প্রশ্ন: স্ট্রোক হওয়ার পর যে পঙ্গুত্ব আসে, চিকিৎসা করলে সেটা নাকি কাটিয়ে ওঠা যায়?
উত্তর: হ্যাঁ। স্ট্রোক রিহ্যাবিলিটেশন চিকিৎসার মাধ্যমে স্ট্রোক রোগীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়।
প্রশ্ন: একেবারে আগের মতো জীবনযাপন করতে পারবে?
উত্তর: অনেকটাই। তবে সেটা অধিকাংশই নির্ভর করছে কয়েকটি বিষয়ের ওপর।
প্রশ্ন: কী রকম?
উত্তর: মস্তিষ্কের কোন জায়গায় কতটা ক্ষতি হয়েছে তার ওপর। সোজা কথায়, স্ট্রোকের আঘাত কতটা ছিল। তা ছাড়া কত তাড়াতাড়ি রিহ্যাব শুরু করা হয়েছে, তার ওপরও রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠা অনেকটাই নির্ভর করে।
প্রশ্ন: কখন রিহ্যাব শুরু করতে হবে?
উত্তর: স্ট্রোক স্থিত হওয়ার পর পরই রিহ্যাব শুরু করে দিতে হবে। স্ট্রোক হওয়ার ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সাধারণত স্ট্রোক স্থিত হয়।
প্রশ্ন: কিন্তু স্ট্রোক স্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক সময় রিহ্যাব শুরু করা যায় না। সে ক্ষেত্রে কী হবে?
উত্তর: স্ট্রোক হওয়ার প্রথম ৪০ দিনের মধ্যে রিহ্যাব শুরু করতে পারলে সবচেয়ে ভাল। এর পর যত দেরি হয়, রোগীর সুস্থ জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা তত কমতে থাকে। তাই স্ট্রোক হওয়ার পর পরই রিহ্যাবের কথা ভাবা দরকার।
প্রশ্ন: রিহ্যাব ব্যাপারটা আসলে কী? রিহ্যাবে কী করা হয়?
উত্তর: স্ট্রোকের পর যে সব সমস্যা তৈরি হয়, তা এক জন চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খেলেই পুরোপুরি সারে না। বরং নানা ধরনের শারীরিক অক্ষমতা থেকে যায়। সে জন্য ওষুধের পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত কিছু প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। এক জন ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশনের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রোগীর বিভিন্ন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বিশেষ কিছু থেরাপি ও চিকিৎসা করা হয়। সেটাই স্ট্রোক রিহ্যাব।
প্রশ্ন: থেরাপি মানে ফিজিয়োথেরাপি?
উত্তর: হ্যাঁ। তবে শুধু ফিজিয়োথেরাপি নয়। আরও তো সমস্যা থাকে। তার জন্যও আলাদা আলাদা থেরাপির প্রয়োজন। যেমন কথাবার্তা সংক্রান্ত সমস্যা মেটানোর জন্য স্পিচ থেরাপি, মানসিক অসংলগ্নতা দূর করতে সাইকো কগনিটিভ ও বিহেভিহারাল থেরাপি, জামার বোতাম আটকানো, ব্রাশ করা ইত্যাদি দৈনন্দিন টুকিটাকি কাজগুলো করার জন্য অকুপেশনাল থেরাপি, হাত-পায়ের অসামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থা দূর করতে অর্থোসিস্ট।
প্রশ্ন: মানে টিমওয়ার্ক?
উত্তর: একদম। টিমওয়ার্ক করেই সবচেয়ে বেশি উন্নতির সম্ভাবনা।
প্রশ্ন: যে কোনও স্ট্রোক রোগীকেই কি এই ভাবে রিহ্যাব করতে হবে?
উত্তর: দেখতে হবে স্ট্রোকের পর রোগীর কী কী ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। সেই বুঝে রিহ্যাব। কারও ধরুন ট্রানজিয়েন্ট ইসকিমিক অ্যাটাক (টিআইএ) হল, সোজা কথায় ছোটখাট স্ট্রোক। হয়তো মুখটা সামান্য একটু বেঁকে গেল। বাঁ হাতটা কিছু ক্ষণের জন্য অবশ লাগল, সে সব ক্ষেত্রে রিহ্যাবের দরকার হয় না। তবে এই ধরনের ছোটখাটো স্ট্রোক হলে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। নিয়মিত ডাক্তার দেখাতে হবে।
প্রশ্ন: কেন? স্ট্রোক তো ঠিক হয়ে গেল। তেমন কোনও সমস্যা আর হল না তো?
উত্তর: এই ধরনের ছোটখাট স্ট্রোক হওয়া মানেই পরবর্তীতে বড় ধরনের স্ট্রোকের আশঙ্কা অনেকখানি বেড়ে যাওয়া। এটি স্ট্রোকের রিস্ক ফ্যাক্টর বলতে পারেন। তাই আগে থেকে সাবধান হতে হবে।
প্রশ্ন: অনেক সময়ই তো হাতটা অবশ লাগে। কিন্তু স্ট্রোক হয়েছে বুঝব কী করে?
উত্তর: স্ট্রোকের কিছু লক্ষণ আছে। যেমন হঠাৎ করে মাথা ঝিমঝিম করল বা ঘুরে গেল, কাজ করতে করতে দেখলেন কাজটা হঠাৎ আটকে গেল, হঠাৎ করে কথা বলতে পারছেন না, বা ঝিমিয়ে পড়লেন, কথা জড়িয়ে গেল বা শরীরের একটা দিক অবশ হয়ে গেল, চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গেল বা অজ্ঞান হয়ে গেলেন ইত্যাদি। তবে এগুলি হওয়া মানেই স্ট্রোক নয়। এ রকম সমস্যা হলে ডাক্তার দেখিয়ে কিছু পরীক্ষা করতে হবে। তবেই বোঝা যাবে ব্যাপারটা আদৌ স্ট্রোক কি না।
প্রশ্ন: সেই মুহূর্তে কী করব?
উত্তর: সবার আগে মনে রাখতে হবে, সময়টা এ ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ রকম কিছু উপসর্গ দেখলে, বিশেষ করে রোগী যদি অজ্ঞান হয়ে যান, তবে স্থানীয় ডাক্তার ডেকে সময় নষ্ট করবেন না। বরং যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা যায়, তত বেশি রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা। কাছাকাছি যে হাসপাতালে স্ট্রোকের চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে, অসুস্থ হওয়ার ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে রোগীকে সেখানে নিয়ে যেতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে রোগীর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না। যদি দেখেন, রোগীর দাঁতে দাঁত লেগে যাচ্ছে, তবে দু’-পাটি দাঁতের মাঝে চামচ ঢুকিয়ে দিতে হবে। রোগীকে কোনও রকম জল, দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। ওষুধ খাওয়ানোর দরকার হলে সেটা জিভের তলায় দিন। বমি করলে এক পাশে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে। নাক-মুখ দিয়ে যদি ফেনা বেরোয়, তবে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ফেনাটা আলতো করে মুছে দিতে হবে।
প্রশ্ন: আর কিছু?
উত্তর: আর কিছু না। এ বার শুধু তাড়াতাড়ি হাসপাতালে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করতে হবে। যাওয়ার আগে হাসপাতালে জানিয়ে যান, এ রকম রোগী নিয়ে যাচ্ছেন, যাতে চিকিৎসা শুরু করতে দেরি না হয়। চিকিৎসার পর স্ট্রোক স্থিত অবস্থায় এলে রিহ্যাব শুরু করে দিতে হবে।
প্রশ্ন: রিহ্যাব শুরু করার পর কত দিনের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন?
উত্তর: রোগীর সমস্যা কতখানি, ব্যাপারটা নির্ভর করে তার ওপর। নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যায় না।
প্রশ্ন: রোগীর যদি অন্য সমস্যা থাকে, তবে কি রিহ্যাব সম্ভব?
উত্তর: এই যে বললাম স্ট্রোক স্থিত হওয়ার পরই রিহ্যাব শুরু করা যায়। তা আপনার ডায়বেটিস, হার্টের সমস্যা, ব্লাড প্রেসার যাই-ই থাকুক না কেন।
প্রশ্ন: তাতে উল্টে সমস্যা তৈরি হবে না তো?
উত্তর: রোগীর কী ধরনের সমস্যা আছে, তা দেখে নিয়েই সেই রোগীর রিহ্যাব কী হবে, তা ঠিক করা হয়। যেমন ধরুন, কারও উচ্চরক্তচাপ আছে। তাঁকে যদি আচ্ছা করে এক্সারসাইজ করানো হয়, তবে তো রোগীর হার্ট অ্যাটক হতে পারে যে কোনও সময়। আধুনিক রিহ্যাবে যে কোনও থেরাপি করার আগে রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখে নেওয়া হয়। সমস্যা অনুযায়ী রোগীর রিহ্যাবের ধরনও বদলে যায়।
প্রশ্ন: এত সব কি বাড়িতে সম্ভব?
উত্তর: এটাও রোগীর ওপর নির্ভর করে তার সমস্যা কতখানি। অল্প কিছু সমস্যায় অবশ্যই বাড়িতে রিহ্যাব সম্ভব। সমস্যা বেশি হলে রিহ্যাব ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে কোনও রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি করা উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy