Advertisement
E-Paper

পরিকাঠামো নেই, স্বাস্থ্যবিমা চালুর তোড়জোড়

প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। গ্রামীণ হাসপাতাল, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় চিকিত্‌সক-কর্মীর সংখ্যাও কম। ঠিক মতো পরিষেবাও পান না রোগীরা। পরিকাঠামোর ব্যবস্থা না করেই পশ্চিম মেদিনীপুরের আরও ২১টি গ্রামীণ হাসপাতালে, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা প্রকল্প চালু হতে চলেছে। শীঘ্রই এই সব প্রতিষ্ঠান থেকে বিমার সুবিধা মিলবে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, এর ফলে গরিব মানুষেরাই উপকৃত হবেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫৬

প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। গ্রামীণ হাসপাতাল, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় চিকিত্‌সক-কর্মীর সংখ্যাও কম। ঠিক মতো পরিষেবাও পান না রোগীরা।

পরিকাঠামোর ব্যবস্থা না করেই পশ্চিম মেদিনীপুরের আরও ২১টি গ্রামীণ হাসপাতালে, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা প্রকল্প চালু হতে চলেছে। শীঘ্রই এই সব প্রতিষ্ঠান থেকে বিমার সুবিধা মিলবে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, এর ফলে গরিব মানুষেরাই উপকৃত হবেন। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “আরও ২১টি গ্রামীণ হাসপাতাল-ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বাস্থ্য বিমা যোজনা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

এই প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসার (সরকারি হাসপাতালসমূহ) তথা জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারঙ্গি বলেন, “এরফলে প্রত্যন্ত এলাকার রোগীদের যেমন সুবিধে হবে, তেমন সংশ্লিষ্ট গ্রামীণ হাসপাতাল এবং ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রও উপকৃত হবে। কারণ, এজেন্সির কাছ থেকে যে পরিমাণ অর্থ পাওয়া যাবে, তা দিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ করা যেতে পারে। ওই অর্থ রোগী কল্যাণ সমিতির অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে।”

পরিষেবা উন্নত না করে বিমা চালু করলে কী সুবিধা হবে?

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গ্রামীণ হাসপাতালগুলোয় ৫০ শতাংশেরও বেশি পদ শূন্য। ফলে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র হোক কিংবা গ্রামীণ হাসপাতাল সব ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগীদের। যে সব প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১০টি করে শয্যা রয়েছে, এমন স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও চিকিত্‌সকের দেখা মেলে না। বড় জোর সপ্তাহে দু’একদিন সেই সব জায়গায় চিকিত্‌সকেরা যান। বাকি ক্ষেত্রে ভরসা ফার্মাসিস্টরাই। ফলে সামান্য রোগের ক্ষেত্রেও রোগীদের অন্যত্র ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়। একইভাবে, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা গ্রামীণ হাসপাতালে রোগীদের ‘রেফার’ করা হয়। সেখানেও অবস্থাটা একই রকম। যেখানে ১০-১২ জন চিকিত্‌সক থাকার কথা সেখানে বড় জোর ৩-৪ জন রয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান থেকেই তা স্পষ্ট। জেলায় এই সব গ্রামীণ হাসপাতালগুলোয় অনুমোদিত চিকিত্‌সকের সংখ্যা ২০২ জন। কিন্তু বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ১০০ জন। অর্থাত্‌ ১০২ টি পদ শূন্য! প্রসূতি বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিত্‌সকের পদও শূন্য। শূন্য একাধিক অ্যানাথেটিস্টের পদও। ফলে অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো থাকলেও তা ব্যবহার করা যায় না। ফলে রোগীদের ‘রেফার’ করাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কেন পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হচ্ছে না? গিরীশচন্দ্রবাবু বলেন, “প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলেই স্বাস্থ্য বিমা চালু করা হবে।” জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, “চিকিত্‌সক- কর্মীর সংখ্যা কম বলে কোনও হাসপাতালে স্বাস্থ্য বিমা চালু হবে না, এটা তো হতে পারে না। গ্রামীণ হাসপাতাল কিংবা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোয় পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। থাকবেই। সব সমস্যা এখনই কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব। তার মধ্যেই কাজ করতে হবে। পরিকাঠামোর উন্নতির সব চেষ্টা চলছে।”

পশ্চিম মেদিনীপুরে সব মিলিয়ে ২৩টি গ্রামীণ হাসপাতাল, ৬টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। আগেই সবং, বেলদা, চন্দ্রকোনা, গড়বেতা, কেশিয়াড়ি, খড়িকামাথানি, বেলপাহাড়ি-সহ ৮টি গ্রামীণ হাসপাতালে স্বাস্থ্য বিমা চালু হয়েছে। এ বার বাকি ১৫টি গ্রামীণ হাসপাতাল এবং ৬টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এই প্রকল্প চালু হবে। আগে জেলা হাসপাতাল এবং মহকুমা হাসপাতাল থেকেই স্বাস্থ্য বিমার সুবিধে মিলত। গরিব মানুষ অর্থাত্‌, দারিদ্র্যসীমা রেখার নীচের বসবাসকারীরাই রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার সুবিধে পেতে পারেন। তবে, আগে তাঁদের কার্ড করতে হবে। একটি পরিবারে একটিই কার্ড হয়। এতে পরিবারের ৫ জন সদস্য বিমার আওতায় আসেন। বছরে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় মেলে। পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ পরিবার প্রকল্পের আওতায় রয়েছে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, আগে থেকেই সমস্ত গ্রামীণ হাসপাতাল এবং ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ শুরু হয়। কারণ, উপভোক্তারা চাইছিলেন, ব্লকস্তরেও যেন প্রকল্পের সুফল মেলে। সেই মতো রাজ্যের মাধ্যমে কেন্দ্রে প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রস্তাব মঞ্জুরও হয়। প্রকল্প চালু করার আগে সংশ্লিষ্ট গ্রামীণ হাসপাতাল- স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কয়েকজন কর্মীকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। হাতেকলমে শেখানো হবে, কী ভাবে কাজ এগোবে, রোগীদের রেজিস্ট্রেশন কী ভাবে হবে প্রভৃতি। তার আগে সংশ্লিষ্ট গ্রামীণ হাসপাতাল- স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোয় রোগী সহায়তা কেন্দ্র চালু হবে। প্রাথমিক ভাবে ১ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দও করা হবে। বরাদ্দ অর্থে সহায়তা কেন্দ্রের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে।

রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা প্রকল্প নিয়ে মাঝে-মধ্যেই নানা অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ওঠে মূলত বেসরকারি নার্সিং হোম-হাসপাতালগুলোর পরিষেবা নিয়েই। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে অবশ্য জেলায় অডিট টিম গঠন করা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, রাজ্য থেকেই জেলাস্তরে অডিট টিম গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কোনও নার্সিং হোম কিংবা হাসপাতাল পরিদর্শনের দু’দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দিতে হবে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে। তারপর সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “স্বাস্থ্য বীমা যোজনা নিয়ে যে কোনও অভিযোগই ওঠে না তা নয়। বেসরকারি নার্সিং হোম- হাসপাতালগুলোর পরিষবো নিয়ে মাঝেমধ্যে কিছু অভিযোগ ওঠে। অবশ্য অভিযোগ উঠলেই তা খতিয়ে দেখে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়।” ওই আধিকারিকের কথায়, “ওই ২১টি গ্রামীণ হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বাস্থ্য বীমার অধীন রোগী ভর্তি নেওয়ার আগে যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা দরকার, তা করা হচ্ছে। শেষ হলে রোগী ভর্তি শুরু হবে।”

infrastructure service medinipur health insurance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy