Advertisement
E-Paper

কর্মী কম, ট্রলি ঠেলেন রোগীর পরিজন

তিন জেলার সাত লক্ষেরও বেশি মানুষ নির্ভর করে একটিই হাসপাতালের উপর। সেই হাসপাতালে ডাক্তার-কর্মী মিলিয়ে ফাঁকা রয়েছে ৯৪টি পদ। চালু হয়নি ব্লাড ব্যাঙ্ক। ভাঙা হাড়ের চিকিৎসা হচ্ছে না। দুর্ঘটনায় আহত রোগীকেও পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে। ওয়ার্ড মাস্টার না থাকায়, রোগী ভর্তি আছে কোন শয্যায়, তা খুঁজে বার করতেও বিস্তর ঘুরতে হচ্ছে পরিজনকে।

দেবব্রত দাস

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৫১

তিন জেলার সাত লক্ষেরও বেশি মানুষ নির্ভর করে একটিই হাসপাতালের উপর। সেই হাসপাতালে ডাক্তার-কর্মী মিলিয়ে ফাঁকা রয়েছে ৯৪টি পদ। চালু হয়নি ব্লাড ব্যাঙ্ক। ভাঙা হাড়ের চিকিৎসা হচ্ছে না। দুর্ঘটনায় আহত রোগীকেও পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে। ওয়ার্ড মাস্টার না থাকায়, রোগী ভর্তি আছে কোন শয্যায়, তা খুঁজে বার করতেও বিস্তর ঘুরতে হচ্ছে পরিজনকে।

দক্ষিণ বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের মহকুমা সদর খাতড়া। এখানকার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে বছর সাতেক আগে মহকুমা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। ২০০৬ সালের ১৮ নভেম্বর তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এই মহকুমা হাসপাতালের উদ্বোধন করেছিলেন। খাতড়া মহকুমায় ৮টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রায় ১৫০টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। রানিবাঁধ, বারিকুল, রাইপুর, সারেঙ্গা, খাতড়া, হিড়বাঁধ, সিমলাপাল থানা এলাকার পাশাপাশি পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ি এলাকা থেকেও বহু রোগী এই মহকুমা হাসপাতালে আসেন। প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৮০০-১২০০ রোগী আসেন। শয্যা ১০০ হলেও, ভর্তি থাকেন তার দেড় থেকে দু’গুণ বেশি।

কিন্তু কর্মীর অভাব হাসপাতালকেই রুগ্ন করে ফেলছে। হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, “ডাক্তার আর কর্মী, দুয়েরই অভাবে হাসপাতালের নাভিশ্বাস উঠছে। আট ঘন্টা ডিউটির জায়গায় ১২-১৪ ঘন্টা ডিউটি করছি। তবু কিছু কিছু সময় ফাঁক থেকে যাচ্ছে, ওয়ার্ডের তত্ত্বাবধানে কোনও চিকিৎসক থাকছেন না।” জটিল অস্ত্রোপচার তো দূরের কথা, প্রসূতিদের অবস্থা কিছুটা জটিল হলেই এখানে রাখার ঝুঁকি নেন না চিকিৎসকেরা। তাঁদের বাঁকুড়া মেডিক্যালে স্থানান্তর করে দেওয়া হয়।

সমস্যা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়েও। রোগীর আত্মীয়দেরই ট্রলি নিয়ে যেতে হচ্ছে। দশজনের জায়গায় মাত্র একজন সাফাই কর্মী থাকায়, ঠিকা কর্মী দিয়ে কোনও মতে কাজ চালাতে হচ্ছে। এমনকী, হাসপাতাল চত্বরের জঙ্গল সাফ করতে একশো দিনের কাজের প্রকল্পেও শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছিল হাসপাতালে। ওয়ার্ডের ভিতরের সাফাইয়ের জন্য নির্ভর করতে হয় রোগীদের নিয়োগ-করা আয়াদের উপর। কিন্তু এ ভাবে কতদিন চলবে, প্রশ্ন তুলছেন কর্মীরাই। হাসপাতালে শয্যার সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়। বর্তমানে এখানে শয্যা রয়েছে ১০০টি। কিন্তু রোগীর চাপ এমনই যে, প্রতিদিন গড়ে ১৫০-২০০ জন রোগীকে ভর্তি করা হয়। ফলে একই শয্যায় দু’জন পর্যন্ত রোগীকে রাখতে হয়। মেঝেতেও ঠাঁই হয় রোগীদের।

এত অসুবিধে সত্ত্বেও রোগীদের প্রধান অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে রোগীদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে দূরে। রানিবাঁধের ললিত সর্দার, রাইপুরের জীবন দুলের কথায়, “মাসখানেক আগে পথ দুর্ঘটনায় আহত দুই আত্মীয়কে খাতড়া হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। প্রাথমিক চিকিৎসার পরেই তাঁদের বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যেতে বললেন চিকিৎসকেরা। ৫০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে বাঁকুড়ায় নিয়ে যাওয়ার ধকল তো রয়েছে। তাহলে এই হাসপাতাল থেকে আমাদের লাভ কী হল?”

হাসপাতালে ‘ব্লাড ব্যাঙ্ক’ তৈরি হয়েছে প্রায় মাস চারেক আগে। কিন্তু এখনও তা চালু হয়নি। ফলে রক্তের সঙ্কট এখনও কাটেনি। এতদিন পরেও কেন চালু হয়নি ‘ব্লাড ব্যাঙ্ক’? জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, “ব্লাড ব্যাঙ্কের জন্য এখনও কর্মী নিয়োগ করা হয়নি। লাইসেন্সও মেলেনি। তাই ব্লাড ব্যাঙ্ক চালু করা যাচ্ছে না।” তাঁর দাবি, ব্লাড ব্যাঙ্ক-সহ প্রতিটি বিভাগেই যে সব শূন্য পদ রয়েছে সেখানে কর্মী নিয়োগের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে পাঠানো হয়েছে। খাতড়া হাসপাতালের সুপার রমেশ কিস্কুর দাবি, প্রতি মাসে বাঁকুড়া থেকে ৬০ ইউনিট করে রক্ত আনা হচ্ছে।

কিন্তু চিকিৎসক ও কর্মীর অভাব থাকায় হাসপাতাল সামাল দিতে যে হাসপাতাল কর্তারা প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছেন, তা স্বীকার করেন সুপারও। তিনি বলেন, “ হেড ক্লার্ক ছাড়া অন্য দুটি করণিক পদ শূন্য। সহকারী সুপার পদেও কেউ নেই। একজনও ওয়ার্ড মাস্টার নেই। একা সব সামলাতে গিয়ে প্রশাসনিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে।”

খাতড়া মহকুমা হাসপাতালের মান উন্নয়নের দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে বছরখানেক আগে তদানীন্তন হাসপাতাল সুপার বার্নামান টুডুর সঙ্গে গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়েছিলেন জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল সরকার। শ্যামলবাবু এখন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ। তাঁর দাবি, “সিপিএমের রাজত্বে শুধু মহকুমা হাসপাতালের ঘোষণাটুকুই হয়েছিল। কাজ কিছুই হয়নি। আমাদের সরকার এই হাসপাতালের উন্নয়নের জন্য একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে। কর্মীদের আবাসন তৈরি হয়েছে। কর্মী নিয়োগের জন্যও বলা হয়েছে।” তাঁর দাবি, আগের থেকে চিকিৎসার মান উন্নত হয়েছে। রানিবাঁধের বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রম অবশ্য বলেন, “হাসপাতালের উন্নতি যা হয়েছিল, বাম আমলেই হয়েছিল। বর্তমান সরকার হাসপাতালের জন্য কিছু করতে পারেনি।

নেই-নামচা

অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার: পদ ১, কেউ নেই, চিকিৎসক: পদ ৩২, রয়েছেন ১৪ জন।
শিশু চিকিৎসক: পদ ৩, রয়েছেন ১ জন।
প্রসূতি চিকিৎসক: পদ ৩, রয়েছেন ২ জন।
শল্য চিকিৎসক: পদ ৩, রয়েছেন ১ জন।
মেডিসিন চিকিৎসক: পদ ৩, রয়েছেন ১ জন।
ইএনটি: পদ ১, কেউ নেই।
হাড়ের সার্জেন: পদ ১, কেউ নেই।
নার্স: পদ ৩৭, রয়েছেন ৩২ জন।
সাফাইকর্মী: পদ ১০, রয়েছেন ১ জন।
চতুর্থ শ্রেণির কর্মী: পদ ৫৩, রয়েছেন ২১ জন।
করণিক: পদ ৩, রয়েছেন ১ জন।
নিরাপত্তারক্ষী: পদ ২০, রয়েছেন ৪ জন।
ওয়ার্ড মাস্টার: পদ ২, কেউ নেই।

debabrata das khatra health center district hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy