Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সুস্থ পরামর্শ

লিভার ভাল রাখতে প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম করুন

ফ্যাটি লিভার মানেই কি ভয়ের? সিরোসিস নানেই কি সব শেষ? লিভার নিয়ে নানা ভয় ভাঙালেন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরী। তাঁর মুখোমুখি সোমা মুখোপাধ্যায়।দৌড় বাড়ছে। বাড়ছে প্রতিযোগিতা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা অসুস্থতাও। সুস্থ থাকবেন কী ভাবে? কী কী লক্ষ্মণ দেখলে যাবেন চিকিৎসকের কাছে? এই বিভাগে সুস্থ ভাবে বাঁচার ও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। শুরু হল নতুন বিভাগ ‘সুস্থ পরামর্শ’। শুধুমাত্র আনন্দবাজার ওয়েবসাইটে।

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৪ ২০:০০
Share: Save:

প্রশ্ন: লিভারের অসুখ কি সত্যিই বাড়ছে?
উত্তর: এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সারা পৃথিবীতে ‘লাইফ স্টাইল’ পাল্টাচ্ছে। দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে। মানুষ গ্রাম থেকে শহরে আসছেন। মানুষের শারীরিক পরিশ্রম কমছে। ডায়াবিটিস বাড়ছে হু হু করে। ২০২৫ সালের মধ্যে ভারত গোটা পৃথিবীর ডায়াবিটিস রাজধানী হবে বলে আশঙ্কা। সব মিলিয়ে একটা সামাজিক বদল ঘটছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে যে অঙ্গটি সবথেকে বেশি ধাক্কা খাচ্ছে, তা হল লিভার। শরীরের সঙ্গে ভাইরাসের যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে সৈনিক শরীরকে রক্ষা করার চেষ্টা করে তা লিভার। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া শরীরে ঢুকলে লড়াইয়ের মূল সুরটা বাঁধে লিভার। তাই লিভার কমজোরি হলে তার ফল কিন্তু ভালই ভোগ করতে হয়।

প্রশ্ন: লিভারের অসুখ হওয়া মানেই কি বেশ ভয়ের ব্যাপার?
উত্তর: কোনও অসুখই তো হেলাফেলা করার নয়। তাই ভয়ের নয় তা বলতে পারব না। তবে যাঁদের ওজন খুব বেশি কিংবা ডায়াবিটিস রয়েছে, তাঁদের লিভারের ক্ষতি হলে সেটা বেশ ভয়ের।

প্রশ্ন: তাঁদের ক্ষেত্রে বাড়তি কী ধরনের সতর্কতা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে?
উত্তর: একটাই পরামর্শ। খুব পরিশ্রম করুন। শরীরটাকে ভাল করে খাটান। যাঁদের কাজের ধরনটাই এমন যে খুব বেশি শারীরিক ধকল হয় না, তাঁদের বিকল্প ভাবতে হবে। প্রচুর ব্যায়াম করুন। বাড়িতেই হোক বা জিম-এ, প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম দরকার।

প্রশ্ন: ইদানিং তো আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করলেই যে কোনও লোকের ফ্যাটি লিভার পাওয়া যাচ্ছে। এই ফ্যাটি লিভার ব্যাপারটা কী?
উত্তর: লিভার ফ্যাট তৈরি করে। রক্তের মধ্যে দিয়ে তা পেশিতে পৌঁছয়। লিভার যতটা ফ্যাট তৈরি করছে, আর যতটা খরচ করছে তার মধ্যে যদি ভারসাম্য না থাকে, অর্থাৎ ফ্যাট উদ্বৃত্ত হয়ে যায়, তা হলে সেটা লিভারে জমে। এটাই ফ্যাটি লিভার।

প্রশ্ন: এটা নিয়ে কি বেশি চিন্তা করার মতো কিছু রয়েছে?
উত্তর: শুধু ফ্যাটি লিভার হলে তেমন আতঙ্কের কিছু নেই। নিয়মিত ব্যায়াম করলে আর অতিরিক্ত তেল-ঘি খাওয়া বন্ধ করলে সেটা ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু যদি কারও এসজিপিটি বেশি থাকে, ওজন বেশি হয় এবং তিনি ডায়াবিটিক হন, তা হলে কিন্তু সতর্ক হওয়াটা জরুরি। নিয়ন্ত্রণ না করলে লিভারের বারোটা বাজবে।

প্রশ্ন: নিয়ন্ত্রণ মানে কি মদ্যপান বন্ধ করা?
উত্তর: বন্ধ করতে পারলে তো খুবই ভাল। কিন্তু সেটা তো সহজ নয়। তাই পরিমিত মদ্যপানের পরামর্শ দিই। অর্থাৎ, প্রতি দিন যদি কেউ এক পেগ মদ্যপান করেন, তা হলে সমস্যা নেই। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষেরই এই পরিমিতিবোধটা তো হারিয়ে যায়। সমস্যাটা সেখানেই।

প্রশ্ন: সিরোসিস বাড়ছে কেন?
উত্তর: কারণ মদ নিয়ে ট্যাবুটা চলে যাচ্ছে। যত সিরোসিস-এর রোগী পাচ্ছি, তাঁদের অধিকাংশই প্রচুর মদ্যপান করেন।

প্রশ্ন: সিরোসিস মানেই কি সব শেষ?
উত্তর: একেবারেই তা নয়। আজ থেকে ১৫ বছর আগে সিরোসিস মানেই ছিল অবধারিত মৃত্যু। চোখের সামনে শুধু দেবদাসের ছবি ভাসত! এখন পরিস্থিতিটা বদলেছে। অনেক নতুন ওষুধ এসেছে। এখন সিরোসিসের চিকিৎসা রয়েছে, বহু ক্ষেত্রে রোগটা সেরেও যায়। তবে এ সব ওষুধের দাম কিন্তু যথেষ্ট বেশি। আর, একটা পর্যায়ের পর সারানোটা কঠিন। তাই চিকিৎসা হাতের নাগালে রয়েছে বলে রোজ আকন্ঠ মদ খেয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা যদি কেউ করেন, তিনি ধনেপ্রাণে মরবেন।

প্রশ্ন: সিরোসিস মানেই কি লিভার ক্যানসার?
উত্তর: একেবারেই না। সিরোসিস হল ঝড়ে ভাঙা ঘর। তার কোনও এক প্রান্তে জীবন পড়ে রয়েছে। চিকিৎসকের কাজ হল সেই জীবনটাকে খুঁজে বার করা। লিভারে প্রচুর কোষ থাকে। সিরোসিস হলে কিছু কোষ নষ্ট হয়ে যায়। সেই মরা কোষগুলো আঁটির মতো বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকে। তবে আশার কথা, লিভার খুব দ্রুত রিজেনারেট করে। মৃত্যুর পাশাপাশি জীবনের প্রবাহ জারি থাকে। যে কারণে লিভারের অংশ অন্যকে দিয়ে তার লিভার প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করা যায়। কারণ, ওই অংশটুকু লিভার নিজেই খুব দ্রুত গড়ে তুলবে।

প্রশ্ন: কোন কোন উপসর্গ দেখলে লিভারের অসুখ হয়েছে বুঝে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?
উত্তর: সমস্যা তো এটাই যে লিভারের অসুখ অনেকটা ছড়িয়ে পড়ার পরে ধরা পড়ে। তবে এখন অনেক ধরনের চিকিৎসা বেরিয়েছে। তাই দেরিতে ধরা পড়লেও ঠিকঠাক চিকিৎসায় সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

প্রশ্ন: এখন তো গ্যাস-অম্বলের সমস্যা ঘরে ঘরে। তাঁদের জন্য কোনও পরামর্শ?
উত্তর: গোড়াতেই একটা কথা বলে রাখি, গ্যাসের সঙ্গে লিভারের কোনও সম্পর্ক নেই। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। গায়ে সাদা দাগ, চুল সাদা হয়ে যাওয়া সব কিছুর জন্যই লিভার দায়ী, এমন একটা ধারণা রয়েছে অনেকেরই। এ বার আসি গ্যাস-অম্বলের প্রসঙ্গে। অতিরিক্ত তেল-মশলাদার খাবার, অসময়ে খাওয়া, বহু সময়ের ব্যবধানে খাওয়াদাওয়া এ সবের জন্য গ্যাস-অম্বল হয় অনেকেরই। টানা বেশ কিছু দিন এমন চলতে থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা উচিত।

(অভিজিৎ চৌধুরী এসএসকেএম হাসপাতাল তথা ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং লিভার ফাউন্ডেশনের অন্যতম কর্ণধার।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

avijit chowdhury soma mukhopadhyay gastentrologist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE