Advertisement
১১ মে ২০২৪

অসমে বন্‌ধ সর্বাত্মক, লোকসভায় নাগরিকত্ব বিল পাশ

বিরোধীদের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও লোকসভায় পাশ হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। আগামিকাল রাজ্যসভায় বিলটি পেশ করা হবে। এ দিকে, এই বিলকে ঘিরে অসম-সহ উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যে আজ বন্‌ধ, বিক্ষোভ হয়

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:০৩
Share: Save:

বিরোধীদের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও লোকসভায় পাশ হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। আগামিকাল রাজ্যসভায় বিলটি পেশ করা হবে। এ দিকে, এই বিলকে ঘিরে অসম-সহ উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যে আজ বন্‌ধ, বিক্ষোভ হয়। তবে এই বিলকে ঘিরে দ্বিধাবিভক্ত অসমও। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বন্‌ধ সর্বাত্মক হলেও সে পথে কার্যত হাঁটেনি বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকা। ত্রিপুরায় বিল বিরোধীরা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে পুলিশ ও দোকানপাটে পেট্রল বোমা, অ্যাসিড ছোড়ে। তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে চার বন্‌ধ সমর্থক জখম হয়।
নাগরিকত্ব বিল নিয়ে গতকাল জেপিসি তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট লোকসভায় পেশ করে। তার ভিত্তিতে ‘সিটিজেনশিপ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৯’ এ দিন লোকসভায় পেশ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে অত্যাচারিত হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, পার্সিদের যাওয়ার জায়গা বলতে ভারত। সেই কারণেই এই সংশোধনী আনা হচ্ছে।’’ ‘ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব’ ভারতীয় সংবিধানের মূল কাঠামোর পরিপন্থী— বিরোধীদের এই অভিযোগ উড়িয়ে নেহরু থেকে মনমোহনের বহু মন্তব্য, দেশভাগের ইতিহাসকে টেনে আনেন রাজনাথ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই তিন দেশের অত্যাচারিত সংখ্যালঘু উদ্বাস্তুদের দায় গোটা দেশকেই নিতে হবে। অসমকে একক ভাবে এই বোঝা বইতে হবে না।’’
নাগরিকত্ব বিলকে ঘিরে অসমের তীব্র অসন্তোষকে প্রশমিত করতে অসমের ছ’টি জনজাতিকে তফসিলভুক্ত করার জন্য একটি বিল সংসদে পেশ করা হচ্ছে বলেও এ দিন জানান রাজনাথ। তাই-অহোম, কোচ-রাজবংশী, সুতীয়া, চা-জনজাতি, মরাণ ও মটক— এই ছ’টি জনজাতিকে তফসিলভুক্ত করার দাবি অসমে দীর্ঘ দিন ধরেই রয়েছে। রাজনাথ জানান, কেন্দ্রীয় সরকার বিলটিতে অনুমোদন দিয়েছে। এরই পাশাপাশি, বড়ো-কছারিদের অসমের পার্বত্য জেলাগুলিতে এবং কার্বিদের সমতলে তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার জন্য আরও একটি বিল আনা হবে।
এ দিকে, অসমে আসু-সহ বিভিন্ন সংগঠনের ডাকা এবং কংগ্রেস, অগপ, এআইইউডিএফ সমর্থিত বন্‌ধে গুয়াহাটি-সহ অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা আজ কার্যত অচল হয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। কেন্দ্রের শ্রমিক-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে এ দিনই ছিল শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা বন্‌ধ। দুইয়ে মিলে অসম ছাড়াও মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয়, অরুণাচলের অধিকাংশ এলাকায় জনজীবন কমবেশি বিপর্যস্ত হয়। বিমান ধরার জন্য যাত্রীরা গত রাত থেকেই গুয়াহাটি বিমানবন্দরে এসে অপেক্ষা করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় রেল ও সড়ক অবরোধ করে বন্‌ধ সমর্থকরা। ডিব্রুগড়ে সিআরপিএফের গাড়িতে আক্রমণ চালায় তারা। শিবসাগরে ওএনজিসির বাস ভেঙে কর্মীদের আক্রমণ করা হয়। সব দোকানপাট, স্কুল, বেসরকারি দফতর, পেট্রল পাম্প বন্ধ ছিল।
কৃষক সংগ্রাম সমিতির নেতা অখিল গগৈয়ের মতে, ‘‘অসমের জনমতকে উপেক্ষা করে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করার ফলে ‘স্বাধীন অসম’-এর দাবি তোলার পথ প্রশস্ত হচ্ছে।’’ অসমের বিদগ্ধ সমাজের অন্যতম মুখ হীরেন গোঁহাইয়ের মতে, ‘‘অসমবাসীকে এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হবে। কেন্দ্র দাবি না-মানলে স্বাধীন অসমের কথা চিন্তা করতেই হবে।’’ অগপ সভাপতি অতুল বরা একদা আসু সভাপতি তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকে আত্মসমীক্ষা করতে অনুরোধ করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Conflicts Assam NRC Assam NRC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE