Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কর্মী-সমন্বয়ের অভাব, বাড়ছে ডেঙ্গি-আক্রান্ত

ডেঙ্গিতে সম্প্রতি আরও এক জনের মৃত্যু হল শহরে। দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা অলকানন্দা বিশ্বাস নামে মধ্য পঞ্চাশের ওই মহিলা গত ৬ নভেম্বর জ্বরের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে। ১০ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতালের তরফে শুভাশিস দত্ত জানিয়েছেন, শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ থাকায় অলকানন্দাদেবীকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৯
Share: Save:

ডেঙ্গিতে সম্প্রতি আরও এক জনের মৃত্যু হল শহরে। দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা অলকানন্দা বিশ্বাস নামে মধ্য পঞ্চাশের ওই মহিলা গত ৬ নভেম্বর জ্বরের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে। ১০ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।

হাসপাতালের তরফে শুভাশিস দত্ত জানিয়েছেন, শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ থাকায় অলকানন্দাদেবীকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। ভর্তির পর বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা যায়, তাঁর টোটাল ব্লাড কাউন্ট পাঁচে নেমে গিয়েছে। এনএস ওয়ান পজিটিভ ও আইজিএম পজিটিভ। প্লেটলেট ২৫০০০। শকে চলে যান অলকানন্দাদেবী। ফলে চিকিৎসা শুরু হলেও রোগী সাড়া দেননি। ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছে ‘ভাইরাল ফিভার উইথ মাল্টিঅর্গান ফেলিওর উইথ শক ইন আ কেস অফ ডেঙ্গি আইজিএম পজিটিভ’।

এ দিকে, শহরে ডেঙ্গিতে বেসরকারি ভাবে মৃতের সংখ্যা বাড়লেও পুরসভা আটকে পুরনো হিসেবে। ফলে উঠে আসছে ডেঙ্গিতে মৃত্যু নিয়ে কলকাতা পুরসভার তথ্য গোপন করার বিষয়টি। পুরসভার হিসেব বলছে, ২০১২-য় ডেঙ্গি আক্রান্ত ছিলেন ১৮০০ জন। মৃত দুই। ২০১৩-য় ৩০০-রও কম। মৃত্যুর কোনও খবর নেই। এ বছরে ইতিমধ্যেই তা বেড়ে প্রায় ৪৫০। মৃতের সংখ্যা দুই। যদিও বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১২-র থেকে শিক্ষা নিয়ে পুর স্বাস্থ্য বিভাগ ভেক্টর কন্ট্রোলে ১০ কোটি টাকা খরচ করে। জনসচেতনতা বাড়াতে প্রায় ৭৭৬টি হোর্ডিং, ২০০০০ ব্যানার-সহ বিভিন্ন প্রচার পদ্ধতিকে হাতিয়ার করার পাশাপাশি উৎসবের দিনেও কাজ করতে কর্মীদের ওভারটাইম দেওয়া হয়েছিল। এ বছরেও প্রায় একই টাকা খরচ করেও তবে কেন বাড়ছে ডেঙ্গির প্রকোপ!

পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী, মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতি ওয়ার্ডে নয় থেকে দশ জন ফিল্ড ওয়ার্কার কাজ করার কথা সারা বছর। ওয়াডের্র ভেক্টর কন্ট্রোল ইনচার্জ (ভি সি আই) তাঁঁদের নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রতি দিনের রিপোর্ট জমা পড়ে ওয়ার্ডের ভি সি আই-র কাছে। ভি সি আই তা জমা করেন ওয়ার্ডের মেডিক্যাল অফিসারের কাছে। তিনি রিপোর্ট দেবেন বরোর এগ্জিকিউটিভ হেলথ অফিসারকে। এগ্জিকিউটিভ হেলথ অফিসার রিপোর্ট জমা করেন প্রধান কার্যালয়ে। এখানেই হচ্ছে সমস্যা। উপর তলা থেকে নীচের তলার কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, বলছেন পুর-কর্মীদের একটা অংশ। তাঁদের দাবি, নীচের তলার কর্মীদের মধ্যে কাজের চাপ নেই। কারণ আধিকারিক স্তর থেকে বরো এবং ওয়ার্ডে কাজের কোনও নজরদারিই হয় না।

শহরের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কেউ ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলে বড়জোর তিন/চার সপ্তাহ নিয়মিত দেখা মেলে পুরকর্মীদের। কখনওই সারা বছর দেখা যায় না। বস্তি এলাকার ক্ষেত্রেও অবস্থা তথৈবচ। আরও অভিযোগ, পড়ে থাকা জমি, বন্ধ কারখানার আশেপাশের বসতি মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পুর প্রতিনিধিদের জানালেও পুরসভা পদক্ষেপ করে না। পুর-স্বাস্থ্য বিভাগের এক এগ্জিকিউটিভ হেল্থ অফিসার জানান, এমন হওয়ার কথা নয়। জনস্বার্থ রক্ষায় পুরসভা প্রয়োজনে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ৪৯৬ নোটিস জারি করে তলব করতে পারে। তাতেও কাজ না হলে আর্থিক জরিমানা করা হয়। গত বছরে কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি নিয়েছিল পুরসভা।

দক্ষিণ শহরতলির এক বরোর এগজিকিউটিভ হেল্থ অফিসার বলছেন, “কোথাও লার্ভা বা পিউপা মিললে সেই খবর বরোতে পৌঁছতে পৌঁছতে লার্ভা পিউপায় পরিণত হচ্ছে। অথবা পিউপা মশা হয়ে উড়ে যাচ্ছে। আধিকারিকেরা নিয়মিত নজরদারি রাখলে কর্মীদের মধ্যে কাজের চাপ থাকে। সেটাই তো হয় না।৬, ৭, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৫ বরোয় ডেঙ্গি ছড়ানোর খবর ছিল আগেই। তা-ও এ বছর বন্ধ হয়ে গেল উৎসবের সময়ে ওভারটাইম দিয়ে কাজ করানোর প্রকল্প।”

কলকাতা পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা স্নেহাংশু চৌধুরী বলেন, “ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার কোনও খবর নেই। আপনাদের কাছে থাকলে তথ্য জানান। নীচুতলার কর্মীদের ঠিক মতো কাজ না করার কোনও অভিযোগ যখন পুর প্রতিনিধিরা করেননি তখন নিশ্চয়ই কাজ ঠিক মতো হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jayati raha dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE