Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভাড়ার টাকা বকেয়া, বিপাকে চুক্তির অ্যাম্বুল্যান্স মালিকেরা

হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য মালিকদের সঙ্গে চুক্তিতে অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে জেলার হাসপাতালে বা জেলা থেকে কলকাতা শহরে রোগী নিয়ে যেতে এই অ্যাম্বুল্যান্সগুলি অনেকের কাছেই অপরিহার্য। কারণ, ভাড়া কম। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স মালিকদের অভিযোগ, চুক্তি মোতাবেক ভাড়া অনিয়মিত হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন তাঁরা।

নুরুল আবসার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০০:৩৬
Share: Save:

হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য মালিকদের সঙ্গে চুক্তিতে অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে জেলার হাসপাতালে বা জেলা থেকে কলকাতা শহরে রোগী নিয়ে যেতে এই অ্যাম্বুল্যান্সগুলি অনেকের কাছেই অপরিহার্য। কারণ, ভাড়া কম। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স মালিকদের অভিযোগ, চুক্তি মোতাবেক ভাড়া অনিয়মিত হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। বকেয়া টাকার মায়া ছেড়ে দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। আবার রোগীদের পরিষেবায় ক্ষতির কথাও ভুলে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থায় কার্যত ঘরের খেয়ে বনের নীলগাই তাড়ানোর দশা হয়েছে তাঁদের।

অ্যাম্বুল্যান্স-ভাড়া বাকি থাকার অভিযোগ যে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয় তা স্পষ্ট রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথির বক্তব্যেই। তিনি বলেন, “অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া বাবদ কত টাকা দরকার তা জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে নিয়মমাফিক জানানো হয় না। আমাদের কাছে বরাদ্দ চেয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক সময়ে এলে টাকা দিয়ে দেওয়া হবে।” বিভিন্ন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা অবশ্য দাবি করেছেন, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে ভাড়ার টাকা চেয়ে নিয়মমতোই আবেদন করা হয়। কিন্তু যা চাওয়া হয়, বাস্তবে বরাদ্দ হয় তার থেকে অনেক কম। ফলে, ছিটেফোঁটার বেশি কোনও অ্যাম্বুল্যান্স মালিককে দেওয়া যায় না।

জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের পাশেই রয়েছে এই বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাও। বিশেষ করে গ্রামীণ হাসপাতাল এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা বেশি। যেমন পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর গ্রামীণ হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স নেই। এখানে চুক্তিতে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালানো হচ্ছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, চুক্তির ভিত্তিতে অ্যাম্বুল্যান্স চালানোর ব্যবস্থা হয়েছে নয়ের দশকের শেষে বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রকল্পে। কিন্তু ২০০৩-০৪ সাল নাগাদ ওই প্রকল্প শেষ হয়ে যায়। তার পরে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরই সরাসরি চুক্তিতে অ্যাম্বুল্যান্স চালাতে শুরু করে। নিয়ম হল, অ্যাম্বুল্যান্সগুলি ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেবে।

রোগীদের ‘রেফার’ করা হলে তাঁদের পরিবার এই অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করতে পারেন। ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা গ্রামীণ হাসপাতালে এ ধরনের যে সব অ্যাম্বুল্যান্স থাকে তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মহকুমা হাসপাতাল এবং জেলা হাসপাতালে ‘রেফার্ড’ রোগীদের নিয়ে যাওয়া যায়। মহকুমা হাসপাতাল বা জেলা হাসপাতালে থাকা চুক্তির অ্যাম্বুল্যান্স এই সব হাসপাতাল থেকে কলকাতায় ‘রেফার’ করা রোগীদের নিয়ে যায়। রোগীর পরিবারের এ জন্য শুধু তেল-খরচ দেওয়ার কথা।

হাওড়া জেলায় মোট ন’টি অ্যাম্বুল্যান্স চলে চুক্তির ভিত্তিতে। মালিকদের দাবি, এক সময়ে প্রতি তিন মাস অন্তর ভাড়া মিটিয়ে দেওয়া হলেও গত দেড় বছর ধরে টাকা দেওয়া অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। নামমাত্র কিছু টাকা অ্যাম্বুল্যান্স মালিকদের দেওয়া হলেও মোটা টাকা বকেয়া রয়েছে। গত দেড় বছরে এই বকেয়ার পরিমাণ অন্তত ২০ লক্ষ টাকায় দাঁড়িয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।

পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন গ্রামীণ হাসপাতাল ও ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মোট ১০টি অ্যাম্বুল্যান্স চলে চুক্তির ভিত্তিতে। গত দেড় বছর ধরে সেখানেও বকেয়া অন্তত ৩২ লক্ষ টাকা বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। পশ্চিম মেদিনীপুরে ভাড়ার অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা ১৩। সেখানেও বকেয়া রয়েছে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা। এই চিত্র সারা রাজ্য জুড়েই বলে দাবি অ্যাম্বুল্যান্স মালিকদের।

তাঁদের বক্তব্য, স্বাস্থ্য দফতরে তাগাদা দিয়েও বকেয়া মেলেনি। টাকা না পেয়েও অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালিয়ে যাচ্ছেন কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে একাধিক অ্যাম্বুল্যান্স মালিক বলেন, “এত টাকা বকেয়া ফেলে চলে গেলে, তা আর উদ্ধার করতে পারব কি না সন্দেহ আছে। তা ছাড়া, অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা এক দিনের জন্যও বন্ধ হলে রোগী ও তাঁদের পরিবার মারাত্মক অসুবিধায় পড়বেন। তাই গাড়ি চালানো বন্ধ করতে পারছি না। চড়া সুদে বাজার থেকে টাকা ঋণ নিয়ে চালকদের বেতন দিতে হচ্ছে।” অ্যাম্বুল্যান্স মালিকদের ক্ষোভ, “সব জেনেও আমাদের অসহায়তার সুযোগ নিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর।”

চিকিৎসক অনিয়মিত, তালা পড়ল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে

নিজস্ব সংবাদদাতা • রঘুনাথগঞ্জ

চিকিৎসক নিয়মিত আসছেন না অভিযোগে বুধবার সুতি ২ ব্লকের অরঙ্গাবাদ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের আটকে রেখে তালা ঝুলিয়ে দিল তৃণমূল সমর্থক গ্রামবাসীদের একাংশ। পরে স্বাস্থ্যকর্মীদের ছেড়ে দিলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তালা খুলতে রাজি হননি বিক্ষোভকারীরা। অরঙ্গাবাদ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন চিকিৎসক, নার্স ও দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। আশপাশের এলাকা থেকে গড়ে প্রায় দু’শো রোগী নিত্য আসেন বিড়ি শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত এলাকার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। স্থানীয় বাসিন্দা রোকেয়া বিবি বলেন, “যেদিনই আসি শুনি চিকিৎসক নেই। ক্যাম্পে গিয়েছেন। এখানকার চিকিৎসক অন্য ক্যাম্পে গেলে আমাদের চিকিৎসার কী হবে?” তৃণমূল ব্লক কমিটির সদস্য সাকির খান বলেন, “চিকিৎসক সপ্তাহে তিন দিন ক্যাম্পে যেতে হয় বলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন না। এ ছাড়াও সভা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে বাকি দিনগুলিতেও চিকিৎসকের দেখা মেলা ভার। রোগী দেখেন নার্স ও কর্মীরা। পাশে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পরিষেবা দীর্ঘ দিন ধরে তালা বন্ধ। এই নিয়ে এলাকায় গ্রামবাসীরা বার বার অভিযোগ করেও ফল পাননি। তাই বাধ্য হয়েই বুধবার বেলা ১২টা নাগাদ তালা ঝোলানো হয়েছে ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।” এ দিন তালা ঝোলানোর খবর পেয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান সুতি ২ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক পি কে হালদার। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনি। তবে সমাধানসূত্র মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nurul absar ambulance health center hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE