এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গে মৃতার শোকার্ত পরিজন। শনিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল হাসপাতাল চত্বরে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের আক্রমণে উত্তরবঙ্গে মৃত্যুর মিছিল শুরু হওয়ার পর রাজ্যে রোগনির্ণয় কেন্দ্র বাড়ানোর বিষয়ে টনক নড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। রাজ্য জুড়ে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের পাঁচটি নতুন নির্ণয় কেন্দ্র গড়তে চেয়ে দিল্লির কাছে আবেদন জানিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে চাপান-উতোরের মধ্যেই কলকাতার এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি হল ডেঙ্গি আক্রান্ত এক কিশোরী। হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রমিতা শাহ নামে বারো বছরের ওই বালিকার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের পালপাড়ায়। গত ৩০ জুলাই তাকে জ্বর ও পেটের যন্ত্রণা নিয়ে বাঙুরে ভর্তি করা হয়। মেয়েটির রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গির ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আপাতত ‘হাই ডিপেন্ডেন্সি ওয়ার্ড’-এ রাখা হয়েছে প্রমিতাকে।
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, হাওড়ার বেলুড়েও ডেঙ্গি আক্রান্ত স্থানীয় এক জনকে সেখানকার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পতঙ্গবিদ ও জীবণুবিজ্ঞানীদের একটা বড় অংশ বলছেন, এডিস ইজিপ্টাই মশা ডেঙ্গি ভাইরাসের বাহক। কলকাতায় এই মশার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাইরের জেলা থেকে আসা আক্রান্ত ওই কিশোরীকে কলকাতার এডিস ইজিপ্টাই মশা কামড়ালে তার শরীর ডেঙ্গির জীবাণু চলে আসবে। তার পর ওই মশা অন্য কারওকে কামড়ালেই ডেঙ্গি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
গত বছর কলকাতা-সল্টলেকে খুব বেশি ডেঙ্গি ছড়ায়নি। সাধারণ ভাবে কোনও বছর কোথাও ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গি কম হলে পরের বছর সংক্রমণের হার বাড়ে। সেই হিসেবে এ বছর কলকাতায় ডেঙ্গি বাড়ার আশঙ্কা। আর সেই কারণে কলকাতাবাসীর যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হওয়ার অবকাশ রয়েছে।
ডেঙ্গি মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত কলকাতা পুরসভা? পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ দাবি করেছেন, তাঁদের ৪ হাজার কর্মী পাড়ায়-পাড়ায় মশার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে বছরভর সমীক্ষা চালাচ্ছেন। তাঁরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে লার্ভা মারছেন, ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে সচেতনতা বৈঠক করছেন। ৫ লক্ষ বুকলেট বিলি হয়েছে। এলইডি ভ্যানে বিভিন্ন এলাকায় ১৫ মিনিটের তথ্যচিত্র দেখানো হচ্ছে। ডেঙ্গির সতর্কতা বিষয়ে কলকাতা জুড়ে ২০ হাজার ব্যানার এবং এক হাজার হোর্ডিং লাগানো হয়েছে।
রাজ্যে এনসেফ্যালাইটিস (জে-ই)-র নতুন পাঁচটি পরীক্ষাকেন্দ্র চালুর আবেদন পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে। এগুলি হল সিউড়ি সদর হাসপাতাল, কোচবিহার এমজিএম হাসপাতাল, বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল।
এত দিন রাজ্যে জে-ই পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল ছ’টি। তার মধ্যে উত্তরবঙ্গে ছিল দু’টি, চারটি দক্ষিণবঙ্গে। স্বাস্থ্য দফতরের একাংশের বক্তব্য, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারে গত কয়েক বছর ধরে জে-ই কেস পাওয়া সত্ত্বেও সেখানে পরীক্ষাকেন্দ্র করার কথা ভাবেননি কর্তারা। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের জে-ই পরীক্ষাকেন্দ্রটি কার্যত অকেজো হয়ে পড়েছিল। জে-ই নিয়ে আলোড়ন শুরু হওয়ায় বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরের নজরে আসে। এখন সিউড়িতে একটা পরীক্ষাকেন্দ্র করার পরিকল্পনা হচ্ছে। প্রশ্ন হল, এত দেরিতে বোধোদয় কেন? স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর জবাব, “কী হলে কী হত অত ব্যাখ্যার দরকার নেই। এখন প্রয়োজন মনে হয়েছে তাই নতুন কেন্দ্র খোলার তোড়জোড় চলছে।”
চাপে পড়ে স্বাস্থ্য দফতরের হুঁশ ফেরার আর এক নজির দেখা গিয়েছে কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে। দফতর সূত্রের খবর, জে-ই, ডেঙ্গি, এইচআইভি, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি-র মতো বিভিন্ন ভাইরাস চিহ্নিত করার জন্য গত ২০০৭ সালে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি ‘রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারস চেন রিঅ্যাকশন’ (আরটি-পিসিআর) মেশিন কেনা হয়। কিন্তু মাস কয়েক এইচআইভি পরীক্ষায় ব্যবহৃত হওয়ার পর থেকেই সেই যন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। রাজ্যে সাম্প্রতিক জে-ই প্রাদুর্ভাবের পর ট্রপিক্যাল কর্তৃপক্ষ আবার একটি ‘আরটি-পিসিআর’ যন্ত্র কেনার আবেদন জমা দিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরে।
প্রশ্ন উঠেছে, ফের একই যন্ত্র কেনা হচ্ছে কেন?
ট্রপিক্যালের ডিরেক্টর নন্দিতা বসুর কথায়, “পুরনো যন্ত্রটির মান খুব খারাপ। কারা, কেন ওই যন্ত্র কিনেছিলেন জানি না। যন্ত্রটি সারাতে পারে এমন সংস্থাও মিলছে না। তাই আধুনিক আর একটি ‘আরটি-পিসিআর’ আমরা চেয়েছি।”
এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে রাজ্যের বর্তমান অবস্থার কথা জানাতে রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের নেতৃত্বে এ দিন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির সঙ্গে দেখা করে বিজেপি-র এক প্রতিনিধি দল। রোগ প্রতিরোধে প্রশাসনের ভূমিকা সন্তোষজনক নয় বলে অভিযোগ করে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy