Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই, ধুঁকছে গ্রামীণ হাসপাতাল

চিকিৎসক থাকার কথা আট জন। কিন্তু রয়েছেন মাত্র তিনজন। তার মধ্যে এক জন আবার ব্লকের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, যাঁকে বেশিরভাগ সময়েই প্রশাসনিক কাজকর্মে ব্যস্ত থাকতে হয়। এই পরিস্থিতিতে শিকেয় উঠেছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের পরিষেবা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২৮
Share: Save:

চিকিৎসক থাকার কথা আট জন। কিন্তু রয়েছেন মাত্র তিনজন। তার মধ্যে এক জন আবার ব্লকের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, যাঁকে বেশিরভাগ সময়েই প্রশাসনিক কাজকর্মে ব্যস্ত থাকতে হয়। এই পরিস্থিতিতে শিকেয় উঠেছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের পরিষেবা।

হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা তো বটেই, বাইরে থেকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীরা নিত্য দিনের এই অব্যবস্থায় চিকিৎসক না পেয়ে ক্ষুব্ধ। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তথা একটা গোটা ব্লকের প্রধান হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বাসিন্দাদের মধ্যে।

জেলা সদর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতাল। হরিশ্চন্দ্রপুরের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক তজমূল হোসেন বলেন, “জেলার ভিতরে, অথচ জেলা সদর থেকে এত দূরে আর কোনও হাসপাতাল নেই। অথচ এখানকার পরিষেবা নিয়ে উদাসীন কর্তৃপক্ষ।” হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাবের কথা মেনে নিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্তারাও। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারির দিলীপ মণ্ডল বলেন, “ওখানে সম্প্রতি একজন চিকিৎসককে পাঠানো হয়েছে। কীভাবে সমস্যা মিটবে, তা দেখা হচ্ছে।”

হরিশ্চন্দ্রপুর

• চিকিৎসক- ৩ জন

• স্বাস্থ্যকর্মী- ৩ জন

• টেকনিশিয়ান- নেই

• গড় রোগী- দিনে প্রায় ৪০০

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, গোটা হরিশ্চন্দ্রপুরের দু’টি ব্লক এলাকা তো বটেই, বিহারের বিভিন্ন এলাকা থেকেও বাসিন্দারা হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। ৬৮ শয্যার হাসপাতালে বেশিরভাগ দিনই রোগী ভর্তি থাকেন। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই অন্তঃসত্ত্বা। গত এক বছরে সাড়ে তিন হাজার প্রসূতি ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে আড়াই হাজার প্রসূতির স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। বাকিদের জন্য অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হওয়ায় বাধ্য হয়েই তাঁদের মালদহ জেলা হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। বহির্বিভাগেও প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ জন রোগী আসেন। অথচ সেই অনুপাতে চিকিৎসক নেই। শুধু তাই নয়, নার্স বাদে সমস্ত কর্মীই প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম রয়েছেন। যেখানে ৮ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী থাকার কথা, সেখানে মাত্র তিন জন রয়েছেন। জিডিএ কর্মীর সংখ্যাও অর্ধেক।

চিকিৎসার পাশাপাশি সুষ্ঠুভাবে হাসপাতাল চালানো ও সাফসুতরো রাখতেও কর্তৃপক্ষকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। প্যাথোলজি বিভাগে গত তিন বছর ধরে কোনও টেকনিশিয়ান না থাকায় অন্য বিভাগের টেকনিশিয়ান দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, চিকিৎসকের জন্য ভর্তি থাকা রোগীদের অপেক্ষা করে থাকতে হয়। রোগ একটি জটিল আকার নিলেই তাঁদের মালদহে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়। বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই রোগীদের ফিরে যেতে হয়। তাছাড়া বাইরে থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে হয় রোগীদের। আরও অভিযোগ, হাসপাতাল চত্বর অধিকাংশ সময়েই নোংরা-আবর্জনায় ভরে থাকে। শৌচাগারও ব্যবহারের অযোগ্য। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ দরিদ্র রোগীদের মুখ বুজে পড়ে থাকতে হয়। কারণ, জেলা হাসপাতালে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তাঁদের থাকে না।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, একশো শয্যায় উন্নীত হয়েছে হাসপাতালটি। নতুন ভবন তৈরির কাজও প্রায় শেষ। সেখানে অপারেশন থিয়েটারও রয়েছে। নানা নতুন বিভাগও চালু হওয়ার কথা।

হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ছোটন মণ্ডল বলেন, “চিকিৎসকের পাশাপাশি হাসপাতাল চালানোর জন্য প্রয়োজনের তুলনায় কর্মী কম রয়েছে। সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। চিকিৎসক পেলে আরও ভাল পরিষেবা দেওয়া যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chanchal health centre doctors
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE