Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কল্যাণী পেল এইমস, খোঁজ জমির

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সবুজ সঙ্কেত মিলেছে। কিন্তু কল্যাণীর ঠিক কোথায় এইমস ধাঁচের হাসপাতাল গড়ে উঠবে, তা নিয়ে এখনও কিছুটা অন্ধকারে প্রশাসন। স্বাস্থ্যসচিব থেকে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা, কেউই এ দিন এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। তবে নদিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, হাসপাতাল গড়তে জমি কোনও সমস্যা হবে না। কারণ, যে পরিমাণ জমি দরকার তার চেয়ে অনেক বেশি জমিই সরকারের হাতে রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৪ ০৩:০৬
Share: Save:

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সবুজ সঙ্কেত মিলেছে। কিন্তু কল্যাণীর ঠিক কোথায় এইমস ধাঁচের হাসপাতাল গড়ে উঠবে, তা নিয়ে এখনও কিছুটা অন্ধকারে প্রশাসন। স্বাস্থ্যসচিব থেকে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা, কেউই এ দিন এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। তবে নদিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, হাসপাতাল গড়তে জমি কোনও সমস্যা হবে না। কারণ, যে পরিমাণ জমি দরকার তার চেয়ে অনেক বেশি জমিই সরকারের হাতে রয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, শিয়ালদহ থেকে রানাঘাট যাওয়ার পথে কল্যাণী মেন স্টেশন থেকে কিছুটা এগিয়ে রাস্তার বাঁ দিকে এক লপ্তে প্রায় ২০০ একর জমি রয়েছে। এখানেই এক সময় প্রয়াত রাজ্যপাল নুরুল হাসানের নামে এইমসের ধাঁচে একটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান গড়ার পরিকল্পনা করেছিল বাম সরকার। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। শনিবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, সেখানে কোথাও কোনও ধরনের নির্মাণ হয়নি। দখলদারি নেই, হয় না চাষবাসও। একেবারে শূন্য প্রান্তর। রাস্তার বাঁ দিকে যেমন এক লপ্তে এত জমি রয়েছে, তেমনই রাস্তার ডান দিকেও গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল আর নেতাজি সুভাষ টিবি স্যানেটোরিয়াম লাগোয়া প্রায় ১৫০ একর জমি ফাঁকা রয়েছে। সেই জমিও সরকারের হাতেই। স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, প্রয়োজনে সেখানেও এইমস গড়তে পারে মন্ত্রক। নদিয়ার জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, ‘‘সবে তো এইমস হবে জানা গেল। কোথায়, কী ভাবে হবে, সরকারই তা ঠিক করবে। তবে আমাদের প্রায় ২০০ একর জমি রয়েছে গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতালের কাছে।’’

প্রশাসন সূত্রে খবর, বাম আমলে প্রশান্ত শূর স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কল্যাণীতে এইমস ধাঁচের হাসপাতাল তৈরির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল। জমিও চিহ্নিত হয়। রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়েছেন, যোজনা কমিশনের তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান প্রণব মুখোপাধ্যায় ওই খাতে ১০ কোটি টাকা অনুমোদনও করেন। ১৯৯৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি শঙ্করদয়াল শর্মা ওই জমিতে একটি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসর্চ ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তখন বলা হয়েছিল, এটিই এইমস ধাঁচের হাসপাতাল হিসেবে গড়ে উঠবে। কিন্তু তার পর আর কাজ এগোয়নি। ওই জমি ক্রমশ জঙ্গল হয়ে যায়। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১২ সালে রাজ্যসভার সাংসদ মুকুল রায়ের মাধ্যমে কেন্দ্রের কাছে পুরনো প্রকল্পের খসড়া দেখিয়ে এইমসের প্রস্তাব নতুন করে পাঠানো হয়।

এনডিএ সরকারের আমলে ঠিক হয়েছিল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালকেই এইমস ধাঁচের হাসপাতাল করা হবে। পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি রায়গঞ্জে এইমস-এর ধাঁচে প্রতিষ্ঠান গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ার পরে তাঁর স্ত্রী, তথা সাংসদ দীপা দাশমুন্সিও বার বার জানিয়েছেন, রায়গঞ্জেই এইমস হবে।

এইমস রায়গঞ্জে হবে নাকি কল্যাণীতে, তা নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েন চলেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার গোড়া থেকেই রায়গঞ্জের বদলে কল্যাণীতেই এইমস তৈরি নিয়ে উৎসাহী ছিল। কেন্দ্রে বিজেপি সরকার গঠনের পরে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন জানান, রাজ্য যেখানে চাইবে, সেখানেই হবে এইমস। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে-র কথায়, “এর পরই গত ১০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রকে চিঠি দিয়ে কল্যাণীর নাম প্রস্তাব করা হয়। শুক্রবার জানতে পারলাম, কেন্দ্র তা অনুমোদন করেছে। তবে এখনও দিল্লির চিঠি হাতে আসেনি।”

কিন্তু কল্যাণীকেই কেন বাছা হল? স্বাস্থ্যসচিবের যুক্তি, “কল্যাণীতে এক সঙ্গে অনেকটা জমি আছে। অবস্থানগত ভাবে তা বেশ সুবিধাজনক জায়গাতেও রয়েছে। কলকাতার খুব কাছে, যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল। বিমানবন্দরও কাছে। চিকিৎসকদের যেমন বিভিন্ন জায়গা থেকে আনা যাবে, তেমনই রোগীরাও সহজে আসতে পারবেন এবং প্রয়োজনে তাঁদের উন্নততর পরিষেবার জন্য সহজে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া যাবে।”

নির্বাচনের কয়েক মাস আগে কলকাতায় এসে এইমস প্রকল্পের ব্যাপারে রাজ্যের উদ্যোগের অভাব নিয়ে অভিযোগ করেন তখনকার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ। তিনি জানিয়েছিলেন, প্রথম ধাপে ছ’টি হাসপাতাল হচ্ছে ভোপাল, ভুবনেশ্বর, যোধপুর, পটনা, রায়পুর ও হৃষিকেশে। ভুবনেশ্বরে হাসপাতাল পরিষেবা ও মেডিক্যাল পঠনপাঠন দুই-ই শুরু হয়ে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গকেও তাঁরা অনুমোদন দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু কোথায় সেই প্রতিষ্ঠান হবে, সে ব্যাপারে রাজ্যের স্পষ্ট মত মেলেনি।

রাজ্য সরকার তখনও যে এই ব্যাপারে মনস্থির করে উঠতে পারেনি, লোকসভার নির্বাচনী প্রচারের সময় মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেও তা পরিষ্কার হয়ে যায়। উত্তরবঙ্গের করণদিঘিতে তিনি বলেছিলেন, শিলিগুড়ি, ইটাহার, বালুরঘাট, জলপাইগুড়ি যে কোনও জায়গাতেই এইমস হতে পারে।

শেষ পর্যন্ত কল্যাণীকেই বেছে নিল রাজ্য সরকার। কী ভাবে এইমস গড়ে উঠবে?

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, রাজ্য সরকার জমি হস্তান্তর করলে এবং অন্য পরিকাঠামো গড়ে দিলে তারা হাসপাতাল গড়ার রূপরেখা তৈরির জন্য উপদেষ্টা সংস্থা নিয়োগ করবে। তাদেরই বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর)-এর উপরে নির্ভর করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা দরপত্র চাওয়ার অনুমোদন দেবে। মন্ত্রক সূত্রের খবর, দেশের অন্য প্রান্তে যেখানে এই ধরনের হাসপাতাল তৈরি হয়েছে, সেখানে টার্ন-কি পদ্ধতিতেই ঠিকাদার সংস্থা নিয়োগ করা হয়েছে। সেই নিয়ম অনুযায়ী, বরাত পাওয়ার পর ২৪ থেকে ৩৬ মাসের মধ্যে ওই ঠিকাদার সংস্থা আধুনিক মানের হাসপাতাল গড়ে দেবে। সেখানে ক্যান্টিন-হস্টেল-আবাসন তৈরি থেকে যন্ত্রপাতি সরবরাহ সবই করে বরাতপ্রাপ্ত ওই সংস্থা। ওই সময়ের মধ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রক সংস্থার ডিরেক্টর এবং পরিচালন পর্ষদ গঠন করে দেয়। তার পরে কাজ শুরু হয় হাসপাতালের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

aims kolyani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE