Advertisement
E-Paper

নিকাশির জমা জলে ভাসছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র

সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র না গরু-মোষের খোঁয়াড়। বাইরে থেকে একঝলক দেখলে ধুলিয়ানের অনুপনগর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ঠাহর করা কঠিন। পূতি-দুর্গন্ধময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনেই কচুরিপানা ভর্তি জলাশয়। চিকিত্‌সক, নার্স ও কর্মীদের আবাসন পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে দীর্ঘ দিন। বছরে কম করে ছ’মাস হাঁটু জলে ডুবে থাকে গোটা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিকেয় উঠেছে স্বাস্থ্য পরিষেবা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২১
ধুলিয়ান স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিত্‌সক আবাসন পরিণত হয়েছে খাটালে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

ধুলিয়ান স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিত্‌সক আবাসন পরিণত হয়েছে খাটালে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র না গরু-মোষের খোঁয়াড়। বাইরে থেকে একঝলক দেখলে ধুলিয়ানের অনুপনগর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ঠাহর করা কঠিন। পূতি-দুর্গন্ধময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনেই কচুরিপানা ভর্তি জলাশয়। চিকিত্‌সক, নার্স ও কর্মীদের আবাসন পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে দীর্ঘ দিন। বছরে কম করে ছ’মাস হাঁটু জলে ডুবে থাকে গোটা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিকেয় উঠেছে স্বাস্থ্য পরিষেবা।

পরিকাঠামো নেই। অথচ ১৫ শয্যা থেকে বাড়িয়ে ৩০ শয্যা করা হয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে। ৩০ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে ৬৫ জন রোগী ভর্তি হন। কখনও কখনও রোগীর সংখ্যা ৯০ পেরিয়ে যায়। দৈনিক প্রসবের হার ২৮। এই বছর এপ্রিল থেকে এখনও পর্যন্ত ৫৫০০ শিশুর স্বাভাবিক জন্ম হয়েছে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে (পাশের দুই ব্লক সুতি ২ ও ফরাক্কায় এই সংখ্যাটা এখনও এক হাজার ছাড়ায়নি)। এর আগেও জেলার মধ্যে প্রসব সাফল্যে পুরস্কৃত হয়েছে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। অথচ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়নে নজর নেই কারও।

সবচেয়ে বিরক্তিকর স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে বছরভর জমে থাকা নিকাশির জল। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির জমি অনেকটাই নিচু। চারিদিকটা উঁচু। আগে সেভাবে বসতি ছিল না। ফলে জল জমত কম। আর জমলেও তা পাম্প চালিয়ে বের করা সম্ভব হত। এখন পাম্প চলে না বলে সারা বছরই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জল থই থই অবস্থা। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সজল পণ্ডিত আফশোস করে বলেন, “পুরসভা থেকে জমা জল বার করার জন্য কোনও উদ্যোগ নেই। আশপাশের লোকজন শৌচকার্য সারার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করছেন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চত্বরকে।”

ধুলিয়ানের উপপুরপ্রধান দিলীপ সরকার অবশ্য জানান, আশপাশের বাসিন্দাদের আপত্তিতেই পাম্প চালিয়ে জল বার করা হয় না। তিনি বলেন, “পরিকল্পনাহীন ভাবে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তৈরি হওয়ায় এখন তার ফল ভুগতে হচ্ছে সকলকে। যে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিজেই অস্বাস্থ্যকর, জরাজীর্ণ, সেখানে রোগীরা পরিষেবা পাবে কী করে?”

এদিকে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসন জবরদখল করে গরু-মোষ রেখে দিয়েছে কিছু লোক। বিএমওএইচ সজলবাবু বলেন, “বার বার স্বাস্থ্য দফতর থেকে সামশেরগঞ্জ থানায় পুলিশকে জানানো হয়েছে জবরদখল সরাতে। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। চিকিত্‌সকরা তো আর জবরদখলকারীদের সঙ্গে মারামারি করতে যাবে না। স্থানীয় মানুষজন স্বাস্থ্য পরিষেবা নিচ্ছেন, অথচ এটাকে রক্ষার তাগিদ বা দায় নেই কারও।” অসামাজিক লোকের আনাগোনায় সন্ধের পর পরিস্থিতি হয়ে ওঠে আরও খারাপ। সেই পরিবেশে থাকা যায় না বলে চিকিত্‌সক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা কেউই থাকতে পারেন না স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসনে।

একটাই আশার কথা। সম্প্রতি জেলার প্রশাসনিক কর্তারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল নিজের চোখে দেখে গিয়েছেন। জেলাশাসক আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নয়নে আর্থিক বরাদ্দ মঞ্জুরির। সেই মতো প্রায় দেড় কোটি টাকার একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।

কিন্তু সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে সব উদ্যোগই তো অর্থহীন হয়ে যাবে।

সে কথা মেনে নিয়ে সজলবাবু বলেন, “পুরপ্রধান হাল ফেরানোয় আগ্রহ প্রকাশ করায় তাঁকে লিখিত ভাবে সমস্যাগুলি জানানো হয়েছে। আশা করি পুরসভার হস্তক্ষেপে নিকাশি সমস্যাও দূর হবে অচিরে।”

drainage drain over flow health clinic dhuliyan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy