Advertisement
E-Paper

গাড়ির টাকা না মেটানোয় মাতৃযান বন্ধ

মাসের পর মাস ধরে টাকা টাকা মিলছে না। ফলে, চালকদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। ধারে পেট্রোল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে পাম্পগুলিও। এই সব অভিযোগে পুরুলিয়া জেলায় মাতৃযান পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন গাড়ির মালিকেরা। গত ১ জুন থেকে জেলা জুড়ে এই পরিষেবা বন্ধ হয়ে পড়ায় সমস্যায় পড়ছেন প্রত্যন্ত এলাকার প্রসূতিদের পরিজনেরা।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৪ ০১:২০
দাঁড়িয়ে রয়েছে মাতৃযান। হুড়ায় ছবিটি তুলেছেন প্রদীপ মাহাতো।

দাঁড়িয়ে রয়েছে মাতৃযান। হুড়ায় ছবিটি তুলেছেন প্রদীপ মাহাতো।

মাসের পর মাস ধরে টাকা টাকা মিলছে না। ফলে, চালকদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। ধারে পেট্রোল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে পাম্পগুলিও। এই সব অভিযোগে পুরুলিয়া জেলায় মাতৃযান পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন গাড়ির মালিকেরা। গত ১ জুন থেকে জেলা জুড়ে এই পরিষেবা বন্ধ হয়ে পড়ায় সমস্যায় পড়ছেন প্রত্যন্ত এলাকার প্রসূতিদের পরিজনেরা।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে অবশ্য দাবি, মাতৃযান পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। কিছু গাড়ির মালিক বিলে কারচুপি করেছেন বলে অর্থ দফতরের পরীক্ষায় ধরা পড়েছে। তার ফলেই মাতৃযানের টাকা আসতে দেরি হচ্ছে। শীঘ্রই সমস্যা মিটে যাবে আশ্বাস জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যন্ত এলাকার প্রসূতিদের বাড়ি থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে পৌঁছতে এবং প্রসবের পরে আবার বাড়ি পৌঁছে দিতে মাতৃযান পরিষেবা শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের মে মাস থেকে। কোনও প্রসূতির প্রসব বেদনা শুরু হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীরা জেলাসদরের মাতৃযান পরিষেবা কেন্দ্রে ফোন করেন। গাড়ি পৌঁছে যায় প্রসূতির বাড়িতে। নির্দিষ্ট এলাকায় পরিষেবা দেওয়া মাতৃযানের চালকদের ফোন করলেও এই পরিষেবা মেলে। পুরুলিয়া জেলায় মোট ৮২টি মাতৃযান চালু হয়েছিল।

গাড়ির মালিকেরা জানান, এই পরিষেবার জন্য প্রসূতি বা তাঁর পরিবারকে কোনও টাকা দিতে হয় না। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে চুক্তি করে পরিষেবা দেয় মাতৃযানের গাড়িগুলি। দরও বাঁধা রয়েছে। প্রসূতির বাড়ি থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দূরত্ব ১০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে দেড়শো টাকা, ১০ থেকে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে ২৫০ টাকা, ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটারের ক্ষেত্রে ৩৫০ টাকা, ৩০ থেকে ৫৫ কিলোমিটার অবধি ৪৫০ টাকা এবং তার বেশি হলে প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৮ টাকা হারে ভাড়া ধার্য রয়েছে। এই হারে স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে টাকা পান চুক্তিবদ্ধ গাড়ির মালিকেরা। স্বাস্থ্য দফতর সেই টাকা পায় জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন থেকে।

প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা ও গ্রামেগঞ্জে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের মতে, এই পরিষেবা চালু হওয়ায় রাতবিরেতে প্রসূতিদের হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু পুরুলিয়ায় চলতি মাসের গোড়া থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে এই পরিষেবা। মাতৃযানের মালিকদের দাবি, মাসের পর মাস বকেয়া অর্থ না পাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা, গাড়ি মালিক সমীর বিশ্বাস, গৌতম চেলদের ক্ষোভ, “বারবার স্বাস্থ্য দফতরে তাগাদা দিয়েছি। বকেয়া চেয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছি। কিন্তু এখনও টাকা পাইনি।” আর এক গাড়ির মালিক তুহিন মহাপাত্রের কথায়, “এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে পেট্রোল পাম্পে আর ধারে জ্বালানি দিতে চাইছে না। আমরা চালকদের টাকাও মেটাতে পারছি না। কারও এক বছর, কারও সাত-আট মাস করে টাকা বাকি পড়ে রয়েছে। তাই আমরা পরিষেবা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।”

মাতৃযান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চূড়ান্ত দুর্ভোগ হচ্ছে প্রসূতি ও পরিজনদের। যেমন, গত রবিবার মফস্সল থানার সোনাইজুড়ি গ্রামের এক প্রসূতিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য মাতৃযানের খোঁজ করেন তাঁর বাড়ির লোকজন। প্রসূতির খুড়শ্বশুর মুলুরচাঁদ মাহাতো বলেন, “জানতে পারি, মাতৃযান পাওয়া যাবে না। কেন পাওয়া যাবে না তা অবশ্য জানি না। অন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে ওঠার আগেই বউমার প্রসব হয়ে যায় বাড়িতেই।” হুড়ার রখেড়া গ্রামের সঞ্চিতা দাস সোমবার প্রসব বেদনা নিয়ে হুড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হন। মঙ্গলবার চিকিৎসক তাঁকে রেফার করেন। সঞ্চিতাদেবী বলেন, “মাতৃযান পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে বেশি পয়সা দিয়ে গাড়ি করতে হচ্ছে।” একই অভিজ্ঞতা হুড়ার দলদলি গ্রামের অপর্ণা সেনেরও। তাঁর কথায়, “হাসপাতালে আসার জন্য মাতৃযানের খোঁজ করে শুনি, এখন এই গাড়ি চলছে না।”

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ অবশ্য বলেন, “এই পরিষেবা কিছু জায়গায় বন্ধ হয়েছে ঠিকই, তবে সর্বত্র হয়নি। আসলে দু’একটি জায়গায় কোনও কোনও গাড়ির মালিক বিলে কিছু কারচুপি করেছিলেন। তা অর্থ দফতরের পরীক্ষায় ধরা পড়ার পরে টাকা আসতে কিছুটা দেরি হয়েছে। মাতৃযানের মালিকদের বেশ কিছু বকেয়া পড়েছে। তা ওঁরা শীঘ্রই পেয়ে যাবেন।” তিনি আরও জানান, যাঁরা বিলে কারচুপি করেছেন, তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ফের ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট গাড়ির অনুমোদন বাতিল করা হবে।

বিলে কারচুপির অভিযোগ অবশ্য মানেননি গাড়ির মালিক তুহিনবাবুরা। এমন খবর জানা নেই জানিয়ে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “তবে এ জন্য সমস্ত গাড়ির বিল আটকে রাখার কী যুক্তি রয়েছে?” সে প্রশ্নের কোনও সদুত্তর স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে মেলেনি।

prasanta pal purulia ambulance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy