Advertisement
০৭ মে ২০২৪

কোথায় স্বচ্ছ ভারত অভিযান, দুর্গন্ধে টেকা দায় হাসপাতালে

দেশজুড়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আহ্বানে শুরু হয়েছে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’। কিন্তু, বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতাল চত্বর ঘুরলে, সেই স্বচ্ছতার কোনও চিহ্ন চোখে পড়ে না! হাসপাতালের যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে রোগীদের ও তাঁদের পরিবারের। তাঁদের অভিযোগ, ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-তো অনেক দূরের কথা, অস্বাস্থ্যকর এই পরিবেশে রোগীর চিকিৎসা করাতে আসতেই ভয় করে! সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির সদস্য তথা বিষ্ণুপুর পুরসভার কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়।

এমন নোংরা পরিবেশেই জল সংগ্রহ করতে বাধ্য হন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা। —নিজস্ব চিত্র

এমন নোংরা পরিবেশেই জল সংগ্রহ করতে বাধ্য হন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২৪
Share: Save:

দেশজুড়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আহ্বানে শুরু হয়েছে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’। কিন্তু, বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতাল চত্বর ঘুরলে, সেই স্বচ্ছতার কোনও চিহ্ন চোখে পড়ে না!

হাসপাতালের যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে রোগীদের ও তাঁদের পরিবারের। তাঁদের অভিযোগ, ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-তো অনেক দূরের কথা, অস্বাস্থ্যকর এই পরিবেশে রোগীর চিকিৎসা করাতে আসতেই ভয় করে! সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির সদস্য তথা বিষ্ণুপুর পুরসভার কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “হাসপাতালের কর্তাদের একাধিকবার জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। বাধ্য হয়ে মাঝে মাঝে আমরাই সাফাই অভিযানে নামি।”

বিষ্ণুপুর হাসপাতাল চত্বরে ঢুকলেই মালুম হয় ঘটনার অভিযোগের সত্যতা। দুর্গন্ধে এলাকায় থাকাই দায়। হাসপাতাল চত্বরের চারপাশেই রয়েছে আগাছার জঙ্গল। বৃষ্টিতে ভিজে সেই জঙ্গল সংলগ্ন আস্তাকুড়ে পচন ধরেছে। স্ত্রী বিভাগের জানালা থেকে কিছুটা দূরেই আবর্জনার স্তুপ বলে, রোগীরা অভিযোগ জানালেন। জানা গেল, পচা দুর্গন্ধ ভেসে আসে বলে অনেক ওয়ার্ডের জানলা খোলাই দায়। পরিস্থিতি এমনই এই দুর্গন্ধের জেরে ওয়ার্ডের ভিতরেও টেকা দায় হচ্ছে রোগীদের। সংলগ্ন এলাকার মানুষও ভালভাবে নিশ্বাস নিতে পারেন না।

বহির্বিভাগের স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগে শিশুদের সরকারি টিকাকরনের ভিড় উপচে পড়ছে। অথচ এই বিভাগের সর্বত্র ওষুধের প্যাকেট, পরিত্যক্ত ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ ডাঁই হয়ে পড়ে। কোথাও কোথাও ডাঁই হয়ে রয়েছে আবর্জনার স্তুপ। বাইরে অবাধে চরে বেড়াচ্ছে শুয়োর, ছাগল ও কুকুর।

জয়পুরের বাসিন্দা প্রবাল দে-র দিদি ক’দিন ধরে ভর্তি আছেন বিষ্ণুপুর হাসপাতালে। তাঁর কথায়, “হাসপাতালের ভিতরে বলুন অথবা বাইরে, এমন নোংরা পরিবেশে গা ঘিনঘিন করে। কাছাকাছি আর কোনও বড় হাসপাতাল না থাকায় এই অবস্থা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় কী!”

পরিস্থিতি এমনই, হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা পানীয় জল সংগ্রহ করেন যে নলকূপ থেকে, তার চারপাশেও বয়ে যায় নোংরা জল। আশপাশে ঘুরে বেড়ায় শুয়োর-কুকুর। ভনভন করে মশা-মাছি, নর্দমা ততটাই অপরিষ্কার। অপরিষ্কার সব ওয়ার্ডের বাথরুমও।

সাফাই কর্মী থাকলেও, হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলির বাইরে পড়ে ফেলে দেওয়া তরিতরকারি ও ভাত পড়ে থাকতে দেখা যায়। বহু রোগীর আত্মীয়েরা এই সব আবর্জনার স্তূপের সামনেই বসেই নিরুপায় হয়ে অপেক্ষা করেন। এই সব এলাকা দিয়ে ডাক্তার বা নার্সরা নাকে রুমাল চাপা দিয়ে পার হয়ে যান। হাসপাতালের অস্বাস্ত্যকর পরিবেশ নিয়ে একই ক্ষোভ প্রবালবাবুর মতো অন্য এক রোগীর আত্মীয় পরেশ দাসেরও। তিনি বললেন, “মাকে ভর্তি করেছি এখানে। যা অবস্থা দেখছি, নিজেই না রোগী হয়ে যাই!” সদ্য জেলা হাসপাতালের তকমা পাওয়া বিষ্ণুপুর হাসপাতালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে শঙ্কিত হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশও। হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, এলাকায় আবর্জনার স্তুপগুলি থেকে দুর্গন্ধের জেরে পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে। নিয়মিত পরিষ্কারও হয় না। এটা খুবই চিন্তার বিষয়, রোগীদের আত্মীয়রাও হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

কী বলছেন বিষ্ণুপুরের সিএমওএইচ?

সুরেশ দাস বলেন, “সমস্যাটি নিয়ে আমি সুপারের সঙ্গে কথা বলব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE