Advertisement
E-Paper

৫০০ গ্রামের শিশুকে বাঁচিয়ে দিল পিজি

আশা ছিল না, কিন্তু শেষ একটা লড়াইয়ের আগে হার মানতে চাননি চিকিৎসকেরা। তাতেই অত্যাশ্চর্য জয়! মাত্র ৫২৫ গ্রাম ওজন নিয়ে জন্মানো পুটপুটি বেঁচে গেল! এসএসকেএমে প্রায় দু’মাস যুদ্ধের পরে অস্বাভাবিক কম ওজনের এই শিশুকে বাঁচানোর ঘটনা সদ্যোজাতের মৃত্যু আটকানোর প্রক্রিয়ার অন্যতম মাইলফলক হিসেবে দেখছে স্বাস্থ্য দফতর।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৪ ০২:২০
হাসপাতালের শুশ্রূষায় দেড় কেজির পুটপুটি।  —নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালের শুশ্রূষায় দেড় কেজির পুটপুটি। —নিজস্ব চিত্র।

আশা ছিল না, কিন্তু শেষ একটা লড়াইয়ের আগে হার মানতে চাননি চিকিৎসকেরা। তাতেই অত্যাশ্চর্য জয়! মাত্র ৫২৫ গ্রাম ওজন নিয়ে জন্মানো পুটপুটি বেঁচে গেল! এসএসকেএমে প্রায় দু’মাস যুদ্ধের পরে অস্বাভাবিক কম ওজনের এই শিশুকে বাঁচানোর ঘটনা সদ্যোজাতের মৃত্যু আটকানোর প্রক্রিয়ার অন্যতম মাইলফলক হিসেবে দেখছে স্বাস্থ্য দফতর। সরকারি হাসপাতাল দূর অস্ত্, নামী বেসরকারি হাসপাতালেও এত কম ওজনের শিশুর বাঁচার নজির প্রায় নেই।

৬৪ দিনে ৫২৫ গ্রাম থেকে বেড়ে ১৬০০! এসএসকেএমের নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার বা ‘নিকু’ থেকে পুটপুটি এখন বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি। অথচ গর্ভের সাড়ে ছ’মাসে জন্ম হয়ে যাওয়ার পরে সকলেই ধরে নেন, বাঁচবে না। শিশু মারা যাচ্ছেই ধরে নিয়ে তার নাম পর্যন্ত রাখেননি বাবা-মা। পুটপুটি বলে ডাকতে শুরু করেন চিকিৎসক ও নার্সরাই।

প্রথমে যখন এসএসকেএমের নিকু-তে আনা হয়, তখন গায়ের চামড়া খুলে-খুলে যাচ্ছিল। কোনও অঙ্গই ঠিকঠাক গঠিত হয়নি। এক হাতের তালুতে ধরা যেত। সেই ছোট্ট মেয়েই এখন ফিকফিক করে হাসছে, হাত-পা ছুড়ে খেলছে, দিব্যি চামচে করে দুধ খাচ্ছে। উচ্ছ্বসিত স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর কথায়, “এই রকম সাফল্য পেলে আর বেশি দিন সদ্যোজাত-মৃত্যু ঠেকানোর ব্যাপারে আমাদের তামিলনাড়ু বা কেরলের পিছনে থাকতে হবে না।”

শিশু-চিকিৎসকেরা জানান, কম ওজনের সদ্যোজাতদের তিন ভাগে ভাগ করা যায়। ১ কেজি ৫০০ থেকে ২ কেজি ৫০০-র মধ্যে হলে কম ওজন, ১ কেজি ৫০০-র নীচে হলে অত্যন্ত কম ওজন আর ১ কেজির নীচে হলে মারাত্মক কম ওজনের শিশু বলে ধরা হয়। বিসি রায় শিশু হাসপাতালের সুপার দিলীপ রায় বা চিত্তরঞ্জন শিশু সদনের অধ্যক্ষা সুতপা গঙ্গোপাধ্যায়, সবাই একবাক্যে জানিয়েছেন, ৫০০ বা ৬০০ গ্রামের শিশু তাঁরা পান, কিন্তু বাঁচানো যায় না। সাধারণত ৭৫০ গ্রামের উপরে হলে শিশুকে বাঁচানো যায়। সে দিক থেকে দারুণ সাফল্য।

গত ১২ মার্চ টালিগঞ্জ মাতৃভবনে স্বাভাবিক প্রসবে জন্ম হয় শিশুটির। গড়িয়া সাহাপাড়ার বাসিন্দা মা সঞ্চিতা হালদার ও বাবা মলয় হালদারের দ্বিতীয় সন্তান। সঞ্চিতাদেবী হাসপাতালে মেয়েকে কোলের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলেন, “খাওয়াদাওয়া বা বিশ্রামে ত্রুটি রাখিনি, তা-ও গর্ভের চার মাসে আমার রক্তপাত শুরু হয়। চিকিৎসক ইঞ্জেকশন দিলে কমেছিল। আবার ছ’মাসে রক্তপাত শুরু হয়। তার পরে হঠাৎ এক রাতে জল ভেঙে যায়। তাড়াতাড়ি মাতৃভবনে যাই। বাচ্চা হয়ে যায়। তখন ওর যা অবস্থা ছিল, দেখে শিউড়ে উঠেছিলাম।”

সময়ের অনেক আগে জন্মানো সদ্যোজাতকে ভর্তি করা হয় এম আর বাঙুরে। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় নিয়ে আসা হয় এসএসকেএমে। চিকিৎসক শ্যামল সর্দার বলেন, “মায়ের পেটে শিশুটি ঠিকঠাক বাড়েনি। ফুসফুস, হৃদ্পিণ্ড, চামড়া, অন্ত্র, মস্তিষ্ক, চোখ, কান কিছুই পুরো তৈরি হয়নি। আমরা কেসটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। এখন সফল হওয়ায় অসম্ভব আনন্দ হচ্ছে।”

শ্যামলবাবু জানান, ১৬ মার্চ শিশুটিকে এসএসকেএমে ভেন্টিলেটরে ঢোকানো হয়। এর মধ্যে ১৯ মার্চ ওর জন্ডিস হয় এবং শরীরের পুরো রক্ত বার করে বাইরে থেকে রক্ত দেওয়া হয়। ২২ তারিখ ভেন্টিলেশন থেকে বার করে বিশেষ শ্বাসযন্ত্র লাগানো হয়। এ সময়ে টানা স্যালাইনের মাধ্যমে তাকে প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেলে সমৃদ্ধ বিশেষ খাবার দেওয়া হচ্ছিল। মে মাসের প্রথম থেকে শিশু খানিকটা চামচে, খানিকটা রাইস টিউবে করে মায়ের দুধ খেতে শুরু করে। ১৫ই মে তার ওজন ছিল ১ কেজি ৬০০। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ঠিকঠাক কাজ করছে।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শিবার্জুন ঘোষ বলেন, “ভাল লাগছে। আমি কখনও ৫০০ গ্রামের শিশুকে বাঁচতে দেখিনি। ওকে এর পরেও বেশ কিছু দিন নজরদারিতে রাখতে হবে।”

নিকু-বিশেষজ্ঞ কল্লোল বসুর কথায়, “অসাধারণ ব্যাপার। কল্পনাও করা যায় না শিশুটিকে বাঁচানো গিয়েছে! আমরা যাঁরা সরকারি পরিকাঠামোয় কাজ করি, তাঁরা উৎসাহ পাচ্ছি।” আর সঞ্চিতা পুঁচকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে-দিতে বললেন, “জীবন ফিরে পেল। এ বার ওর একটা সুন্দর নাম দিতে হবে।”

parijat banerjee pg
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy