Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ভূস্বর্গে ভোগান্তি বেশি মেয়েদের

গত ৫ অগস্ট ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল হয় কাশ্মীরে। বিশেষ মর্যাদা হারায় কাশ্মীর। আর তার পর থেকেই টানা বেশ কয়েক দিন দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল কাশ্মীর উপত্যকা। বন্ধ টেলিফোন, ইন্টারনেট। 

ছবি: এপি।

ছবি: এপি।

সংবাদ সংস্থা
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৯ ০২:৫২
Share: Save:

কেমন আছে ৩৭০ মুক্ত কাশ্মীর! কেমন আছেন সেখানকার মেয়েরা!

গত ৫ অগস্ট ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল হয় কাশ্মীরে। বিশেষ মর্যাদা হারায় কাশ্মীর। আর তার পর থেকেই টানা বেশ কয়েক দিন দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল কাশ্মীর উপত্যকা। বন্ধ টেলিফোন, ইন্টারনেট।

পড়াশোনার জন্য কেরলে থাকতে হয় বছর কুড়ির তরুণী উজ়মা জাভেদকে। পরিবারের সঙ্গে ইদ পালনের জন্য ওই সময়ে কাশ্মীরে ফিরেছিলেন উজ়মা। কিন্তু ইদ তো দূরের, ঘরে ফিরে বন্দিদশাতেই ইদ কেটে গেল উজ়মার। সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে উজ়মা জানিয়েছেন, ওই সময়টা সব চেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে কাশ্মীরি মেয়েদেরই।

উজ়মা জানান, সে সময় প্রতিটা মুহূর্ত উৎকণ্ঠায় কেটেছে তাঁর। শ্রীনগরে তাঁদের দোতলা বাড়ির জানলা থেকে বারবার চোখ চলে যেত রাস্তায়। এই বুঝি কিছু হল। সুনসান রাস্তাঘাট। টহল দিচ্ছে আধাসেনা। কেউ কেউ হয়তো আধাসেনাদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাস্তা জুড়ে ছড়ানো কাঁটাতারের গণ্ডি পার করে বেরোতে পেরেছিল। কিন্তু ভয়ে আতঙ্কে কাঁটা হয়েছিলেন পরিজনেরা। বিশেষত বাড়ির মেয়েরা।

উজ়মা জানিয়েছেন, সব চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা হয়েছে, আশপাশের বান্ধবীদের জন্য। প্রায় এক সপ্তাহ ওদের কোনও খবর পাননি তিনি। বললেন, ‘‘মুনাজ়া কী করছে, কেমন আছে, কোনও খবর পাচ্ছিলাম। তা-ও ছেলেরা কোনও ভাবে ইদের নমাজের জন্য বাড়ির বাইরে বেরোতে পেরেছিলেন। আমাদের তো সেটুকুও সম্ভব হয়নি।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘বাবা বা ভাইকেও আমি বাড়ির বাইরে বেরোতে দিতে চাইছিলাম না সে সময়। কিন্তু কোনও উপায়ও ছিল না। বাড়ির নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস এবং রুটিটুকু আনার দরকারে বেরোতেই হচ্ছিল।’’ বাড়ির সামনেই তখন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধেছে বাহিনীর। মায়ের সঙ্গে একা বাড়িতে উজ়মা আতঙ্কে কাঁটা হয়েছিলেন। অনেক রাতে যখন বাবা ও ভাই ঘরে ফিরলেন, তত ক্ষণে উজ়মাকে নিয়ে ছুটতে হয়েছে হাসপাতালে। আতঙ্কে, উৎকণ্ঠায় সে দিন তাঁর রক্তচাপ এমনই বেড়ে গিয়েছিল।

৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ হলে সমাজে লিঙ্গসাম্য প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে মহিলাদের অধিকারও সুরক্ষিত হবে, এমন দাবি করেছিল বিজেপি। তবে তার এক দিন পর থেকেই কাশ্মীরি মহিলাদের দিকে ছুটে এসেছে কুরুচিকর ইঙ্গিত, তা-ও আবার খোদ বিজেপি মন্ত্রীদের বক্তৃতাতেই।

শ্রীনগরের মেকআপ শিল্পী ২২ বছরের সামরিন বললেন, ‘‘যে ভাবে কাশ্মীরি মহিলাদের পণ্যের মতো দেখা হচ্ছে ভারতে এবং তাঁদের শরীরের বিভিন্ন অংশের ছবি ব্যবহার করে ভয় দেখানোর চেষ্টা চলছে এবং সম্মানহানিকর ইঙ্গিত করা হচ্ছে, তাতে প্রতি মুহূর্তে নিজেদের নির্যাতিত মনে হচ্ছে। আর সেই অনুভূতি কাশ্মীরের পুরুষদের আতঙ্কের চেয়েও বেশি ভয়াবহ।’’ শ্রীনগরের বাসিন্দা ২২ বছরের মিসবা রিহাসিও মনে করেন, বিজেপি যে ভাবে মুসলিম মহিলাদের রক্ষা করতে ‘মসিহা’ সাজার চেষ্টা করছে, তা আদতে সত্যি নয়। তাঁর কথায়, ‘‘আশা করি, ভারতের মানুষ এক দিন বুঝতে পারবে, এই দলের কাশ্মীরি মহিলাদের সুরক্ষা দেওয়ার কোনও ইচ্ছা বা প্রচেষ্টাই নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE