Advertisement
০৫ মে ২০২৪
এসএসকেএম

পিছিয়েই যাচ্ছে অস্ত্রোপচার, হাপিত্যেশে হাজার রোগী

যথেষ্ট পরিকাঠামোর অভাব। অপ্রতুল ওটি-যন্ত্রপাতি, ঘাটতি চতুর্থ শ্রেণির কর্মী-নার্সের। সঙ্গে বিভিন্ন জায়গা থেকে রেফারের ঢল। যার নিট ফল, রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি এসএসকেএম হাসপাতালের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় থাকা রোগীর সংখ্যা ঠেকেছে হাজারের কাছাকাছি। এঁদের প্রত্যেকেরই যত দ্রুত সম্ভব অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, জানিয়েছেন চিকিৎসকেরাই। অথচ এঁদেরকেই হয় ভর্তি হয়ে বা ভর্তির লাইনে থেকে মাসের পর মাস দিন গুনতে হচ্ছে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০৬
Share: Save:

যথেষ্ট পরিকাঠামোর অভাব। অপ্রতুল ওটি-যন্ত্রপাতি, ঘাটতি চতুর্থ শ্রেণির কর্মী-নার্সের। সঙ্গে বিভিন্ন জায়গা থেকে রেফারের ঢল। যার নিট ফল, রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি এসএসকেএম হাসপাতালের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় থাকা রোগীর সংখ্যা ঠেকেছে হাজারের কাছাকাছি।

এঁদের প্রত্যেকেরই যত দ্রুত সম্ভব অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, জানিয়েছেন চিকিৎসকেরাই। অথচ এঁদেরকেই হয় ভর্তি হয়ে বা ভর্তির লাইনে থেকে মাসের পর মাস দিন গুনতে হচ্ছে। এক বার করে অস্ত্রোপচারের ডেট দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের দিন কয়েক আগে বা নির্ধারিত দিন সকালে কিছু কারণ দেখিয়ে তা বাতিল করে ফের দু’সপ্তাহ থেকে এক মাস পরে নতুন ডেট দেওয়া হচ্ছে। এই ভাবে দিন যাচ্ছে। রোগ বেড়ে যাচ্ছে, রোগী মরণাপন্ন হচ্ছেন, কিন্তু অপেক্ষার অবসান হচ্ছে না।

যে পাঁচটি বিভাগে অস্ত্রোপচারে সবচেয়ে বেশি দেরি হচ্ছে বা কেস জমে যাচ্ছে সেগুলি হল প্লাস্টিক সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, জেনারেল সার্জারি, কার্ডিওথোরাসিক ও ইউরোলজি। সম্প্রতি একাধিক অভিযোগ পেয়ে ওই বিভাগগুলিতে জমে থাকা অস্ত্রোপচারের তালিকা তৈরি করেছেন কর্তৃপক্ষ। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্লাস্টিক সার্জারিতে ১৩০, কার্ডিওথোরাসিকে ১৫০, ইউরোলজিতে ১২০, অর্থোপেডিক্সে ৩৫০ ও জেনারেল সার্জারিতে ২২০ জন রোগী অপেক্ষমাণ। এই পাঁচ বিভাগকেই এর কারণ দর্শাতে নির্দেশ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

এসএসকেএমের অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্র জানান, এই বিভাগগুলিতে এক-এক জন রোগী ভর্তি হয়ে এক-দেড় মাস রয়ে যাচ্ছেন, প্রতি সপ্তাহে তাঁদের অস্ত্রোপচারের ডেট দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা বাতিল করে পিছিয়ে দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কখনও বলা হচ্ছে যন্ত্র কাজ করছে না বা ওটি জীবাণুমুক্ত করার জন্য বন্ধ অথবা লোক কম। আবার অন্য দিক থেকে, অস্ত্রোপচার হওয়ার পরেও অনেক রোগী এক-দেড় মাস শয্যা আটকে থেকে যাচ্ছেন কারও সুপারিশে। কিন্তু কারণ দেখানো হচ্ছে রোগী দুর্বল, বাড়িতে দেখার কেউ নেই বা বায়োপসি রিপোর্ট আসেনি। প্রদীপবাবু বলেন, “বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়েছি। আমার অনুমান, কিছু চিকিৎসক কম পরিশ্রম করতে চাইছেন বলে বেশি অস্ত্রোপচার এড়াচ্ছেন। স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে পরামর্শ করে ওই পাঁচ বিভাগকে আমি ‘বেড অকুপ্যান্সি অডিট’ রিপোর্ট জমা দিতে বলেছি। অর্থাৎ, ওদের ক’টা বেডে কত জন অস্ত্রোপচারের রোগী ক’দিন থাকছেন, অবিলম্বে তা সবিস্তার জানাতে হবে।”

কেন অস্ত্রোপচারে এত দেরি হচ্ছে ওই পাঁচ বিভাগে? কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের প্রধান শুভঙ্কর ভট্টাচার্য জানান, তাঁদের শয্যা সংখ্যা ৭০। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে কয়েকশো অস্ত্রোপচারের রোগী আউটডোর ও জরুরি বিভাগে আসেন। বিভাগের ওটি-র সংখ্যা তিন। একটিতে শুধু ক্যানসার, সিস্ট, টিউমার, ভাস্কুলার সমস্যার মতো নন-কার্ডিয়াক অস্ত্রোপচার হয়। বাকি দু’টিতে সপ্তাহে ১১টির বেশি কার্ডিয়াক অস্ত্রোপচার করা যায় না। কারণ সেই পরিমাণ চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, নার্স নেই।

তা ছাড়া রিকভারি বেডও মাত্র ২৪টি। অস্ত্রোপচারের পরে তিন-পাঁচ দিন রোগীকে রিকভারি বেডে রাখতে হয়। এই বেড খালি না থাকলে অস্ত্রোপচারের রোগী ভর্তি করা যায় না। শুভঙ্করবাবুর আরও যুক্তি, দেড় বছরেও শিশুসাথী প্রকল্পের অন্তর্গত শিশুদের হার্ট অপারেশনের আলাদা ওটি চালু হয়নি। তাই সপ্তাহে ১১টি অপারেশন হলে অন্তত ৪টি শিশুসাথী-কেস ওই দু’টি ওটিতেই ভাগ করে করতে হয়। স্বাভাবিক ভাবে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

অর্থোপেডিক্সের চিকিৎসকেদের যুক্তি, কলকাতা ও জেলার প্রায় সব হাসপাতাল এমনকী, মেডিক্যাল কলেজগুলি থেকেও অস্ত্রোপচারের কেস পিজিতে রেফার করা হয়। এমনিতেই হাড়ের অস্ত্রোপচারের পরে রোগীর সুস্থ হতে সময় লাগে। তাই নতুন অস্ত্রোপচারের কেস ভর্তি নেওয়া যায় না। ইউরোলজির প্রধান মলয় বেরা ব্যাখ্যা দেন, এনআরএস ছাড়া অন্য মেডিক্যাল কলেজ ইউরোলজির অস্ত্রোপচারের কেস ভর্তি নিতেই চায় না। সব অস্ত্রোপচারের রোগী এসএসকেএমে ভিড় করেন। অথচ এখানে শয্যা মাত্র ৪৫। মেজর ওটি রয়েছে দু’টি। কিডনি স্টোন, কিডনি ক্যানসারের পাশাপাশি ওই দু’টির মধ্যেই কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হয়। তাঁর কথায়, “যত দিন না আমাদের নতুন ভবন চালু হচ্ছে, এ সমস্যা থেকেই যাবে।”

প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তিবর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সব অস্ত্রোপচারের কেস সবাই পিজিতে পাঠায়। আমাদের এক-এক জন সার্জনের আন্ডারে দিনে ১৩-১৪ জন করে ভর্তি হন। কিন্তু অস্ত্রোপচার সম্ভব হয় মাত্র ৪-৫ জনের। কারণ ওটি কম। এই ভাবে প্রতিদিন রোগী বেড়ে যায়।” সার্জারি বিভাগের প্রধান বিতান চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “এমনিতেই পরিকাঠামোর অভাবে কিছু কেস জমে থাকে। তার উপরে আমি ও বিভাগের কয়েক জন সার্জন হায়দরাবাদে কনফারেন্সে এসেছি। রোগীদের জানিয়ে এসেছিলাম, এই সময়ে বড় অস্ত্রোপচার হবে না। অনেককে তাই একটু অপেক্ষা করতে হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sskm parijat bandopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE