অস্ত্রোপচারের পরে ২৪ ঘণ্টা না কাটতেই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি বিকাশ প্রসাদের ফিজিওথেরাপি করেছিলেন কে? তিনি কি আদৌ বিষয়টিতে প্রশিক্ষিত? ফিজিওথেরাপি শুরুর অল্প সময়ের মধ্যে বিকাশবাবুর মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবারের তরফে গাফিলতির যে অভিযোগ উঠেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টরা। তাঁদের বক্তব্য, এই প্রশ্নের উত্তর জানাটাই সবথেকে জরুরি। কারণ প্রশিক্ষিত ফিজিওথেরাপিরা রোগীর ক্ষতস্থানের কথা বিবেচনা করে তবেই ফিজিওথেরাপি শুরু করেন। সে ক্ষেত্রে এমন হওয়ার কথাই নয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যিনি ফিজিওথেরাপি করেছেন তিনি হাসপাতালেরই চিকিৎসক। কিন্তু তাঁর কি ফিজিওথেরাপি করার প্রশিক্ষণ আছে? অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি জানান, তদন্তের আগে কোনও কথা বলা যাবে না। যদিও আর জি করের সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের নার্সদের একাংশ জানিয়েছেন, মূলত জুনিয়র ডাক্তাররাই এই কাজগুলি করেন। তাতে কখনও কখনও সমস্যা হয়। আবার কখনও ঠিকঠাক ভাবে সব উতরেও যায়।
এই কথা শুনে শিউরে উঠেছেন প্রশিক্ষিত ফিজিওথেরাপিস্টরা। শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের ফিজিওথেরাপিস্ট বলেন, ‘‘এটা তো ছেলেখেলা। ফিজিওথেরাপির মতো একটি প্রশিক্ষণ-ভিত্তিক পরিষেবা কী ভাবে যে কেউ দিতে পারেন? এর জেরে এমন দুর্ঘটনা তো যখন-তখন ঘটতে পারে!’’ ফিজিওথেরাপিস্টদের সংগঠন ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ ফিজিওথেরাপির সদস্য অলোক রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘যিনি ওই কাজ করেছেন, তিনি কোনও ভাবেই প্রশিক্ষিত নন। প্রশিক্ষিত ফিজিওথেরাপিস্ট ও রকম টানাহ্যাঁচড়া করবেন না।’’
বিকাশবাবুর দাদা দীপক প্রসাদ মঙ্গলবারই জানিয়েছিলেন, অস্ত্রোপচারের পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছিল তাঁর ভাইয়ের ফিজিওথেরাপি। আর তাতেই অস্ত্রোপচার হওয়ার জায়গা থেকে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে ভিজে গিয়েছিল ব্যান্ডেজ। তাঁর ভাই যখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন, তখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বলেছিলেন, ‘‘রক্ত বেরোচ্ছে তো কী হয়েছে? ও আবার ব্যান্ডেজ করে দেব। এটা না করলে রোগী হাঁটতে পারবে না।’’
এ দিনও দীপকবাবু বলেন, ‘‘ওই ডাক্তারবাবু আমাকেই প্রথমে বলেছিলেন, ভাইয়ের পা ধরে নাড়াতে। আমি বলেছিলাম, এক দিন আগে যার অপারেশন হয়েছে, তার পা ধরে কী ভাবে নাড়াব? ব্যথা লাগবে তো! ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, ‘এটা না করলে ভাই আর কোনওদিন হাঁটতেই পারবে না।’’’ এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিকাশবাবুর মৃত্যু হয়।
অস্ত্রোপচারের পরবর্তী যে সময়টা রোগীর পরিচর্য়ার ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে এমন আচরণ কী ভাবে চলতে পারে? রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রশিক্ষণ ছা়ড়া এটা করার কথাই নয়। ঠিক কী হয়েছিল, তা তদন্ত রিপোর্টে স্পষ্ট হবে। কারও গাফিলতি প্রমাণ হলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy