নানা দাবিতে অনশন চলছে জলপাইগুড়ি হাসপাতাল সংলগ্ন ফার্মাসি কলেজে। আন্দোলনরত পড়ুয়াদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের পরীক্ষা করতে আসেন চিকিত্সক। পড়ুয়াদের অনেকে ফ্লু-আতঙ্কে মাস্ক পরলেও চিকিত্সককে অবশ্য মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। শুক্রবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
দুই চিকিত্সকের সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়া এবং পরে সরকারি পদক্ষেপ নিয়ে বির্তক চলছেই। সেই সঙ্গে প্রতি পদক্ষেপেই রোগ মোকাবিলায় চরম অব্যবস্থা ধরা পড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনও রোগীর কফ এবং সোয়াব পরীক্ষার জন্য পাঠানোর আগে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। যদিও, জলপাইগুড়ির দুই চিকিত্সকের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হল না কেন সেই প্রশ্ন উঠেছে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী সোয়াইন ফ্লুর উপসর্গকে ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নির্দেশিকা অনুযায়ী এ এবং বি বিভাগকে মামুলি উপসর্গ বলে ধরা হয় এবং এ ক্ষেত্রে সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণ কিনা তার জন্য পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালেও ভর্তি করার প্রয়োজন হয় না, সংক্রমণের ওষুধেই রোগ সেরে যায়। মামুলি উপসর্গের ক্ষেত্রে পরীক্ষা এবং হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে অযথা আতঙ্ক ছড়াতে পারে বলে নির্দেশিকায় উল্লেখ্য করা হয়েছে। জলপাইগুড়ির দুই চিকিত্সকদের ক্ষেত্রে এই নির্দেশিকা মানাই হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন চিকিত্সকেরই একাংশ। এর ফলে অযথা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বলে তাঁদের অভিযোগ। এ দিকে, এখনও পর্যন্ত সদর হাসপাতালের সব বিভাগে সোয়াইন ফ্লু-র উপসর্গে কী করণীয় তার লিখিত ‘গাইডলাইন’ পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ। সর্তকতার জন্য ব্যবহৃত এন ৯৫ ‘মাস্ক’ও চিকিত্সক স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে পৌঁছয়নি।
জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা শুক্রবার বলেন, “এ বিষয়ে যা পদক্ষেপ করার, তা হয়ে গিয়েছে। নতুন করে কিছু করার নেই। বিষয়টি নিয়ে আর কিছু বলারও নেই। চিকিত্সকদের কোনও ক্ষোভ থাকলে, সরাসরি আমাকে বলতে পারেন।”
চিকিত্সকদের একাংশের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত এক ছাত্রের দেখভালের দায়িত্বে থাকা দুই চিকিত্সক জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন এই খবর কর্তৃপক্ষ পেয়েছিলেন গত ৭ মার্চ। এরপরে গত মঙ্গলবার দুই চিকিত্সকের সোয়াব সংগ্রহ করা হয়। যদিও, সরকারি নির্দেশিকা মেনে তাঁদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়নি। এমনকী তাঁদের রোগী দেখার কাজেও কর্তৃপক্ষ নিষেধ করেনি বলে অভিযোগ। গত বুধবার দুই চিকিত্সকের সংক্রমণের রিপোর্ট আসার পরে, ঘটনাটি জানাজানি হতেই স্বাস্থ্য দফতর নড়েচরে বসে। দুই চিকিত্সককে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এবং কেন আক্রান্ত অবস্থায় তাঁরা রোগী দেখলেন জানতে চেয়ে শোকজ করেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। এই ঘটনায় চিকিত্সকদের একাংশের অভিযোগ, গোড়া থেকেই কর্তৃপক্ষ সরকারি ‘গাইডলাইন’ লঙ্ঘন করেছেন, আর তার দায় চাপানো হয়েছে চিকিত্সকদের উপর।
শিলিগুড়ি শহরে অবাধে ঘুরছে শুয়োর । শুক্রবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
চিকিত্সকদের সংগঠন হেলথ সার্ভিসেস ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের জলপাইগুড়ি শাখার সম্পাদক স্বস্তিশোভন চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, “দুই চিকিত্সককে অসুস্থতার কারণে কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। সে সময় তাঁদের শো’কজ করা অমানবিক।”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিত্সকের অভিযোগ মূলত দু’টি। সরকারি নির্দেশিকা না মেনে মামুলি উপসর্গেও দুই চিকিত্সকের সোয়াব পরীক্ষা করা হয়েছে। যাতে অযথা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া পরীক্ষায় একদিকে যেমন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, তেমনিই খরচও বাড়ছে। দ্বিতীয়ত, নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোনও রোগীর সোয়াব পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হলে, পরীক্ষার আগেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা আবশ্যিক। হাসপাতালের সুপার পার্থ দে বলেন, “প্রয়োজন বুঝেই চিকিত্সকদের পরীক্ষা করানো হয়েছে। নিয়ম মেনেই পদক্ষেপ করা হয়েছে।”
সাধারণ উপসর্গ থাকলেও, দুই চিকিত্সকের সোয়াব পরীক্ষা করাকে অতিসক্রিয়তা বলেই দাবি করেছেন চিকিত্সকদের একাংশ। সেই সঙ্গে হাসপাতালের কোনও বিভাগেই এখনও সোয়াইন ফ্লির গাউডলাইন পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ। জ্বরের রোগী দেখার জন্য এন ৯৫ মাস্কও হাসপাতালের সব চিকিত্সক এবং কর্মীকে দেওয়া যায়নি বলে অভিযোগ।
হাসপাতাল সুপারের কথায়, “চিকিত্সকদের নিয়ে বৈঠক করে, কী করা উচিত্ আর কী করতে হবে না তা জানিয়ে দিয়েছি।” এক চিকিত্সকের কথায়, “সব ওয়ার্ডেই রোগীদের সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। সংক্রমণ ঠেকাতে কী করণীয় তার কোনও লিখিত নির্দেশ না থাকায় সমস্যা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy