Advertisement
E-Paper

স্বাস্থ্যশিক্ষায় কুমিরছানার খেল্, মমতাকে চিঠি খোদ উপাচার্যেরই

পরিকাঠামোর ঘাটতি ঢেকে রেখে মেডিক্যাল পঠনপাঠনে ঠাট বজায় রাখতে কুমিরছানা দেখানোর খেলাটা এ রাজ্যে বেশ পুরনো। এ বার সেই খেল্ নিয়ে সরব হলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজেই। মেডিক্যালের পঠনপাঠন সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুমোদন পেতে কী ভাবে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-কে ‘খুশি’ করার চেষ্টা হয়, মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে তা জানালেন স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৪ ০২:২৩

পরিকাঠামোর ঘাটতি ঢেকে রেখে মেডিক্যাল পঠনপাঠনে ঠাট বজায় রাখতে কুমিরছানা দেখানোর খেলাটা এ রাজ্যে বেশ পুরনো। এ বার সেই খেল্ নিয়ে সরব হলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজেই।

মেডিক্যালের পঠনপাঠন সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুমোদন পেতে কী ভাবে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-কে ‘খুশি’ করার চেষ্টা হয়, মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে তা জানালেন স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিষয়ে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের বক্তব্যই কার্যত উপাচার্যের চিঠিতে উঠে আসায় স্বাস্থ্য দফতর বিব্রত।

চিঠিতে কী লিখেছেন স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য?

রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এত দিন অন্য হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক, চেয়ার-টেবিল এনে এমসিআই প্রতিনিধিদের দেখানো হতো। এ বার কয়েক ধাপ এগিয়ে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদের ডাক্তার সাজিয়ে শিক্ষক-চিকিৎসকের অভাব ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার অমিতকুমার ঘোষ এবং ডেপুটি কন্ট্রোলার (এগ্জামিনেশন) শ্রাবণী বিশ্বাসকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পূর্ণ সময়ের শিক্ষক-চিকিৎসক হিসেবে উল্লেখ করে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে এমসিআইয়ের কাছে। অর্থাৎ ওই দু’জন এখন স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তা হওয়া সত্ত্বেও আর জি করে সব ঠিক আছে, এটা বোঝানোর জন্য তাঁদেরই ‘কুমিরছানা’ করে সেখানকার কর্মী-সম্পদ হিসেবে দেখানো হচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুখ্যমন্ত্রীকে লিখেছেন, এটা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এমন উদাহরণ অনেক আছে। সেগুলো জানাতে তিনি যে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান, তা-ও লিখেছেন উপাচার্য। শিক্ষক-চিকিৎসক এবং পরিকাঠামোর অভাবের কারণ দেখিয়ে সম্প্রতি এমবিবিএসে রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলির ৭৫০টি আসন বাতিলের সুপারিশ করেছে এমসিআই। ঠিক সেই সময়েই স্বাস্থ্য-উপাচার্যের এমন অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠি প্রসঙ্গে উপাচার্য জানান, তিনি কিছু দিন আগে বিষয়টি জানতে পারেন। অমিতবাবু ও শ্রাবণীদেবী প্রায় দু’-আড়াই বছর আর জি কর থেকে ‘ডিটেলমেন্ট’ (এক প্রতিষ্ঠান থেকে সংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে যাওয়া)-এ স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন। “কিন্তু অমিতবাবুকে আর জি করের ফার্মাকোলজির পূর্ণ সময়ের শিক্ষক এবং শ্রাবণীদেবীকে মাইক্রো-বায়োলজির পূর্ণ সময়ের শিক্ষক হিসেবে দেখিয়ে রিপোর্ট গিয়েছে এমসিআইয়ের কাছে,” বললেন উপাচার্য। তাঁর ক্ষোভ, যাঁরা তাঁর প্রতিষ্ঠানে পূর্ণ সময়ের দায়িত্বে আছেন এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন, তাঁদেরও এই বেআইনি প্রক্রিয়ার শরিক করা হচ্ছে! এটা তাঁর ভাবনার বাইরে ছিল। তিনি মনে করেন, এতে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থারই। অনিয়ম ক্রমশ বাড়ছে। আর মুখ বুজে থাকাটা রাজ্যের পক্ষে ভাল হবে না ভেবেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। এবং বিস্তারিত ভাবে সব জানানোর জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময় চেয়েছেন।

স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কী বলছেন স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়? প্রশ্ন শুনেই বিরক্তি প্রকাশ করেন সুশান্তবাবু। তার পরে বলেন, “যাঁর ইচ্ছা অভিযোগ করুন। আমাদের চিকিৎসককে যেখানে যেমন ইচ্ছা, সে-ভাবেই ব্যবহার করব। কারও কিচ্ছু বলার থাকতে পারে না।”

কিন্তু ওঁরা যে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণ সময়ের কর্মী হিসেবে কাজ করছেন, এমসিআই-কে তা জানানো হয়নি কেন? এটা কি তথ্য গোপন করারই উদাহরণ নয়? “আমরা যা মনে করেছি, তা-ই করেছি। আপনাদের যা করণীয়, করে নিন,” আরও বেপরোয়া জবাব স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তার। আর জি করের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল অবশ্য যুক্তি দেন, “ওই দু’জন যেখানেই কাজ করুন, তাঁরা বেতন পান আর জি কর থেকেই। তাই তাঁদের এখানকার শিক্ষক-চিকিৎসক হিসেবেই দেখানো হবে।”

কিন্তু ওঁরা তো এখন আর আপনার প্রতিষ্ঠানে পড়ান না? তা হলে ওঁদের আর জি করের শিক্ষক-চিকিৎসক বলা যাবে কী ভাবে?

এর কোনও উত্তর দেননি অধ্যক্ষ।

যাঁদের সাজিয়ে পাঠানো হয়েছিল, সেই অমিতবাবু ও শ্রাবণীদেবীকে ফোন করা হলে দু’জনেই বলেন, “যা জানার দরকার, স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তাকে জিজ্ঞাসা করুন। আমরা কিছু বলার অধিকারী নই।”

parijat bandyopadhyay health education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy