Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

একাই শপথ নয়া বানানের ইয়েদুরাপ্পার

আগে তিন বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েও কোনও বার পুরো মেয়াদ কাটাতে পারেননি ইয়েদুরাপ্পা।

বি এস ইয়েদুরাপ্পা। ছবি: পিটিআই।

বি এস ইয়েদুরাপ্পা। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৯ ০২:৪৮
Share: Save:

আস্থা ভোটের নাটক নতুন মুখ্যমন্ত্রীর শপথেও বহাল রইল কর্নাটকে।

কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্ত নিতে ‘শুভলগ্ন’ বয়ে যায়। তাই শুক্রবার সন্ধ্যায় তড়িঘড়ি শপথ নিয়ে ফেললেন বিজেপির পরিষদীয় নেতা বি এস ইয়েদুরাপ্পা, সকালেই যিনি রাজভবনে হাজির হয়ে রাজ্যপাল বাজুভাই বালাকে বলেছেন— শীঘ্রই গরিষ্ঠতার প্রমাণ দিয়ে দেবেন, দয়া করে আজকের মধ্যেই শপথের বন্দোবস্ত করা হোক। বিজেপি সূত্রের খবর, সোমবারই বিধানসভায় আস্থা ভোট চাইতে চলেছেন ইয়েড্ডি, তার আগে তাঁর প্রথম লক্ষ্য হবে অনাস্থা প্রস্তাব এনে স্পিকার কেআর রমেশকে সরানো। কারণ কংগ্রেস-জেডিএসের ১৫ বিদ্রোহী বিধায়কের ইস্তফার সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রেখে নতুন সরকারের ভবিষ্যতকেও ঝুলিয়ে রেখেছেন রমেশ। তিনি ইস্তফা গ্রহণ করে নিলেই বিধানসভায় মোট বিধায়কের সংখ্যা কমে যায়, আর ১০৫ সংখ্যা নিয়েই গরিষ্ঠ হয়ে যেতে পারে বিজেপি।

আগে তিন বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েও কোনও বার পুরো মেয়াদ কাটাতে পারেননি ইয়েদুরাপ্পা। কর্নাটকে এ বারের সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের গভীর আশঙ্কা থাকলেও বৃহস্পতিবার রাতে ইয়েদুরাপ্পা অমিত শাহকে জানিয়েছেন, ‘‘আমি ১০১ শতাংশ আত্মবিশ্বাসী!’’ তার আগেই মুম্বইয়ের রিসর্টে বসে থাকা কংগ্রেস-জেডিএসের বিদ্রোহী বিধায়কদের ভিডিয়ো কল করে সমর্থন যাচাই করেন ইয়েড্ডি। সূত্রের খবর, তাঁরা বলেছেন—‘আগে তো আপনি মুখ্যমন্ত্রী হোন, সমর্থন নিয়ে ভাবতে হবে না।’ তার পরেই দিল্লিতে দলের সভাপতিকে ফোন করে শপথের অনুমতি চান ৭৬ বছরের ইয়েদুরাপ্পা।

অলিখিত নিয়মে ৭৫ বছরের পরেই নেতাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় বিজেপি। প্রশ্ন উঠেছে, বয়সের জন্যও কি তাড়াহুড়ো ছিল ইয়েদুরাপ্পার? দিল্লিতে বিজেপির কার্যকরী সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডাকেও এ দিন প্রশ্ন শুনতে হয়েছে— ৭৬-এর ইয়েড্ডি কেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন? নড্ডা কৌশলী জবাবে বলেন, ‘‘৭৬ বছর বয়সে এত দিন তিনি বিরোধী নেতা ছিলেন, তখন তো এই প্রশ্ন ওঠেনি? এখন কেন উঠছে?’’

গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান, ‘শুভলগ্ন’-এর পাশাপাশি নিউমেরোলজিতেও অটল আস্থা ইয়েদুরাপ্পার। দীর্ঘদিন বিরোধী নেতা থাকার পরে এক বার নিজের নামের বানান বদলে ছিলেন তিনি। কী আশ্চর্য, এ বার শপথের পরে স্বাক্ষরে দেখা গেল ফের নামের বানান বদলেছেন ইয়েদুরাপ্পা। দুটো ডি-র একটা কমেছে, আবার ওয়াই-য়ের আগে যোগ হয়েছে আই। ফের যাতে ঠাঁই-নাড়া না-হতে হয় সে জন্যই কি বানানের এই ফেরবদল? জবাবে চওড়া হাসি হেসেছেন লিঙ্গায়েত নেতা, বেশ কয়েক বছর যা অদৃশ্য ছিল তাঁর মুখে।

কিন্তু সিদ্দারামাইয়া? মূলত যাঁর কারণে দিল্লিতে তিন ঘণ্টা বৈঠকের পরেও সরকার গড়তে এগোতে চাননি অমিত শাহ, জেপি নড্ডা, সাধারণ সম্পাদক বিএল সন্তোষেরা। কংগ্রেস বিধায়ক দলের নেতা সিদ্দারামাইয়া বিদ্রোহী নন, কিন্তু মুম্বইয়ে বসে থাকা বিদ্রোহী বিধায়কেরা সকলেই তাঁর অনুগত হিসাবে পরিচিত। শরিক নেতা এইচ ডি কুমারস্বামী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরবর্তী ১৪ মাসে পদে পদে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, কুর্সিই তাঁর নিশানা। স্পিকার গত কাল তিন বিধায়কের সদস্যপদ খারিজ করে দেওয়ার পরে কর্নাটক বিধানসভার সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২২। অর্থাৎ সোমবার গরিষ্ঠাতা প্রমাণের জন্য বিজেপির দরকার ১১২ জনের সমর্থন। কিন্তু তিন দিন আগে আস্থা ভোটে বিজেপি পেয়েছে ১০৫টি ভোট। ইয়েদুরাপ্পা আত্মবিশ্বাসী যাঁদের ভরসায়, তাঁরা কিন্তু সেই সিদ্ধারামাইয়ার অনুগামী। শেষ মুহূর্তে সিদ্দা অন্য খেলা খেললে, বিজেপির যে মুখরক্ষা দায় হবে!

বিজেপির নতুন সরকারের শপথে মঞ্চ আলো করে থাকেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। ইয়েড্ডির শপথে তাঁরা কেউই ছিলেন না, হয়তো কর্নাটকে ‘জুয়া খেলার’ দায় নিতে চাইছেন না বলেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

B. S. Yeddyurappa karnataka BJP JDS Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE