Advertisement
E-Paper

এনসেফ্যালাইটিসের বলি শিশু, মন্ত্রীকে ক্ষোভ

জ্বর ছিলই। সেই সঙ্গে খিঁচুনি শুরু হতেই ছেলেটাকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়ে গিয়েছিলেন বাড়ির লোকজন। কিন্তু ১২ ঘণ্টার আগেই শেষ হয়ে গেল ছোট্ট একটা প্রাণ। শনিবার রাতে বাঁকুড়া মেডিক্যালে মারা গেল বিষ্ণুপুরের গোপালগঞ্জের তিন বছরের শিশু অয়ন কুচলান। সেই সঙ্গে সামনে এসে পড়ল উত্তরবঙ্গ পেরিয়ে বর্ধমান ছাড়িয়ে বাঁকুড়াতেও হানা দিয়েছে মারণ এনসেফ্যালাইটিস।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৮
বিষ্ণুপুরের গোপালগঞ্জে এনসেফ্যালাইটিসে এক বালকের মৃত্যুর পরেও এলাকায় পরিচ্ছন্নতায় উদ্যোগী হয়নি পুরসভা।

বিষ্ণুপুরের গোপালগঞ্জে এনসেফ্যালাইটিসে এক বালকের মৃত্যুর পরেও এলাকায় পরিচ্ছন্নতায় উদ্যোগী হয়নি পুরসভা।

জ্বর ছিলই। সেই সঙ্গে খিঁচুনি শুরু হতেই ছেলেটাকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়ে গিয়েছিলেন বাড়ির লোকজন। কিন্তু ১২ ঘণ্টার আগেই শেষ হয়ে গেল ছোট্ট একটা প্রাণ। শনিবার রাতে বাঁকুড়া মেডিক্যালে মারা গেল বিষ্ণুপুরের গোপালগঞ্জের তিন বছরের শিশু অয়ন কুচলান। সেই সঙ্গে সামনে এসে পড়ল উত্তরবঙ্গ পেরিয়ে বর্ধমান ছাড়িয়ে বাঁকুড়াতেও হানা দিয়েছে মারণ এনসেফ্যালাইটিস।

এলাকায় পরিচ্ছন্নতার অভাব নিয়ে ক্ষোভ আগে থেকেই ছিল। তার উপরে ওই শিশুর মৃত্যুতে এলাকায় ক্ষোভ ছড়ায়। রবিবার দুপুরে ওই শিশুর বাড়িতে গেলে বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায়। এলাকা থেকে শুয়োর তুলে নিয়ে যাওয়ার দাবিতে এবং নর্দমা অনিয়মিত ভাবে সাফাই করার অভিযোগে তাঁকে বাসিন্দাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।

স্থানীয় একটি হাইস্কুলের শিক্ষক অরুণ কুচলানের ছেলে অয়ন শুক্রবার থেকে জ্বরে ভুগছিল। স্থানীয় ভাবে এক শিশু চিকিৎসকের কাছে তার চিকিৎসা চলছিল। অয়নের জেঠা তরুণ কুচলান বলেন, “অয়নের জ্বর গত দু’দিন খুব বেশি ছিল না। এক চিকিৎসককে দেখানো হচ্ছিল। কিন্তু শনিবার সকালে ওর মাথা বেশ গরম হয়ে যায়, সেই সঙ্গে খিঁচুনি শুরু হয়। অবস্থার অবনতি হয়েছে বুঝে তাকে প্রথমে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে স্থানান্তর করে দেওয়া হয়। কিন্তু ছেলেটাকে যে ফিরিয়ে আনা যাবে না ভাবতে পারিনি।” শনিবার রাত আটটায় বাঁকুড়া মেডিক্যালে অয়নের মৃত্যু হয়। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গৌতম নারায়ণ সরকার বলেন, “সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড পরীক্ষায় শিশুটির মস্তিষ্ক আক্রান্তের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।”

রবিবার সকাল থেকেই অয়নের বাড়িতে আত্মীয়-পরিজনেরা সান্ত্বনা জানাতে ভিড় করেছিলেন। ছেলেকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা কাকলি কুচলান। মাঝে মধ্যেই তিনি ‘বাবু কোথায় গেলি’ বলে হাহাকার করছিলেন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন অরুণবাবু। এ দিকে এলাকায় অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ নজরে পড়ে। অনেককেই বলাবলি করতে শোনা যায়, এলাকায় শুয়োর ঘুরে বেড়াচ্ছে। চারপাশে মশার উপদ্রবও রয়েছে। কিন্তু নর্দমা সাফাই বা আগাছা পরিষ্কারের বালাই নেই। তার উপরে এ দিন দুপুর পর্যন্ত স্থানীয় (১৪ নম্বর ওয়ার্ড) কাউন্সিলর নীলা বাগদিকে এলাকায় দেখা যায়নি বলে ক্ষোভ আরও চড়ে। দুপুরে সেখানে শ্যামবাবু সঙ্গীদের নিয়ে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাসিন্দারা। তাঁরা মন্ত্রীকে এলাকার সাফাই নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন।

এই অভিযোগে রবিবার মন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায়কে ঘিরে বাসিন্দাদের বিক্ষোভ। ছবি: শুভ্র মিত্র।

তাঁদের দাবি, এলাকা থেকে অবিলম্বে শুয়োর সরাতে হবে। সেই সঙ্গে নিয়মিত মর্দমা পরিষ্কার করতে হবে। স্থানীয় বাসিন্দা অসীম কর্মকার, গণেশ চট্টোপাধ্যায়, তাপসী পাল, কার্তিক দাস, অমিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, “চারপাশ দেখলে মনে হবে না আমরা পুরএলাকায় বাস করি? কিছু লোক শুয়োর রেখেছেন। শুয়োরের পাল নর্দমা ঘেঁটে চারপাশে ঘোরাঘুরি করে। মশার দৌরাত্ম্যও রয়েছে। সব থেকে আশ্চর্যের ঘটনা, এ রকম মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল এলাকায়। কিন্তু তারপরেও স্থানীয় কাউন্সিলরকে এলাকায় দেখা গেল না। তাই পুরপ্রধানকেই আমাদের ক্ষোভের কথা জানালাম।” কাউন্সিলরের খোঁজে তাঁর বাড়িতে গিয়েও দেখা পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ করা যায়নি। শ্যামবাবু আশ্বাস দেন, “এলাকায় শুয়োর আটকানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউন্সিলর কেন নর্দমা সাফাই করাননি, জানতে চাইব।”

বিষ্ণুপুর হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক অমিত মুখোপাধ্যায়ের কাছে গত দু’দিন ধরে অয়নের চিকিৎসা করানো হয় বলে পরিবার সূত্রে খবর। এ দিন অমিতবাবু বলেন, “ওই শিশুকে পরীক্ষা করে প্রথম দিকে অস্বাভাবিক কিছু আমার নজরে আসেনি। তবে রক্ত পরীক্ষা করতে বলেছিলাম। শনিবার ওকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখন সে অজ্ঞান ছিল। এখানে তেমন পরিকাঠামো না থাকায় বাঁকুড়া মেডিক্যালে ওকে স্থানান্তর করা হয়েছিল।” বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরেশ দাস বলেন, “এনসেফ্যালাইটিসে শিশু মৃত্যুর ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। ওই এলাকায় আমরা বাড়তি নজর দিচ্ছি।” এদিন বিকেলে এসিএমওএইচ মীনাক্ষি মাইতি দুই স্বাস্থ্যকর্মীকে নিয়ে অয়নের বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন। পরে তিনি বলেন, “এলাকায় জ্বরে আক্রান্ত কেউ নেই। তবে মানুষের মধ্যে ভীতি রয়েছে। তাই সোমবার আরও কর্মী নিয়ে গিয়ে বাসিন্দাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হবে।”

এ দিকে বিষ্ণুপুর হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জ্বর নিয়ে কিছু রোগী ভর্তি থাকলেও কারও অবস্থা বাড়াবাড়ি রকমের নয়। এ দিকে এ দিনও বিষ্ণুপুর হাসপাতাল চত্বরে শুয়োর চরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। হাসপাতাল চত্বরে আগাছা সাফাইয়ের কাজ এ দিন শুরু হয়েছে। মশা মারতে ওষুধও ছড়ানো হয়। শ্যামবাবুও ব্লিচিং ছড়ান। তা নিয়ে বিজেপি-র বিষ্ণুপুর মহকুমা সভাপতি স্বপন ঘোষের কটাক্ষ, “লোক দেখাতে হাসপাতালে ব্লিচিং না ছড়িয়ে শ্যামবাবুর পুরএলাকায় মশা মারার ব্যবস্থা আগে করা উচিত। নিকাশি নালা ও আবর্জনা সাফাইয়ের তো বালাই নেই। বিষ্ণুপুরবাসীর কপাল ভালো, তাই এখনও মহামারী ছড়ায়নি।”

encephalities boy death bishnupur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy