Advertisement
১৭ জুন ২০২৪
Cyclone Remal

ধেয়ে আসতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’! ঝড়বৃষ্টিতে কী ভাবে সুরক্ষিত থাকবেন, জেনে নিন

শনিবারেই তৈরি হতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। ঘূর্ণিঝড় বা প্রবল বৃষ্টির সময় কী করবেন, কী করবেন না, জেনে নিন।

What Precaution should be taken to save from Cyclone remal

বজ্রপাতের সময় হতে হবে সাবধান। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৪ ২০:১৩
Share: Save:

বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত নিম্নচাপ। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, শক্তি বাড়িয়ে শনিবার রাতেই তা পরিণত হতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে। সে ক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ রবিবার মধ্য রাতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ-খেপুপাড়ার মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে। ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১১০-১২০ কিলোমিটার। কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলিতেও ঝড়ের বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৮০-৯০ কিলোমিটার। সব চেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে দুই ২৪ পরগনায়। সেখানে ঘণ্টায় ঝড়ের বেগ হতে পারে ১০০-১১০ কিলোমিটার।

জেনে নিন ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়লে কী ভাবে নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখবেন। বাইরে ঝড়ের মুখে পড়লে কী করবেন?

উপকূলীয় এলাকায় থাকলে

ঘূর্ণিঝড় যেখানে আছড়ে পড়ে, তার চার পাশেই সাধারণত তাণ্ডবলীলা বেশি দেখা যায়। এ বারেও পূর্বাভাস, ‘রেমাল’ তৈরি হলে বাংলাদেশ ও সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় তার প্রভাব সব চেয়ে বেশি পড়বে। যার মধ্যে থাকছে দুই ২৪ পরগনা।

কী করবেন

উপকূলীয় এলাকায় থাকলেঃ একেবারে সমুদ্রের ধারে কাঁচা বাড়িতে থাকলে আর সেখানে ঘূর্ণিঝড়ের চরম সতর্কতা জারি হলে, প্রথমেই জরুরি জিনিস নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যান। সরকারি ‘সাইক্লোন সেন্টার’ বা সমুদ্র থেকে দূরে কোনও পাকা বাড়িতে আশ্রয় নিন।

গুছিয়ে রাখুন: টাকা-পয়সা, জরুরি নথি, আধার, রেশন-প্যান কার্ডের মতো জরুরি জিনিস। যে হেতু ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টিও হয়, এক্ষেত্রে তাই অবশ্যই সমস্ত জিনিস মোটা কোনও প্লাস্টিকের মধ্যে রাখবেন। সঙ্গে রাখতে হবে অন্তত দু-দিনের জন্য শুকনো খাবার। যেমন চিঁড়ে, মুড়ি, গুড়, বিস্কুট। বাড়িতে বাচ্চা থাকলে তার খাবারও আগেই ব্যবস্থা করে রাখতে হবে।

বাড়িতে থাকলে: ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কী কী করবেন?একটু স্মরণ করিয়ে দেওয়া যাক।

১. বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে প্রথমেই এসি, টিভি, রেফ্রিজারেটর, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, গিজার, কম্পিউটারের প্লাগ খুলে রাখুন। যতটা সম্ভব তখন বিদ্যুৎ সংযোগের পরিষেবা কম ব্যবহার করুন। এমন সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে পড়ার আগেই দেখে নিন, বাড়ির ‘আর্দিং’ সঠিক আছে কি না।

খুলে রাখতে হবে টিভি, ফ্রিজ, এসির প্লাগ।

খুলে রাখতে হবে টিভি, ফ্রিজ, এসির প্লাগ। ছবি: সংগৃহীত

২. ঝড়ের পূর্বাভাস থাকলে আগেই বাড়ির ছাদে বা আশপাশে এমন কোনও জিনিস রাখবেন না, যা উড়ে গিয়ে কারও আঘাত লাগতে পারে।

৩. ঝড় মানেই বাড়ির বয়স্করা আম কুড়ানোর গল্প করেন। সে ভাবে আম গাছ না থাকলেও এখনও শহরাঞ্চলেও অল্প কিছু আম গাছ আছে। আর বিভিন্ন জেলায় আম বাগানও আছে। ছোটবেলার সেই আনন্দ উপভোগ করার জন্য ঝড়ের সময় আম কুড়োতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনবেন না।

৪. মোবাইল ব্যবহার করবেন না। শুধু চার্জ দেওয়া নয়, ঝড়-বৃষ্টি বজ্রপাতের সময় মোবাইলে কথা বলা থেকে এমনকী বজ্রপাতের ছবি তোলা থেকেও বিরত থাকুন।

৫. মোবাইল, ল্যাপটপ, এমার্জেন্সি লাইটে আগে থেকে চার্জ দিয়ে রাখুন। মোমবাতি ঘরে রাখুন। পানীয় ও স্নানের জল আগে থেকেই বেশি করে ধরে রাখুন। ঘূর্ণিঝড়ের সময় সকলের নিরাপত্তার কথা ভেবেই অনেক সময় বিদু্ৎ পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই বিষয়টি মাথায় রেখে সতর্ক হন।

৬. বাড়িতে জরুরি ওষুধ, অন্তত ২-৩ দিনের রেশন, শুকনো খাবার মজুত রাখুন।

জমা জলে বিপদ

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। আর কম সময়ে প্রচুর বৃষ্টিতে জল জমা খুব সাধারণ ব্যাপার। তবে এই জমা জলেই লুকিয়ে থাকে বিপদ। ঝড়ে ওভারহেড তার ছিঁড়ে যদি জলে পড়ে সেই জলে পা দিলেই তড়িদাহত হওয়ার সম্ভাবনা। তাতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

তাই ঝড় থামলেই জমা জলে মজা করতে বের হবেন না। যদি জরুরি প্রয়োজনে বের হতেই হয়, অন্তত রবারের জুতো পরে বের হন। এতে কিছুটা হলেও বিপদ এড়ানো সম্ভব।

অ্যাডভেঞ্চার নয়

অ্যাডভেঞ্চার করতে দয়া করে গাড়ি বা বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন না। বিপদ যে কী ভাবে আসবে বুঝতে পারবেন না। সাহস থাকা ভাল, তবে হঠাকারি সিদ্ধান্ত বিপদ ডেকে আনতে পারে। যদি জরুরি কাজে গাড়ি বা বাইক নিয়ে বের হতেই হয়, তা হলে অন্তত প্রবল ঝড়ের মুখে কোনও ধাবা বা শপিং মল বা কোনও কংক্রিটের ছাউনির নীচে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করুন।

তবে ঘূর্ণিঝড়-বৃষ্টি-বজ্রপাতে সুরক্ষার জন্য বাড়িতে থাকতে হলেও, দরজা-জানলা বন্ধ করে নিজেদের মতো খাওয়া-দাওয়া আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে পারেন, তাতে কোনও বাধা থাকছে না। বাইরে বেরিয়ে অ্যাডভেঞ্চারের চেষ্টা ‘নৈব নৈব চ’।

বাড়িতে কেউ না থাকলে সুরক্ষা কী ভাবে?

প্রাকৃতিক বিপর্যয় তো বলেকয়ে আসে না। হতেই পারে যখন ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা জারি হল, বাড়ি তখন খালি, কারণ শহরের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল আগে থেকেই।

সে ক্ষেত্রে বাইরে যাওয়ার আগে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস জানতে পারলে, প্রথমেই বাড়ির সমস্ত বৈদ্যুতিক জিনিসপত্রের প্লাগ খুলে রেখে দেবেন। ‘আর্দিং’ ঠিকমতো মিটারের সঙ্গে রয়েছে কি না, দেখে নিতে হবে।

দরজা-জানলা খুব ভালো করে বন্ধ করে যাবেন। ছাদে বা বারান্দায় ফুলের টব থাকলে অবশ্যই তা ঘরের মধ্যে রেখে যাবেন। কারণ, ঝড় বৃষ্টিতে শুধু যে গাছপালা নষ্ট হবে তা নয়, ঝড়ে টব উড়ে কারও মাথায় পড়ে বিপদ ঘটতে পারে।

অফিস থাকলে-

ঘূর্ণিঝড় আসবে বলে জরুরি পরিষেবা, অফিস বন্ধ থাকে না। তাই খুব প্রয়োজনে লোকজনকে বের হতেই হবে। সে ক্ষেত্রেও প্রবল ঝড় ও বৃষ্টির সময় রাস্তায় বা খোলা জায়গা না থাকার চেষ্টা করতে হবে। আচমকা ঝড়-বৃষ্টি হলে গাছের তলায় কোনও ভাবেই আশ্রয় নেবেন না। বরং কোও পাকা বাড়ি, শপিং মল, কংক্রিটের ছাউনি আছে, এমন জায়গায় মাথা গোঁজা যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Remal Safety Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE