চিকিৎসক ছাড়াই একটা দিন কেটে গেল কালীগঞ্জ পানিঘাটা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। দুপুরবেলা ছিলেন না কোনও নার্সও। শুধু দেখা গিয়েছে রোগী এবং তাঁদের পরিবারের হেনস্থার ছবি।
পানিঘাটা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাকুল্যে দু’জন চিকিৎসক। তার মধ্যে একজন দিন কয়েকের ছুটি নিয়ে কলকাতায় গিয়েছেন। অপর জনের ইতিমধ্যেই বদলির নির্দেশ এসেছে, তবু তাঁরই আসার কথা ছিল রবিবার। কিন্তু তিনি আসেননি। আশপাশের গোটা দশেক গ্রামের একমাত্র ভরসা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেটি ২০ শয্যা বিশিষ্ট। অথচ ন্যূনতম পরিষেবা পাওয়া গেল না। নিদেনপক্ষে একজন ফার্মাসিস্টেরও দেখা মেলেনি এ দিন। এক চতুর্থশ্রেণির মহিলা কর্মী জানালেন, রবিবার ফার্মাসিস্ট আসেন না।
পরিবর্তে দেখা গেল প্রায়ান্ধকার একটি ঘরের নড়বড়ে চৌকির উপর কিছু ওষুধ নিয়ে বসে রয়েছেন আর এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী লালন মণ্ডল। চিকিৎসকের কথা উঠতেই তিনি বললেন, ‘‘চিকিৎসক ছুটিতে তাই আমিই সর্দি-জ্বরের, টুকটাক সমস্যার ওষুধ দিচ্ছি।’’
এ দিকে চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে এ দিন পলাশি, হাটগাছা, ছোট চাঁদঘর, বড় চাঁদঘর, রায়পুর, উত্তরপাড়া, দহাপাড়া, গোবিন্দপুর, হাটগোবিন্দপুর, পাগলাচণ্ডী প্রভৃতি এলাকার লোকজন নানা শারীরিক সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এসেও ফিরে গেলেন বাধ্য হয়ে। কেউ আবার পাশের দেবগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটলেন রোগীকে নিয়ে। কেউ বা গেলেন চিকিৎসকের চেম্বারে। পলাশির গোবিন্দপুরের বাসিন্দা মিজানুর শেখ এ দিন বেলা এগারোটা নাগাদ ভাইকে নিয়ে এসেছিলেন পানিঘাটার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তিনি জানালেন, দিন দু’য়েক ধরে তাঁর ভাই জ্বরে ভুগছে। চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে তিনি দেবগ্রামে কোনও চিকিৎসকের চেম্বারে যাওয়ার কথা ভাবছেন।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র এক কর্মী বললেন, ‘‘শনিবার রাতে শেষবারের মতো এসে চিকিৎসক পুরুষ ও মহিলা বিভাগের সমস্ত রোগীদের ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। এখন কোনও রোগী এলে আমরা কৃষ্ণনগর ও আশপাশের কোনও হাসপাতালে যেতে পরামর্শ দিচ্ছি।’’ দুপুর দেড়টা নাগাদ গাড়ির ধাক্কায় জখম স্থানীয় চাঁপাই গ্রামের বাসিন্দা মইদুল ইসলামকে পাড়ার লোকজন হাসপাতালে আসেন। চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে মইদুলের পড়শি আব্দুল হামিদ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। দু’পক্ষের খানিক কথা কাটাকাটির পর হাসপাতালের এক কর্মী অনভ্যস্ত হাতে মইদুলের কপালে সেলাই দেন। কিন্তু কোনও ওষুধ দেওয়ার সাহস দেখাননি।
একটা গোটা দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্র চিকিৎসক শূন্য থাকা প্রসঙ্গে জেলার স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি সিএমওএইচ (থ্রি) ভবানী দাস বলেন, ‘‘ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন চিকিৎসকের বাবা অসুস্থ। তিনি ছুটিতে আছেন। অপরজনকে কাজ চালানোর জন্য বলা হয়েছিল। কেন তিনি রবিবারে হাসপাতালে এলেন না তা খতিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy