Advertisement
০৫ মে ২০২৪
আর জি কর

চালু হল রাজ্যের প্রথম স্লিপ ল্যাব

শুরু করেছিল এসএসকেএম। কিন্তু হাতেকলমে পরিষেবা চালু করে দিয়ে এক ধাপ এগিয়ে গেল আর জি কর। গত শনিবার থেকেই আর জি করে চালু হয়েছে রাজ্যের প্রথম সরকারি ‘স্লিপ ল্যাব’। পলিসমনোগ্রাফি যন্ত্র বসিয়ে শুরু হয়েছে এই পরিষেবা। ফলে ঘুম সংক্রান্ত অসুখ নিয়ে সচেতনতা ও চিকিৎসা দুই-ই বাড়বে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য দফতর।

পলিসমনোগ্রাফি যন্ত্র।

পলিসমনোগ্রাফি যন্ত্র।

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৪ ০২:৪০
Share: Save:

শুরু করেছিল এসএসকেএম। কিন্তু হাতেকলমে পরিষেবা চালু করে দিয়ে এক ধাপ এগিয়ে গেল আর জি কর।

গত শনিবার থেকেই আর জি করে চালু হয়েছে রাজ্যের প্রথম সরকারি ‘স্লিপ ল্যাব’। পলিসমনোগ্রাফি যন্ত্র বসিয়ে শুরু হয়েছে এই পরিষেবা। ফলে ঘুম সংক্রান্ত অসুখ নিয়ে সচেতনতা ও চিকিৎসা দুই-ই বাড়বে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য দফতর।

মাঝরাতে আচমকা ঘুম ভেঙে উঠে বসত বছর আটেকের সৈকত। ওর মনে হত, কেউ ওর গলা টিপে ধরছে। প্রথমে সৈকতের মা সুমিতাদেবী ভেবেছিলেন, খারাপ স্বপ্ন দেখে ভয় পায় ছেলে। পরে জানা গেল, সৈকত ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’র শিকার। রাতে ঘুমের মধ্যে অস্বাভাবিক আওয়াজ করে নাক ডাকতেন বছর পঁয়তাল্লিশের অণিমাদেবী। নাক ডাকার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যেত নিজেরই। জানা যায়, তাঁরও ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, নাক ও গলার ভিতর দিয়ে শ্বাসনালীর প্রথম অংশটি পেশীবহুল হয়। ঘুমের সময়ে দেহের সমস্ত পেশী শিথিল হয়ে যায়। তখন শ্বাসনালীর ওই অংশটিও সঙ্কীর্ণ হয়ে যায়। তবে শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যাহত হয় না। মোটা মানুষদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মেদের কারণে ওই অংশটি এমনিতেই সঙ্কীর্ণ থাকে। তাই তাঁদের ঘুমের সময়ে ওই পথ আরও সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা দেয়। এর প্রভাব পড়ে হৃদ্যন্ত্রে। হৃদ্যন্ত্র তখন দ্রুত তালে চলতে থাকে, রক্তচাপ ওঠানামা করায় ঘুম ভেঙে যায়। একেই বলে ‘অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’ (ওএসএ)। মধ্যবয়স্ক ও প্রৌঢ়দের মধ্যেই এর প্রকোপ বেশি।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, বেসরকারি উদ্যোগে কলকাতায় কয়েকটি স্লিপ ক্লিনিক গড়ে উঠলেও জেলা স্তরে এই রোগ সম্পকের্র্ তেমন সচেতনতা নেই। সরকারি স্তরে যদিও প্রথম স্লিপ ল্যাবটি গড়ে তোলার কথা ছিল এসএসকেএম-এ। কিন্তু সরকারি প্রচেষ্টায় স্লিপ

ল্যাবের সূচনা ঘটল আর জি কর-এ। যেখানে সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে ঘুম নিয়ে পুরোদস্তুর চিকিৎসা চলবে বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়।

বক্ষবিশেষজ্ঞ অরুণাভ দত্তচৌধুরী বলেন, “প্রথমে কিছু প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে এপওয়ার্থ স্লিপিনেস স্কেল-এ রোগীর অবস্থা মাপা হয়। তার পরে চিকিৎসক মনে করলে রোগীকে ঘুমের মধ্যে পলিসমনোগ্রাফি যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এই যন্ত্রেই ধরা পড়ে রোগী স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত কি না। এ ছাড়াও, চিকিৎসা পদ্ধতির একটি ধাপ সি-প্যাপের মাত্রা কতটা দেওয়া হবে সেটাও নির্ধারণ করে এই যন্ত্র। প্রয়োজনে ওষুধ অথবা অস্ত্রোপচার করতে হয়।” চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের আশঙ্কা থাকে। ঠিক মতো ঘুম না হওয়ায় সারা দিন ঘুম-ঘুম ভাব, ভুলে যাওয়া, বিরক্তি, কর্মক্ষমতা হ্রাস, যৌনক্ষমতা হ্রাস এবং মানসিক অবসাদ তৈরি হয়। টনসিল বড় থাকলে ছোটদের ক্ষেত্রেও এই রোগ হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে ঘুমের মধ্যে শ্বাস আটকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sleep lab r g kar hospital jayati raha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE