আশ্বাসে উঠল অবস্থান বিক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র।
রোগীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসানসোল রেল হাসপাতাল চত্বরে মঙ্গলবার বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল। প্রায় পনেরো মিনিট হাসপাতালের মূল দরজা বন্ধ করে রাখেন বিক্ষোভকারীরা। পরে অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভ থামে।
গত ২৮ নভেম্বর বিকেলে এই হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হয়ে যান এক জন রোগী। ১৫ দিন পরেও তাঁর সন্ধান দিতে না পারায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতালের মূল দরজায় অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করে নিখোঁজের পরিবার। মঙ্গলবার তাঁদের পক্ষ নিয়ে আসরে নামে তৃণমূল। নেতৃত্ব দেন দলের পরিবহণ কর্মী সংগঠনের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়া। তখন প্রায় পনেরো মিনিট হাসপাতালের মূল দরজা বন্ধ করে রাখায় হাসপাতালে আসা লোকজনকে পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকতে হয়। তৃণমূল নেতা রাজু অহলুওয়ালিয়া অভিযোগ করেন, এই হাসপাতালে রোগীদের কোনও নিরাপত্তা নেই। হাসপাতালে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী না থাকায় বহিরাগতেরা অবাধে যাতায়াত করে। তাঁর কথায়, “আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এখান থেকে প্রায়ই রোগী নিখোঁজের ঘটনা ঘটছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বারবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বলেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই।” বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ চলার পরে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন হাসপাতালের চিফ মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট সুনীল কুমার। তিনি নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আশ্বাস দেন। এর পরেই বিক্ষোভ থামে। হাসপাতালের মূল দরজায় নিখোঁজ রোগীর পরিজনদের অবস্থানও উঠে যায়। রেলের নিয়ম অনুযায়ী ওই রোগীর পরিবারের সদস্যেরা রেলের সুবিধা পাবেন বলে জানানো হয়েছে।
শুধু তৃণমূল নয়, আসানসোল রেল হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছে রেলের অনুমোদিত শ্রমিক সংগঠনগুলিও। ইস্টার্ন রেল মেন্স ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুধীর রায়ের অভিযোগ, “এই হাসপাতালে যে রোগীদের কোনও নিরাপত্তা নেই তা আমরা অনেক দিন আগেই কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু আমাদের কথায় কর্ণপাত করা হচ্ছে না।” তাঁর আরও অভিযোগ, “রেলের হাসপাতাল, অথচ এখানে রেল নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন থাকে না। আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, চিকিত্সাধীন রোগীদের পোশাক দেওয়া হোক। তা হলে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেলেও তাঁদের চেনা যাবে। সে প্রস্তাবও শোনা হয়নি।” হাসপাতালে নিরাপত্তা না থাকার অভিযোগ তুলেছেন ইস্টার্ন রেল মেন্স কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা পিএল মিত্র। তাঁর বক্তব্য, “হাসপাতাল সংক্রান্ত সভা হলেই আমরা কর্তৃপক্ষকে বারবার নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানাই। কিন্তু শোনা হয় না। হাসপাতাল থেকে আরও এক জন রোগী নিখোঁজের ঘটনায় আমাদের আশঙ্কা ফের প্রমাণিত হয়েছে।” নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাটো করার জন্য শ্রমিক সংগঠনগুলির তরফে হাসপাতালে ক্লোজ সার্কিট টিভি লাগানোর অনুরোধও করা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক ভাবে রাখতে হলে কমপক্ষে ১৪ জন নিরাপত্তারক্ষী দরকার। কিন্তু বর্তমানে মাত্র চার জন রক্ষী রয়েছেন। হাসপাতালের এক আধিকারিক দাবি করেন, এই চার জনও এক সঙ্গে নিয়মিত কাজে আসেন না। এই অবস্থায় এর চেয়ে ভাল নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যে গলদ রয়েছে তা কার্যত স্বীকার করেছেন চিফ মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট সুনীল কুমার। তিনি বলেন, “আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানিয়েছি। নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কিছু প্রস্তাবও পাঠিয়েছি। আশা করি, সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে।” তাঁর আশ্বাস, বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করে হাসপাতালের নিরাপত্তা পোক্ত করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy