন। শনিবার সকালে আমার দিদি বাবাকে দেখতে আসে। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা দিদিকে ঢুকতে দেয়নি। বেলা এগারোটা নাগাদ ‘ভিজিটিং আওয়ারে’ আমার দিদি ভিতরে ঢুকে দেখে বিছানায় বাবা নেই। আশে পাশের রোগীরাও বাবার কোন খোঁজ দিতে পারেনি। বিষয়টা জানার পরে আমরা হাসপাতালে ছুটে যাই। কিন্তু বাবার কোন সন্ধান পাইনি।’’ তাঁর অভিযোগ, চিকিৎসক থেকে শুরু করে কর্তব্যরত নার্স সকলেই তাঁদের সঙ্গে দুর্বব্যহার করে তাড়িয়ে দেয়। হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তাঁরা তাঁদের সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলতে চাননি।

এই ঘটনার পরে‌ কানাইবাবুর পরিবার হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করছেন। নটবরবাবু জানান, হাসপাতেলের ভিতরে ঢোকা নিয়ে যত কড়াকড়ি। কিন্তু এক জন রোগী কী ভাবে সেই একই গেট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল? হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাঁর বাবা কী ভাবে বাইরে বেরিয়ে গেলেন তার উত্তর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই দিতে হবে। তাঁর প্রশ্ন, সেই সময় নিরাপত্তারক্ষীরাই বা কী করছিলেন?

কি ভবে ওই বৃদ্ধ নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলেন? হাসপাতালের কর্মীদেরই একাংশ জানাচ্ছেন, রাতে হাসপাতালের গেটে খাতায়-কলমে ডিউটি হয়। নিরাপত্তারক্ষীদের দেখা মেলে না। আর রাতে যে গেট ফাঁকা থাকে তার প্রমাণ এই ঘটনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মী বলছেন, ‘‘এই ঘটনার পরে নিরাপত্তারক্ষীদের গাফিলতি কোনও ভাবেই ঢাকা যাবে না। এ ভাবে চিকিৎসাধীন একজন রোগী যদি বাইরে বেরিয়ে যেতে পারেন, তাহলে দুষ্কৃতীরাও তা অনায়াসে হাসপাতালে ঢুকে যেতে পারে।’’ হাসপাতালের আর এক কর্মীর কথায়, ‘‘এত বড় একটা হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্ব যাঁদের হাতে সেই নিরাপত্তারক্ষীদের ভূমিকা যদি এমন হয় তাহলে তো সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।’’

জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘ঘটনাটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। যে সব নিরাপত্তাকর্মীর গাফিলতিতে এমনটা ঘটেছে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমরা এমনটাই দাবি জনাবো।’’ রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের প্রতিমন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বলেন, ‘‘এমন ঘটনা কোনও ভাবেই কাম্য নয়। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’

এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিক বার শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। রোগীর বাড়ির লোকজনকে মারধর, তাঁদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার। অসুস্থ্ স্ত্রীকে দেখতে আসা এক দৃষ্টিহীনকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ রয়েছে এই হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাঁদের কারও বিরুদ্ধেই কোনও ব্যবস্থা নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিংবা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সংস্থা কেউই। এ বার অবশ্য কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন ওই ঠিকাদার সংস্থার মালিক রতন দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরণের মর্মান্তিক ঘটনা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE