স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে জমে আগাছা। নিজস্ব চিত্র।
দু’বছর ধরে তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে নতুন ভবন, ১০ শয্যার ইনডোর চালু হওয়ার কথা থাকলেও তা এগোয়নি, এমনকী আউটডোরটিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে গত এক বছরে। তাছাড়া চিকিৎসক-নার্স না থাকা, ভবনের বেহাল দশা এসব তো রয়েইছে। এককথায় রায়নার সুবলদহ গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ধুঁকছে।
বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জন্মভিটে সুবলদহে প্রতি বছর তাঁর জন্মদিন ও মৃত্যুদিনে জন সমাগম হয়। বাইরের দেশ থেকেও লোক আসেন। অথচ গ্রামের একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিই বেহাল। গ্রামবাসীদের দাবি, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু করতে জেলাশাসক থেকে সিএমওএইচ, বিডিও, রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রত্যেককেই একাধিক চিঠি দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন বা আউটডোর কোনওটারই তালা খোলেনি। তবে এমন হাল শুধু সুবলদহের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নয়, জেলার বহু গ্রামেই চিকিৎসক না থাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।
রায়না ২ ব্লকের ভারপ্রাপ্ত বিএমওএইচ তথা মাধবডিহি ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার উদয় দাস বলেন, “এই ব্লকে মোট পাঁচটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে একমাত্র গোতানের কেন্দ্রটি চালু রয়েছে। ওখানে মেডিক্যাল অফিসার ও নার্স রয়েছেন।” সুবলদহ ছাড়া বিনোদপুর, কাঁইতি ও পাঁইটা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিও মেডিক্যাল অফিসারের অভাবে বন্ধ। উদয়বাবু বলেন, “যাঁরা ওই চারটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিযুক্ত হয়েছিলেন, তাঁরা নানা সমস্যায়, কেউ আবার উচ্চতর শিক্ষালাভের জন্য চলে গিয়েছেন। ফলে সমস্ত জায়গায় আউটডোরও বন্ধ।”
সুবলদহ গ্রামের বাসিন্দা মহাতাব সেন সাহানা, প্রভাস সাঁতরাদের অভিযোগ, “সুবলদহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর আশপাশের সাত থেকে আটটি গ্রামের প্রায় লাখখানেক বাসিন্দা নির্ভরশীল। দু’বছর ধরে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন, চিকিৎসকের কোয়ার্টার ইত্যাদি তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। অথচ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ। বাধ্য হয়ে বাসিন্দাদের প্রায় ১৮-২০ কিলোমিটার দূরের মাধবডিবি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। আবার রাতবিরেতে অতদূরে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বিপাকে পড়ছেন রোগীরা।”
ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা মনসুর সাহানাও বলেন, “আগে নতুন ভবনের পাশে পুরনো ভবনে আউটডোর চালু ছিল। এক চিকিৎসক এসে রোগীদের পরীক্ষা করে ওষুধপত্র লিখে দিতেন। কিন্তু বছরখানেক হল সেই চিকিৎসকের আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে আউটডোরও।” বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, পুরনো ভবনটির মেঝে, দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। অবিলম্বে নতুন ভবন চালু না হলে পুরো ভবনই ভেঙে পড়বে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চিঠি লিখে বর্ধমান জেলা রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য, তথা জামালপুরের বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামানিককে জানিয়েছিলেন যে শ্যামসুন্দর ও সুবলদহে যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপনের কথা ছিল, তা তৈরি হয়ে গিয়েছে। যদি রাজ্য হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড ওই দু’জায়গায় চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ করতে পারে তাহলে ২-৩ মাসের মধ্যেই ওই দুই স্বাস্থ্যকেন্দ্র কাজ শুরু করতে পারবে।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পরে ছ’মাস পেরিয়ে গেলেও কাজ শুরু হল না কেন? জামালপুরের বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামানিক বলেন, “কাজ চালুর আগে তো উদ্বোধন হতে হবে। দুটি ভবনের উদ্বোধনই করা হয়ে ওঠেনি এখনও।” তাঁর আশ্বাস, “শ্যামসুন্দরের ক্ষেত্রে কি হবে তা বলতে পারছি না। তবে সুবলদহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করার বিষয়ে স্বাস্থ্যভবন থেকে চিঠি এসেছে। কিছুদিনের মধ্যেই সেটা কাজ শুরু করবে।”
বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণবকুমার রায় বলেন, “শুধু সুবলদহ কেন, জেলার বেশ কয়েকটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই মুহুর্তে চিকিৎসক নেই। ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।” তবে চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ হলে পুজোর আগে সুবলদহের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy