Advertisement
০৫ মে ২০২৪

রাজ্যের মেডিক্যাল পড়ুয়া ধরতে হাজির বাংলাদেশ

মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র আপত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের এমবিবিএসের ৮০০ আসনে ভর্তি এখনও ঝুলে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত আসন ফেরত না পেলে একধাক্কায় ভর্তির সুযোগ কমবে বলে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। এই সুযোগ কাজে লাগাতে রাজ্য থেকে মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রী সংগ্রহে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাংলাদেশের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৪ ০২:০৫
Share: Save:

মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র আপত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের এমবিবিএসের ৮০০ আসনে ভর্তি এখনও ঝুলে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত আসন ফেরত না পেলে একধাক্কায় ভর্তির সুযোগ কমবে বলে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। এই সুযোগ কাজে লাগাতে রাজ্য থেকে মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রী সংগ্রহে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাংলাদেশের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলি।

জুলাই মাসের প্রথমেই কলকাতায় দু’দিনের মেডিক্যাল মেলা আয়োজন করে সরাসরি ছাত্রদের ‘স্পট অ্যাডমিশন’-এর ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশের সাতটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ। তাদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতের যে কোনও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ম্যানেজমেন্ট কোটায় ভর্তি হতে যে পরিমাণ টাকা লাগে, তার অনেক কম টাকায় কলেজে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

ওই কলেজ কর্তারা রাখঢাক না-করেই বলছেন, “পরিকাঠামোর জন্য পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে অসংখ্য আসন এমসিআই বাতিল করেছে। বহু ছাত্রছাত্রী জয়েন্ট এন্ট্রান্স পাশ করেও ভর্তি হতে পারবেন না। এই সুযোগ আমরা কাজে লাগাব।” রংপুরের কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নাজমুল আহসান চৌধুরির বক্তব্য, “এমসিআই পশ্চিমবঙ্গের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আসন না ফেরালে পরোক্ষে আমাদেরই লাভ।”

কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যাঁরা পাশ করে আসবেন, তাঁরা সবাই এ দেশে চিকিৎসা করতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্ন অনেককেই চিন্তায় ফেলেছে। চিন থেকে ডাক্তারি পাশ করে আসা অনেকে এখনও এ দেশে প্র্যাকটিসের সুযোগ পাননি। এমসিআই সূত্রের খবর, বিদেশ থেকে ডাক্তারির ডিগ্রি নিয়ে এলেও দেশে প্র্যাকটিসের অনুমতি পাওয়া সহজ নয়। এর জন্য ‘ন্যাশনাল বোর্ড অফ এগজামিনেশন’-এর নেওয়া একটি পরীক্ষায় বসতে হয়। তাতে পাশ করলে তবেই এমসিআই রেজিস্ট্রেশন দেয়। চলতি বছর থেকে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলগুলি সেই রেজিস্ট্রেশন দেবে।

এমসিআই-এর এথিক্যাল বোর্ডের সদস্য সুদীপ্ত রায় জানাচ্ছেন, “প্রতি বছরই ভারত থেকে চিন, বাংলাদেশ, রাশিয়া, ইউক্রেন, নেপালে র মতো দেশে কিছু ছাত্রছাত্রীরা মেডিক্যাল পড়তে যান। কিন্তু তাঁরা এ দেশে এসে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হন। পাশ করেন মাত্র ৩০-৩৫%।” কেন? সুদীপ্তবাবুর ব্যাখ্যা, “বিদেশে পঠনপাঠনের মান ঠিক নয়। ফলে বাংলাদেশে গিয়েই মেডিক্যাল-প্রত্যাশীদের সমস্যার সমাধান হবে এমন নয়।”

এই অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি বাংলাদেশের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সংগঠন ‘বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। তাঁর দাবি, “বিদেশ থেকে ডাক্তারি পড়ে এসে যে ৩০-৩৫% ছাত্র ভারতে এন্ট্রান্সে পাশ করে বলে এমসিআই জানাচ্ছে, তাঁদের বেশির ভাগই বাংলাদেশ থেকে ডিগ্রি পেয়েছেন। রাশিয়া ও চিন থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্তরাই মূলত ব্যর্থ হন। কারণ, ওই সব দেশে পঠনপাঠন নিম্নমানের। তা ছাড়া, বাংলাদেশের মেডিক্যালের সিলেবাসের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের অনেক মিল।”

পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “ছেলে-ধরার মতো বাংলাদেশের মেডিক্যাল কলেজগুলি কলকাতায় ছাত্র ধরতে এসেছে। ওদের পঠনপাঠনের মান তথৈবচ। ওখানে গেলে অবস্থা টের পাবে ছাত্ররা।” প্রসঙ্গত, উচ্চমাধ্যমিকে ৫০% এবং বায়োলজিতে ৬০% নম্বর থাকলেই বাংলাদেশের মেডিক্যাল কলেজে স্পট অ্যাডমিশনের সুযোগ মিলছে। রাজ্য স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, মেডিক্যাল শিক্ষার মান ভাল হলে এত কম নম্বরে পড়ার সুযোগ মিলত না।

রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের এক সদস্য আবার বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে অজস্র রোগী চিকিৎসার জন্য পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে আসেন। ওই এমসিআই সদস্যের প্রশ্ন, যেখানে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা বা চিকিৎসকদের উপর সেখানকার বাসিন্দাদেরই আস্থা নেই, সেখানে এখানকার ছেলেরা কেন ওখানে পড়তে যাবে?

বাংলাদেশের এনাম মেডিক্যাল কলেজের ডিরেক্টর রোশেনারা চৌধুরির যুক্তি, “আগে মানুষ খানিকটা হুজুগে পড়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতেন। পরিষেবারও কিছু সমস্যা ছিল। এখন পরিষেবা ও পঠনপাঠন দুই-ই অনেক উন্নত হয়েছে। ভারতে যাওয়ার প্রবণতাও কমেছে।” তাঁর বক্তব্য, “ভাষা ও পরিবেশেও এক। ফলে পশ্চিমবঙ্গে আসন কম পড়লে ছাত্ররা স্বছন্দে এখানে মেডিক্যাল পড়তে আসতেই পারেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE