Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আতঙ্ক সরিয়ে পরীক্ষা শুরু হল কাশ্মীরে

চার মাস ধরে খোলেনি স্কুল। বন্ধ ছিল কোচিং সেন্টারও। পড়াশোনা করতে হয়েছে বাড়িতেই। পরীক্ষার চিরচেনা ভয়ের সঙ্গে ছিল গোলমালের আশঙ্কাও। কিন্তু সে সব কাটিয়ে দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা দেওয়া শুরু করল কাশ্মীরের প্রায় ৪৮ হাজার ছাত্রছাত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:১৮
Share: Save:

চার মাস ধরে খোলেনি স্কুল। বন্ধ ছিল কোচিং সেন্টারও। পড়াশোনা করতে হয়েছে বাড়িতেই। পরীক্ষার চিরচেনা ভয়ের সঙ্গে ছিল গোলমালের আশঙ্কাও। কিন্তু সে সব কাটিয়ে দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা দেওয়া শুরু করল কাশ্মীরের প্রায় ৪৮ হাজার ছাত্রছাত্রী।

অশান্তি আর স্কুল পোড়ানোর জেরে চলতি বছরে পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল কাশ্মীরের পড়ুয়াদের ভবিষ্যত। পড়ুয়ারা যাতে পরীক্ষা না দেয় তা নিশ্চিত করতে সক্রিয় ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদীরাও। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের সময়ে পড়ুয়াদের কথা নিয়ে সরব হন জম্মু-কাশ্মীরের পঞ্চায়েত প্রধানরা। প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন, সমস্যা সমাধানে সক্রিয় হবে সরকার। আজ দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার প্রথম দিন পেরনোর পরে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে কেন্দ্র ও রাজ্য।

শীতের কথা মাথায় রেখে জম্মু-কাশ্মীরে বোর্ডের পরীক্ষা সাধারণত নেওয়া হয় অক্টোবরে। কয়েক বছর আগে বন্যার জন্য তা পিছিয়ে যায়। এ বার পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগই পাওয়া যায়নি বলেই জানিয়েছিল পড়ুয়ারা। কিন্তু রাজ্যের শিক্ষা পরিস্থিতি শুধরোতে নভেম্বর আর মার্চে দু’দফায় বোর্ডের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মেহবুবা মুফতি সরকার। শিক্ষা দফতর জানায়, যারা নভেম্বরে পরীক্ষা দিতে পারবে না তাদের জন্যই মার্চের আয়োজন। পড়ুয়াদের কিছুটা স্বস্তি দিতে পাঠ্যক্রমের ৫০ শতাংশের উপরে পরীক্ষা নেওয়ারও কথা জানায় তারা।

পরীক্ষাকেন্দ্র পাহারায় পুলিশ, আধাসেনার পাশাপাশি হাজির ছিল সেনাও। সকালে দুরুদুরু বুকে পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে রওনা দেয় পড়ুয়ারা। আজ টিআরসি চক-বাটামালু এলাকা-সহ শ্রীনগরের নানা এলাকায় দোকানপাট খোলা ছিল। বেড়েছে যানবাহনের চলাচলও। রাজ্যের অন্য প্রান্তেও পরীক্ষার জন্য কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে জনজীবন।

পরীক্ষা শেষে মোটের উপরে খুশি পড়ুয়ারা। শ্রীনগরের এসপি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে এসে বাবা-মায়ের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল এক দল পড়ুয়া। সকলেই এক বাক্যে বলল, ‘‘আমরা খুশি। পাঠ্যক্রমের ৫০ শতাংশের উপরেই প্রশ্ন এসেছে।’’ বেরিয়ে এসেই বাবাকে জড়িয়ে ধরেছিল উর্দু ভাষার পরীক্ষার্থী তাহিরা আখতার। বলল, ‘‘বাবা সকাল থেকে এখানে দাঁড়িয়ে আছেন। গোলমাল হতে পারে বলে ভয় পাচ্ছিলেন।’’

শ্রীনগরে কোথাও অবশ্য অশান্তির খবর নেই। তবে কোথাও কোথাও পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করেছে দুষ্কৃতীরা। দক্ষিণ কাশ্মীরের পাহনু গ্রামে পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছে পাথর ছোড়ে এক দল যুবক। তবে তাদের দ্রুত সরিয়ে দেয় বাহিনী। সোপোরের বোমাই গ্রামে সকালে বিক্ষোভ দেখায় কয়েক জন। কুলগামের ইয়ারিপোরা এলাকায় প্রশ্নপত্রে গোলমাল আছে বলে পরীক্ষাকেন্দ্র ছেড়ে চলে যাচ্ছিল ছাত্রছাত্রীরা। পরিস্থিতি সামলান জেলা কমিশনার শওকত আজিজ। তাঁর পরামর্শে ফের ক্লাসে ফিরে পরীক্ষা দিতে শুরু করে পরীক্ষার্থীরা। আগামিকাল শুরু হবে দশম শ্রেণির পরীক্ষা। শিক্ষা দফতরের হিসেব বলছে, মোট পরীক্ষার্থীর ৮০ শতাংশই নভেম্বরে পরীক্ষা দিচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kashmir school exams
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE