Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সোনাপুরে খাদে বাস, মৃত ৩০

সোনাপুরে ফের দুর্ঘটনার শিকার হল যাত্রীবোঝাই বাস। ৫০০ মিটার গভীর খাদে বাস পড়ে মৃত্যু হল কমপক্ষে ৩০ জনের। গত রাতে শিলচর থেকে গুয়াহাটি যাওয়ার পথে মেঘালয়ের পূর্ব জয়ন্তীয়া হিল জেলার সোনাপুরে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে নৈশ বাসটি।

খণ্ড-বিখণ্ড। খাদে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের অংশবিশেষ মেঘালয়ের সোনাপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

খণ্ড-বিখণ্ড। খাদে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের অংশবিশেষ মেঘালয়ের সোনাপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর ও গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ১০:১৭
Share: Save:

সোনাপুরে ফের দুর্ঘটনার শিকার হল যাত্রীবোঝাই বাস। ৫০০ মিটার গভীর খাদে বাস পড়ে মৃত্যু হল কমপক্ষে ৩০ জনের। গত রাতে শিলচর থেকে গুয়াহাটি যাওয়ার পথে মেঘালয়ের পূর্ব জয়ন্তীয়া হিল জেলার সোনাপুরে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে নৈশ বাসটি। দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন ৮ জন।

কাছাড় ও মেঘালয় পুলিশ জানিয়েছে, গত কাল ‘অরিহংস ট্রাভেলস’-এর বাসটি কাছাড়ের আইরঙমারা থেকে যাত্রা শুরু করে। রাত ১০টা নাগাদ সোনাপুর মন্দিরের কাছে পাহাড়ি পথে বাঁক নিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেটি খাদে পড়ে যায়। ওই বাসটির সামনে-পিছনে থাকা অন্য বাসের সওয়ারিরা দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের যাত্রীদের আর্তনাদ শুনতে পেলেও তাঁদের কিছু করার ছিল না। জনশূন্য ওই অঞ্চলে তখন বৃষ্টি পড়ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে খাদ থেকে অনেক জখম যাত্রী মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে বাঁচানোর আর্জি জানাচ্ছিলেন। রাত যত বাড়তে থাকে, কমতে থাকে আলো, বাড়ে গোঙানি।

পূর্ব জয়ন্তীয়া হিল জেলার এসপি স্পিল থামার জানান, খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও গ্রামরক্ষী বাহিনীর সাহায্যে রাতেই দড়ি বেয়ে খাদে নেমে উদ্ধারকাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু ওই এলাকায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছিল না। বৃষ্টিও হচ্ছিল। তাই উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়। পরে বিএসএফ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর জওয়ানরা সেখানে পৌঁছন। কিন্তু উদ্ধারকাজ চালানোর সময় পাহাড়ের উপর থেকে পাথর খসে পড়ে কয়েক জন উদ্ধারকারীও জখম হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যাত্রীদের দেহগুলি বাস ভেঙে জঙ্গলে ছিটকে পড়েছিল। মৃতদেহগুলি উপরে তুলতেও খুব সমস্যা হয়। আজ ভোর থেকে একে একে ৩০টি মৃতদেহ বাস ও আশপাশের জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে ১১টি মৃতদেহ ও জখম আট জনকে অনেক পরিশ্রম করে দড়িতে বেঁধে উপরে তোলা হয়।

মেঘালয়ের ডিজিপি রাজীব মেহরার আশঙ্কা নীচে আর কারও বাঁচার সম্ভাবনা নেই। কাছাড়ের এসপি রজবীর সিংহ জানান, মৃতদের মধ্যে ৭ জন সিআরপি বাহিনীর ১২৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ান। তাঁরা ত্রিপুরায় কর্মরত ছিলেন। অনুমান করা হচ্ছে, ট্রেনে বদরপুর বা শিলচর পৌঁছনোর পর বাসে তাঁরা গুয়াহাটি রওনা হন। জখমদের মধ্যেও দু’জন জওয়ান রয়েছেন। তাঁদের অবস্থাও গুরুতর। কাছাড় জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জখম যাত্রীদের নাম সনু সিংহ, পবন মজুমদার, জিলেট কুমার, ইন্দ্রকুমার সিংহ, সুনীল কুমার, যুবরাজ বারৈ, হরি সিংহ ও রাজীব দেউরি।

গত ২৬ জানুয়ারি সোনাপুরেরই কাছে টোংসেং এলাকায় বাস খাদে পড়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। জখম হন ২০ জনেরও বেশি। ২০১২ সালে অগস্টে ওই এলাকাতেই ত্রিপুরাগামী নৈশ বাস খাদে পড়ে ৩১ জন যাত্রী মারা যান। ২৬ জন জখম হন। তবে শিলচর-গুয়াহাটিগামী বাসে গত রাতের মতো এত বড় দুর্ঘটনা আগে ঘটেনি। কয়েক বছর আগে একটি যাত্রীবাহী গাড়ি সোনাপুরে পাহাড় থেকে খরস্রোতা লোভা নদীতে পড়ে হারিয়ে যায়। অনুমান করা হয়, গাড়িতে ১১ জন যাত্রী ছিলেন। কোনও দেহ উদ্ধার হয়নি।

এসপি বলেন, ‘‘লামস্নং থেকে রাতাচেরা পর্যন্ত পাহাড়ি এলাকা বরাবরই দুর্ঘটনাপ্রবণ। চালকদের অসতর্কতা বা মদ্যপ অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ হারানোয় এই এলাকায় দুর্ঘটনা হয়। কিন্তু সোনাপুর মন্দির এলাকা থেকে আগে নৈশ বাস পাহাড় থেকে পড়ার ঘটনা ঘটেনি।’’

দু্র্ঘটনার খবর পেয়ে সকাল থেকেই আইরংমারা, লক্ষ্মীপুর, শিলচর-সহ গোটা বরাক জুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। উৎকন্ঠায় বাসযাত্রীদের পরিজনরা বিভিন্ন কাউন্টারে যোগাযোগ করলেও কোনও নিশ্চিত খবর পাননি। ওই পরিবহণ সংস্থার সব কাউন্টার সকাল থেকে বন্ধ ছিল। এমনকী আইএসবিটিতে গিয়েও তাঁদের কাউকে পাওয়া যায়নি। সাধারণত যে নম্বরে যাত্রীরা ফোন করেন সেটিও বেজে চলছিল। ম্যানেজার আরিফ মজুমদার ফোনে জানান, যাত্রীতালিকা সঙ্গে নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।

মেঘালয় পুলিশ উদ্ধার হওয়া ৮ জন বাদে বাকিদের মৃত ঘোষণা করায় কাউন্টারগুলিতে কান্নার রোল ওঠে। শোকের ছায়া নামে জেলাশাসকের কার্যালয় ও দেওয়ান চা বাগানে। ওই বাসেই গুয়াহাটি রওনা হয়েছিলেন কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী অসিতকুমার দেব। সরকারি কাজে তাঁকে দিসপুর পাঠানো হয়েছিল। দেওয়ান চা বাগানের থাইলো ফাঁড়ির সহকারী ম্যানেজার ভি কে সিংহ ও লাবক ফাঁড়ির সহকারী ম্যানেজার রাধেশ্যাম সিংহও ওই বাসে ছিলেন। খবর পেয়ে দেওয়ান বাগানের ওয়ালিয়া ফাঁড়ির ম্যানেজার প্রভাকর সিংহ ঘটনাস্থলে রওনা হন। জেলা প্রশাসনের তরফে অনুরাগ ফুকন ও জগদীশ ব্রহ্ম নামে দুই ম্যাজিস্ট্রেট এবং ডিএসপি সুধাংশুকুমার দাস ঘটনাস্থলে যান।

অভিযোগ, সরকারি-বেসরকারি বাসগুলি শিলচর থেকে যাওয়ার সময় কাটিগড়া অঞ্চল থেকে সুপারি নিয়ে যায়। ফেরার সময়ও অতিরিক্ত পণ্য বহন করে। এর ফলে অনেক সময় বাস নিয়ন্ত্রণে রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। কাছাড়ের ডিটিও অংশুমান বিশ্বাস বলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টা চলন্ত গাড়িতে নজরদারি চালানো সম্ভব নয়। পর্যাপ্ত কর্মীর অভাব রয়েছে। সে জন্য যাত্রী সচেতনতা প্রয়োজন।’’

মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে রাজ্য পুলিশকে মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে মৃতদের তালিকা নেওয়া ও খাদে পড়ে থাকা দেহগুলি দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BUs accident killed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE