গরম পড়তেই রামপুরহাট মহকুমা এলাকার বিভিন্ন এলাকায় জলের সমস্যা দেখা গিয়েছে। কোথাও পাইপ ফেটে জলের অপচয় হচ্ছে, কোথাও জল প্রকল্পগুলি বেহাল হয়ে পড়ে রয়েছে। এই রকম পরিস্থিতিতে প্রায় ভোর ৪টে থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জল সমস্যায় নিয়ে ভুগতে হল মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত রামপুরহাট জেলা হাসপাতালের কর্মী থেকে রোগী ও তাঁদের আত্মীয় পরিজনদের। হাসপাতালে জলের সমস্যার সমাধান কী করে হবে তার সদুত্তর মেলেনি কোনও দপ থেকেই। এই হাসপাতালে জলের সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন নতুন সুপার সুবোধ মণ্ডল। তিনি বলেন, “সত্যিই এটা একটা সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে খুব শীঘ্রই দায়িত্বপ্রাপ্ত দফতরগুলির আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসা হবে।”
রবিবার বেলা ১১টার পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে রোগীর আত্মীয়পরিজন জলের বোতল হাতে ওঠা-নামা করছেন। দোতলা-তিনতলা-চারতলার সিঁড়ি ভেঙে ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীরদের কাছে যাচ্ছেন। কেউ বা উপর থেকে জলের সন্ধানে নীচে নামছেন। এমন অবস্থায় হাসপাতালের মহিলা বিভাগ থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামতে দেখা গেল নলহাটি থানার জেষ্ঠ্যা গ্রামের বাসিন্দা জিয়ারুল ইসলাম নামে এক যুবককে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জিয়ারুলের মা এখানে ভর্তি আছেন। সকাল থেকে তিনি মায়ের কাছে রয়েছেন। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বললেন, “সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গোটা ওয়ার্ডে জল নেই। শৌচাগারেও জল নেই। বারবার ওঠানামা করতে হচ্ছে।” প্রসূতি বিভাগে শনিবার রাত থেকে মেয়েকে নিয়ে আছেন মুরারই থানার কনকপুর গ্রামের রহিমা বেগম। তিনি বললেন, “শৌচাগারে ভোর চারটের পর থেকে জল নেই। সেখানে ঢুকতে পারা যাচ্ছে না। বাইরে থেকে জল এনে রোগীর জন্য ব্যবস্থা করতে হয়েছে।” একই কথা জানালেন রামপুরহাট নিশ্চিন্তিপুরের চাঁদনি বিবি, নলহাটি থানার পাইকপাড়া গ্রামের সরমা মালরা। চারতলায় পুরুষ বিভাগে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ নিয়ে ভর্তি থাকা রামপুরহাট থানার কাঁদা গ্রামের বাসিন্দা সাধন রায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জানালেন, “সকালে হাসপাতালের একজন কর্মী পেয়িং বেডের টাকা সুপারের কাছে জমা দেওয়ার কথা বলতে এসেছিলেন। আমি সেই কর্মীকে হাসপাতালের শৌচাগারে জল না থাকার কথা জানিয়ে অসুবিধার কথা বলেছি।”
ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জল না থাকার জেরবার হাসপাতালের কর্মীরাও। কর্মীরা জানালেন, কোনও ওয়ার্ডে জল ছিল না। দুপুর ১২টার পর জল এল। বাড়ি থেকে নিয়ে আসা এক বোতল জলে কোনও রকমে কাজ চালিয়ে নিতে হয়েছে। তাঁরা বললেন, “হাসপাতালে জল সরবরাহ সমস্যার পাশাপাশি প্রায় দিনই সন্ধ্যার পর লোভোল্টেজ থাকছে। এর ফলে লিফট চালু করা যায় না। রোগীদের স্ট্রেচারে চাপিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ভর্তি করতে হচ্ছে রোগীর আত্মীয়পরিজনদের।” হাসপাতাল কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, নজরদারির অভাবে এক এক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিজার্ভার থেকে জল অনবরত পড়ে যায়। বন্ধ করার জন্য কাউকে পাওয়া যায় না।
হাসপাতালে জল সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ। ওই দফতর থেকে হাসপাতালে নিযুক্ত আছেন আমিনুর ইসলাম নামে এক অস্থায়ী কর্মী। তাঁর দাবি, “আমি আমার কাজ ঠিক মতোই করি। যাঁরা পাম্প চালানোর দায়িত্বে আছেন তাঁরা যদি ঠিক সময় মতো পাম্প চালু না করে তা হলে রিজার্ভারে জল থাকবে কী করে। এই সমস্যা শুধু আজকের নয় অনেক দিনের। এ ব্যাপারে দফতরের আধিকারিকদের একাধিক বার জানানো হয়েছে।” জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের রামপুরহাট বিভাগের সহকারী বাস্তুকার জয়দেবপাল মজুমদার বলেন, “সমস্যার কথা এখনও পর্যন্ত কেউ আমাকে জানাননি। এই হাসপাতালকে জেলা ও সুপারস্পেশাল্টি হাসপাতাল করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তাই জল সমস্যা মেটানোর জন্য উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy