এসএসকেএমে উলটপুরাণ! চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা জোগাড় করতে না পেরে হামেশাই হাসপাতালের চাপের মুখে পড়েন রোগীর বাড়ির লোকজন। এ বার উল্টে টাকা ফেরত দিতে রোগীর পরিজনদের পিছনে হন্যে হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন এসএসকেএম-কর্তৃপক্ষ!
এমন বেনজির পরিস্থিতি তৈরি হল কী করে? হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রসবের জন্য এক মহিলার বাড়ির লোকের থেকে ১২ হাজার টাকা নিয়ে এসএসকেএম তা নিজেদের রোগী কল্যাণ সমিতির তহবিলে জমা করে ফেলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ দিকে জননী শিশু সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় সরকারি হাসপাতালে শিশুর জন্ম থেকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত সব মা ও শিশুর যাবতীয় চিকিৎসা নিখরচায় হওয়ার কথা। সেখানে রাজ্যের একমাত্র সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তথা নামী মেডিক্যাল কলেজে এ ভাবে টাকা নেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হতেই এ বার সাপের ছুঁচো গেলার মতো অবস্থা হয়েছে কর্তৃপক্ষের। ঘটনার প্রায় তিন মাস পরে এখন মুখরক্ষার জন্য ওই টাকা ফেরত দিতে বিস্তর সাধাসাধি করছেন তাঁরা। কিন্তু রোগীর বাড়ির লোকও বেঁকে বসেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, টাকা তাঁরা ফেরত নেবেন না। হাসপাতাল টাকা নিয়ে যা ইচ্ছা করুক। এতে প্রায় জলে পড়ার দশা এসএসকেএম-কর্তৃপক্ষের। ওই টাকা তাঁরা কোথায় রাখবেন, কী করবেন, বুঝতে পারছেন না।
কেন টাকা নেবে না রোগীর পরিবার? শিশুটির বাবা পুলক সিংহরায় জানান, তিনি সরকারি কর্মচারী। পুলিশে কাজ করেন। সরকারি হাসপাতালের গাফিলতি ধরিয়ে দিয়ে টাকা ফেরত নিলে পরে চাকরিতে সমস্যা হতে পারে। তাঁর দাবি, সরকারের কোপে পড়তে পারেন, এই আশঙ্কায় তিনি বিষয়টি থেকে সাত হাত দূরে থাকতে চান। তাঁর কথায়, “দরকার নেই টাকার। আমার চাকরি আগে।”
এসএসকেএম সূত্রের খবর, সম্প্রতি সেখানে জননী শিশু সুরক্ষার আওতায় থাকা রোগীর আত্মীয়দের দিয়ে বাইরে থেকে ওষুধ কেনানোর অভিযোগ উঠেছিল। তা নিয়ে তোলপাড় হতে কর্তৃপক্ষ ভুল স্বীকার করে বলেছিলেন, এমন যাতে আর না ঘটে, তাঁরা সতর্ক থাকবেন। এর পরে ছ’মাসও কাটেনি। এ বার শুধু শয্যার ভাড়া, ওষুধ, সিজার, পথ্য— সব মিলিয়ে ১২৮৭০ টাকা বিল করা হয়েছে শ্রীরামপুরের পুলক সিংহরায়ের স্ত্রী বন্দিতা সিংহরায়ের।
৪ এপ্রিল এসএসকেএমে সিজার করে বন্দিতাদেবীর পুত্রসন্তান জন্মায়। রোগীর পরিবারের দাবি, জননী শিশু সুরক্ষা কার্যক্রমে কী সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা, সে সম্পর্কে তাঁদের কোনও ধারণা ছিল না। হাসপাতাল থেকেও তাঁদের কিছু বলা হয়নি। উল্টে বন্দিতাদেবী ও তাঁর সন্তানকে ছাড়ার আগে হাসপাতাল থেকে ১২৮৭০ টাকার বিল ধরানো হয়। পুলকবাবুরা কোনও প্রতিবাদ না-করে তা দিয়ে দেন। টাকা জমা পড়ে যায় হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিতে।
এর পরে শিশুকে নিয়ে মাঝেমধ্যেই হাসপাতালে দেখাতে আনতেন তাঁরা। সপ্তাহ দু’য়েক আগে দেখাতে আনার পরেই বিষয়টি হাসপাতালের কয়েক জন চিকিৎসকের নজরে পড়ে। তার পরেই জানাজানি হয়। খবর পৌঁছয় স্বাস্থ্য ভবন পর্যন্ত। রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার-কল্যাণ কমিশনার শিখা অধিকারীর কথায়, “পুরোপুরি নিয়ম বহির্ভূত কাজ হয়েছে। শিশুর জন্মের পরে ৬ মাস পর্যন্ত সরকারি হাসপাতাল কোনও টাকা নিতে পারে না। তদন্ত করে দেখছি।” ইতিমধ্যে ৮ জুলাই এসএসকেএমের সুপার দীপাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় রোগীর বাড়ির লোককে ডেকে ওই কম্পিউটারাইজড মানি রিসিপ্টের এক পাশে লিখে দেন— জননী শিশু সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় ওই পুরো টাকা যেন ফেরত দেওয়া হয়। লেখার নীচে হাসপাতালের স্ট্যাম্পও মেরে দেওয়া হয়। কিন্তু রোগীর বাড়ির লোক সাফ জানিয়ে দেন, টাকা তাঁরা ফেরত নেবেন না।
তা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই বেআইনি ভাবে জমা নেওয়া ১২৮৭০ টাকা নিয়ে কী করবেন? অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্রের জবাব, “কেউ ভুল করে টাকা নিয়ে ফেলেছিল। স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসকেরাও খেয়াল করেননি। অন্যায় হয়েছে। কিন্তু এখন ভুল চিহ্নিত হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখছি কী করা যায়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy