Advertisement
E-Paper

ছানি কাটাতে এসে পঞ্জাবে দৃষ্টিহারা ৬০

এক মাসও পেরোয়নি। ফের চিকিৎসা-বিপর্যয়। ছত্তীসগঢ়, ওড়িশার পর এ বার পঞ্জাব। বিনা মূল্যে চক্ষুপরীক্ষা শিবিরে ছানি কাটাতে গিয়ে দৃষ্টিশক্তিই হারিয়ে ফেললেন ষাটোর্দ্ধ ৬০ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। অভিযুক্ত চক্ষু চিকিৎসক বিবেক অরোরাকে জালন্ধর থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৭
চক্ষুপরীক্ষা শিবিরে ছানি কাটাতে গিয়ে যে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, তাঁদের কয়েক জন। শুক্রবার অমৃতসরে। ছবি: পিটিআই।

চক্ষুপরীক্ষা শিবিরে ছানি কাটাতে গিয়ে যে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, তাঁদের কয়েক জন। শুক্রবার অমৃতসরে। ছবি: পিটিআই।

এক মাসও পেরোয়নি। ফের চিকিৎসা-বিপর্যয়।

ছত্তীসগঢ়, ওড়িশার পর এ বার পঞ্জাব। বিনা মূল্যে চক্ষুপরীক্ষা শিবিরে ছানি কাটাতে গিয়ে দৃষ্টিশক্তিই হারিয়ে ফেললেন ষাটোর্দ্ধ ৬০ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। অভিযুক্ত চক্ষু চিকিৎসক বিবেক অরোরাকে জালন্ধর থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মথুরার যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই চক্ষুপরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করেছিল এবং নভেম্বরের ৫-১৬ তারিখের মধ্যে যে বেসরকারি হাসপাতালটিতে অস্ত্রোপচারগুলি হয়, তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। ঘটনায় পঞ্জাব সরকারের রিপোর্ট তলব করেছে কেন্দ্র। শিবিরের উদ্যোক্তা মনোজ সিংহকেও আটক করেছে পুলিশ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডা এ দিন বলেন, “এ বিষয়ে পঞ্জাব সরকারের রিপোর্ট চেয়েছি। জানতে পেরেছি, রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়াই ওই শিবিরের আয়োজন করেছিল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পাশাপাশি নড্ডা এ-ও বলেছেন, প্রয়োজনে এ বিষয়ে রাজ্যকে সব রকম সাহায্য করবে কেন্দ্র।

নভেম্বরের প্রথমে পঞ্জাবের গুরদাসপুর জেলার ঘুমানে ওই চক্ষুপরীক্ষা শিবিরে অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন ৬২ জন দরিদ্র বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। ২৯ নভেম্বর তাঁদের চোখের পট্টি খোলার কথা ছিল। চোখ থেকে পট্টি সরতেই তাঁরা টের পান, সামনে সব কিছু অন্ধকার। কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে বৃহস্পতিবার। দৃষ্টি হারানো ৬০ জনের মধ্যে ১৫ জন অমৃতসরের। তাঁরাই অভিযোগ জানান স্থানীয় ডেপুটি কমিশনার রবি ভগতের কাছে। অভিযুক্তদের ধরার জন্য তদন্তের নির্দেশ দেন রবি। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার কথাও বলেন। তদন্তে জানা যায়, রাতের অন্ধকারে চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অস্ত্রোপচারগুলি করা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর ভুল ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করছেন কেউ কেউ। ওই চক্ষুপরীক্ষা শিবিরেই ছানি কাটা হয় রঞ্জিত কৌর নামের এক তরুণীর মায়ের। তিনি জানালেন, অস্ত্রোপচারের পর থেকেই চোখে ব্যথা হচ্ছিল মায়ের। বারবার সে কথা জানালেও কেউ কর্ণপাত করেননি। রঞ্জিতের আশঙ্কা, অস্ত্রোপচারের পরে সংক্রমণ ছড়িয়েই হয়তো দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন তাঁর মা-সহ ৬০ জন।

ইতিমধ্যেই ঘটনায় উচ্চ-পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদল। অনুমতি ছাড়া এ ধরনের স্বাস্থ্য শিবির আয়োজনের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিয়েছেন তিনি। স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিব ভিনি মহাজনকে ব্যক্তিগত ভাবে তদন্ত খতিয়ে দেখতে বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই খুব শিগগির ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছেন মহাজন। ঘটনায় যাঁরা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন তাঁদের পরিবারপিছু এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রকাশ। বিনামূল্যে তাঁদের চিকিৎসার কথাও জানিয়েছেন।

গত মাসেই ছত্তীসগঢ়ের বিলাসপুরে সরকারি শিবিরে বন্ধ্যাকরণের জন্য অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল ১৩ মহিলার। ময়নাতদন্তে ধরা পড়ে, অস্ত্রোপচারের পর কোনও ভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল ওই মহিলাদের শরীরে। খাওয়ানো হয়েছিল নিম্ন মানের ওষুধ। ঘটনায় অভিযুক্ত শল্য চিকিৎসককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার এক দিনের মাথায় বিলাসপুরেই ফের চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। সরকারি শিবিরে বন্ধ্যাকরণের অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ১৬ জন। তার সপ্তাহখানেক পরে ওড়িশার অঙ্গুলে বন্ধ্যাকরণ শিবিরে সাইকেল পাম্প ব্যবহার করে যোনিমুখ প্রসারণ করার অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার তদন্ত চলছে এখনও। তার মধ্যেই সামনে এল পঞ্জাবের চিকিৎসা-বিভ্রাট। দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে বিনামূল্যে অস্ত্রোপচারের খেসারত দিলেন ৬০ জন।

বছর ষাটের প্রৌঢ় যশবন্ত সিংহ। দুনিয়াটা আরও স্বচ্ছ দেখতে পাওয়ার আশায় গুরদাসপুরের ওই শিবিরে গিয়েছিলেন তিনিও। দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে এখন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আক্ষেপের সুরে বললেন, “আমার সামনে সব কিছুই এখন অন্ধকার। দরিদ্র পরিবার আমার। জানি না এর পর কী হবে।”

gurdaspur eye camp tragedy punjab
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy