Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
দাদরি

সরকারি রিপোর্টই অখিলেশের প্রশ্নের মুখে

রাজ্য সরকারের এক অফিসারের দেওয়া একটি প্রাথমিক রিপোর্ট। সেই রিপোর্ট অস্ত্র করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যের শাসক দলের ঝাঁপিয়ে পড়া। আবার আট মাস বাদে রাজ্য সরকারেরই অধীনস্থ ল্যাবরেটরির সম্পূর্ণ উল্টো রিপোর্ট। যাকে ঘিরে এ বার কেন্দ্রের শাসক দলের নেতাদের গলা চড়ানো। উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের আগে দাদরির হত্যাকাণ্ড ও গোমাংস বিতর্ককে ঘিরে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি এ ভাবেই ফের মাথাচাড়া দিতে চলেছে বলে অনেকে মনে করছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০৩:৪১
Share: Save:

রাজ্য সরকারের এক অফিসারের দেওয়া একটি প্রাথমিক রিপোর্ট। সেই রিপোর্ট অস্ত্র করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যের শাসক দলের ঝাঁপিয়ে পড়া। আবার আট মাস বাদে রাজ্য সরকারেরই অধীনস্থ ল্যাবরেটরির সম্পূর্ণ উল্টো রিপোর্ট। যাকে ঘিরে এ বার কেন্দ্রের শাসক দলের নেতাদের গলা চড়ানো। উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের আগে দাদরির হত্যাকাণ্ড ও গোমাংস বিতর্ককে ঘিরে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি এ ভাবেই ফের মাথাচাড়া দিতে চলেছে বলে অনেকে মনে করছেন।

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব যেমন খানিকটা নজিরবিহীন ভাবে সরকারি ল্যাবের ফরেন্সিক রিপোর্টেরই সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গো-হত্যার অভিযোগে দাদরিতে গণপ্রহারে নিহত মহম্মদ আখলাকের বাড়ির ফ্রিজে ‘গোমাংস বা ওই গোত্রের মাংস’ ছিল বলে গত কালই রিপোর্ট দিয়েছে মথুরার (উত্তরপ্রদেশ ইউনিভার্সিটি অব ভেটেরিনারি সার্ভিসেস) ওই ল্যাব। কিন্তু অখিলেশের বক্তব্য, ‘‘কে নমুনা পাঠাল, কে তা গ্রহণ করল, তা খতিয়ে দেখতে হবে! ওই বাড়িতে আপত্তিকর কিছুই মেলেনি। প্রত্যেকেই চায় ওই হত্যাকাণ্ডের দোষীদের শাস্তি হোক।’’

এর আগে আখলাকের বাড়িতে পাওয়া মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে গ্রেটার নয়ডার এক ভেটেরিনারি অফিসার প্রাথমিক রিপোর্টে সেটি ‘ছাগল বা ওই গোত্রের মাংস’ বলে জানিয়েছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের বিরুদ্ধে সরব হতে দেরি করেনি সমাজবাদী পার্টি-সহ অন্য দলগুলি। ‘আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা রাজ্যের দায়িত্ব’ বলার পরেও কেন্দ্রকে স্বীকার করে নিতে হয়েছিল, ঘটনাটি দুঃখজনক। কিন্তু নতুন রিপোর্ট আসার পর সুর চড়াতে দেরি করেনি বিজেপি। মুখ খুলেছেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সাংসদ যোগী আদিত্যনাথ।

আদিত্যনাথের দাবি, দাদরি-কাণ্ডে যে ‘নিরপরাধ’ হিন্দুদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের মুক্তি দিতে হবে। নিহত আখলাকের পরিবারকে অখিলেশ প্রশাসন যে সাহায্য দিয়েছে, তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। উত্তরপ্রদেশে গো-মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ না হলেও গো-হত্যা বেআইনি। সেই সূত্র ধরে আখলাকের পরিবারের বিরুদ্ধে গো-হত্যার অভিযোগ দায়ের করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবিও জানিয়েছেন আদিত্যনাথ।

প্রাথমিক ও চূড়ান্ত রিপোর্টে কেন এই পার্থক্য? দাদরির উপ-মুখ্য ভেটেরিনারি অফিসার ভি এস তোমরের ব্যাখ্যা, ‘‘প্রথম বারের পরীক্ষাটা ছিল ‘ভিজ্যুয়াল টেস্ট’। চোখে দেখে মনে হয়েছিল ওটা পাঁঠার মাংস। নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওই নমুনা মথুরায় পাঠানো হয়েছিল। ওই ল্যাব যে রিপোর্ট পাঠিয়েছে, সেটিকেই এখন চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া হবে।’’ ইতিমধ্যেই বন্ধ খামে ওই রিপোর্টের একটি কপি আদালতে জমা
দিয়েছে প্রশাসন।

কাজেই মুখ্যমন্ত্রী যা-ই বলুন, মথুরার ল্যাবের রিপোর্ট নিশ্চিত ভাবেই বিজেপির হিন্দু ভোট মেরুকরণের অস্ত্র হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। একই ভাবে অখিলেশ পরোক্ষে পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে। যা দেখে কারও কারও
মত— দু’পক্ষেরই আসল দায়টা ভোটের। ল্যাব রিপোর্টও তাই মহার্ঘ্য!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Akhilesh Yadav
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE