Advertisement
E-Paper

মুখ বাঁচাতে জীবাণু যাচাইয়ে ছাড়পত্র রাজ্যের

মারণ রোগ ঘিরে ধরায় এখন বাধ্য হয়েই রোগ নির্ণয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিতে শুরু করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। সোয়াইন ফ্লু-র ভাইরাস (এইচ১এন১) পরীক্ষায় এত দিন শুধু ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেজ (নাইসেড)-এর উপরে নির্ভর করে থাকায় নমুনার পাহাড় জমে যাচ্ছিল। পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে অনেক দেরি হচ্ছিল। ভুগতে হচ্ছিল রোগী এবং তাঁদের পরিজনদের। সমালোচনা এড়াতেই এখন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালকে নমুনা পরীক্ষার ছাড়পত্র দেওয়ার পথে হাঁটছে রাজ্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৭

সতর্কতা ও সচেতনতার প্রচার যথাসময়ে করা হয়নি। • সোয়াইন ফ্লু-র মোকাবিলায় যথেষ্ট পরিকাঠামো-সহ প্রস্তুতিও আগে থেকে চালায়নি রাজ্য সরকার। সর্বোপরি অনেক বেসরকারি হাসপাতাল রোগ নির্ধারণের কাজে সহযোগিতা করতে চাইলেও তাদের আর্জিকে আমল দেওয়া হয়নি।

মারণ রোগ ঘিরে ধরায় এখন বাধ্য হয়েই রোগ নির্ণয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিতে শুরু করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। সোয়াইন ফ্লু-র ভাইরাস (এইচ১এন১) পরীক্ষায় এত দিন শুধু ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেজ (নাইসেড)-এর উপরে নির্ভর করে থাকায় নমুনার পাহাড় জমে যাচ্ছিল। পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে অনেক দেরি হচ্ছিল। ভুগতে হচ্ছিল রোগী এবং তাঁদের পরিজনদের। সমালোচনা এড়াতেই এখন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালকে নমুনা পরীক্ষার ছাড়পত্র দেওয়ার পথে হাঁটছে রাজ্য।

ই এম বাইপাসের পিয়ারলেস হাসপাতাল ইতিমধ্যেই সোয়াইন ফ্লু নির্ণয়ের পরীক্ষা শুরু করার অনুমতি পেয়েছে। নাইসেডের পাশাপাশি সেখানেও প্রতিদিন বহু নমুনা জমা পড়ছে। মঙ্গলবার রোগ নির্ণয়ের ছাড়পত্র পেয়েছে সল্টলেকের এএমআরআই বা আমরি হাসপাতাল। বুধবার সেখানে শুরু হয়েছে পরীক্ষা। অ্যাপোলো গ্লেনেগ্লস হাসপাতালে পরিদর্শন হয়ে গিয়েছে। ছাড়পত্র পাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা বলে জানাচ্ছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা।

রোগের সঙ্গে লড়াইয়ে সেই তো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সামিল করতে হল। তা হলে এই সিদ্ধান্ত নিতে এত দেরি করে রোগাক্রান্ত এবং তাঁদের পরিবারকে দুর্দশায় ফেলা হল কেন?

সরাসরি জবাব দিচ্ছেন না কেউ। তবে স্বাস্থ্যকর্তাদেরই অনেকে একান্তে জানাচ্ছেন, রোগ মোকাবিলার কাজটা আবহাওয়াই করে দেবে ভেবে নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর এই বিষয়ে জোর দেয়নি। স্বাস্থ্যকর্তারা ভাবছিলেন, মার্চ যখন হাজির, গরম বাড়বেই। আর তার জেরে ভাইরাসের কর্মক্ষমতা হ্রাস পেয়ে সোয়াইন ফ্লু-ও ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে যাবে। তা হলে পরিকাঠামোর ঘাটতির দিকটা আর সে-ভাবে বেআব্রু হবে না। কিন্তু বাদ সেধেছে প্রকৃতিই। তার খামখেয়ালে তাপমাত্রা তেমন বাড়ছে না। ফলে প্রতিদিনই সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে আবার প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের রোগ নির্ণয় কেন্দ্র দু’টি চালু হবে কবে?

স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরের খবর, এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে চলতি মরসুমে ওই দুই কেন্দ্রের কাজ শুরু হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। ফলে আরও ধারালো সমালোচনার খাঁড়া নেমে আসতে পারে। তাই এ বার বাধ্য হয়েই রোগ নির্ণয়ের কাজে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য।

“এখন এটা স্বাস্থ্য দফতরের সম্মানের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা যত বাড়ানো হবে, তত সমালোচনার ঝড় ঠেকানো যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে,” বলছেন স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা। একই সঙ্গে তিনি জানান, এতে অসুবিধাও আছে। সরকারি কেন্দ্রে যে-পরীক্ষা কার্যত নিখরচায় হয়, বেসরকারি কেন্দ্রে তারই জন্য দিতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। তাতে সমস্যায় পড়ছেন রোগী এবং তাঁদের পরিবার। তাই কোনও রোগ যখন ব্যাপক ভাবে ছড়ায়, তা নির্ণয়ের জন্য সরকারি স্তরে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো থাকাটা বাঞ্ছনীয় বলে মন্তব্য করেন ওই স্বাস্থ্যকর্তা।

খরচের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও। রোগ পরীক্ষার কিটের দাম বেশি। তাই একসঙ্গে বেশি রোগী না-এলে সমস্যা বাড়ে হাসপাতালের। আবার নমুনা সংগ্রহ করে তা রেখেও দেওয়া যাবে না। সে-দিনই রিপোর্ট দিতে হবে। এই অবস্থায় নমুনা পরীক্ষা করে মুনাফা দূরের কথা, তাদের লোকসান বাড়াবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলির অন্দরে।

আবার নিজেদের মধ্যে ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালাতে গিয়ে কে কত কম খরচে নমুনা পরীক্ষা করবে, সেই লড়াইও শুরু হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে। কেউ কেউ পরীক্ষার দায়িত্ব নিতে চাইছে না লোকসানের আশঙ্কায়। ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ায় বাইপাসের একটি হাসপাতাল ওই পরীক্ষার ছাড়পত্র পেয়েছিল। এ বার তারা নমুনা পরীক্ষার ছাড়পত্র চেয়ে আর আবেদনই করেনি। কেন? ওই হাসপাতালের কর্তারা জানান, বেসরকারি কেন্দ্রে রোগী আসেন কম। এই পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিটের যা দাম, তাতে সামান্য মুনাফা রাখতে গেলেও এক-এক জনের জন্য সাত থেকে আট হাজার টাকা খরচ পড়ে। খুব কম মানুষই এই খরচ বহন করতে পারবেন। আগের বারের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা আবেদনই করেননি।

নমুনা পরীক্ষা নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে সোয়াইন ফ্লু-র অবশ্য ঝিমিয়ে পড়ার কোনও লক্ষণ নেই। এ দিন আরও ১৯ জনের থুতুর নমুনায় ওই রোগের ভাইরাস মিলেছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে জানান, নতুন রোগাক্রান্তদের মধ্যে ১৩ জন কলকাতার। বাকি ছ’জন আশপাশের জেলার। এই নিয়ে রাজ্যে সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২৬৪। তাঁদের মধ্যে ১৬৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। ৮৩ জন এখনও বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের দুই চিকিৎসকের শরীরেও সোয়াইন ফ্লুয়ের ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। তাঁরা ওই হাসপাতালেরই আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। ধূপগুড়ির সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রের সোয়াইন ফ্লু ধরা পড়ার পরে ওই দুই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানেই তার চিকিৎসা চলছিল। তার পরে তাঁরাই আক্রান্ত হন।

সোয়াইন ফ্লু রুখতে নিদান মন্ত্রীর

সাহেবি কেতা ভুলে যান, ভারতীয়ত্বকে আপন করে নিন। সোয়াইন ফ্লু-র সংক্রমণ রুখতে এ বার হরিয়ানার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপদেশ, কারও সঙ্গে আলাপ হলে সাহেবদের মতো করমর্দন করার দরকার নেই। তার থেকে বরং দু’হাত তুলে নমস্কার করুন। সোয়াইন ফ্লু-র সংক্রমণ এড়ানো যাবে, আবার সাবেকি প্রথার প্রতি মর্যাদাও দেখানো হবে। হরিয়ানায় এ পর্যন্ত ২৫২ জন ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সেখানে মৃতের সংখ্যা ২৭। সারা দেশে এখনও পর্যন্ত সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণের সংখ্যা ২৪৬৬১। মৃত্যু হয়েছে ১৩১৯ জনের।

swine flu westbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy