Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আয়ুর্বেদ পড়েও অ্যালোপ্যাথি, সুযোগ নয়া বিলে

বিলের ৪৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, পারস্পরিক মত বিনিময়ের জন্য ফি-বছর হোমিওপ্যাথি এবং ইন্ডিয়ান মেডিসিন-এর শীর্ষ সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন মেডিক্যাল কমিশনের কেন্দ্রীয় কর্তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৭
Share: Save:

গত কালই লোকসভায় পেশ হয়েছে জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন বিল। ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-কে ঢেলে সেজে এই বিলে মেডিক্যাল শিক্ষার যাবতীয় ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছে মেডিক্যাল কমিশনের হাতে। একই সঙ্গে নতুন ওই বিলে বলা হয়েছে— একটি ‘ব্রিজ কোর্স’ বা মধ্যবর্তী পাঠ্যক্রম পাশ করলেই অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করতে পারবেন হোমিওপ্যাথ ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা। বিলের এই নতুন ধারা নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে চিকিৎসক মহলে।

বিলের ৪৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, পারস্পরিক মত বিনিময়ের জন্য ফি-বছর হোমিওপ্যাথি এবং ইন্ডিয়ান মেডিসিন-এর শীর্ষ সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন মেডিক্যাল কমিশনের কেন্দ্রীয় কর্তারা। ওই বৈঠকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি ও আর্য়ুবেদ— এই তিনটি পাঠ্যক্রমের মধ্যে একটি সেতু তৈরি করা হবে। এর পরেই বিলে বলা হয়েছে, এই তিন সংস্থার সদস্যেরা এমন একটি মধ্যবর্তী পাঠ্যক্রম তৈরি করবেন, যা পাশ করলে হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা রোগীদের অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ দিতে পারবেন।

নতুন বিলের ওই ধারাটিকে যথেষ্ট উদ্বেগের বলেই মনে করছেন অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, কেউ পাঁচ বছরের পাঠ্যক্রম শেষ করে যা শিখবেন, তা ব্রিজ কোর্স করে কোনও দিনই শেখা সম্ভব নয়। চিকিৎসকদের একাংশের
মতে, দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ দেশে রোগীর অনুপাতে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানোর উপরে জোর দিয়ে আসছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে কোনও সরকারই ভাবনা-চিন্তা করেনি। এখন বহু ক্ষেত্রে বিদেশি অনুদান পাওয়ার প্রশ্নে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কেন্দ্রকে। চিকিৎসকদের একাংশের ধারণা, সেই কারণেই এ ভাবে এক ধাক্কায় দেশে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়াতে চাইছে কেন্দ্র। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক অরুণাংশু তালুকদারের মতে, ‘‘এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে দেশে হয়তো অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকের সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে যাবে। কিন্তু আখেরে কী হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। বিশেষ করে ওই চিকিৎসকদের মান নিয়ে তো প্রশ্ন উঠবেই।’’

এই বিল পাশ হওয়ার আগেই অবশ্য একই পথে হেঁটেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। আর্য়ুবেদ চিকিৎসকেরা ১৭ ঘণ্টার একটি প্রশিক্ষণ শেষে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ লিখতে পারবেন বলে রাজ্যে জারি হয়েছে নির্দেশিকা। সূত্রের যদিও বক্তব্য, কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রকের নির্দেশেই ওই পদক্ষেপ। রাজ্যের এই নির্দেশিকা অনুসারে আয়ুষ চিকিৎসকেরা প্রায় ৬০ রকমের অ্যালোপ্যাথি ওষুধ লিখতে পারবেন। কিন্তু কে ওই চিকিৎসকদের উপরে নিয়মিত ভিত্তিতে নজরদারি চালাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে।

নতুন বিলের ওই পদক্ষেপের মধ্যে গৈরিকীকরণের ছাপ রয়েছে বলেই মনে করছেন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজির চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘আর্য়ুবেদ তার নিজস্ব শ্রদ্ধা নিয়ে থাকুক। কিন্তু তাকে অ্যালোপ্যাথির সঙ্গে মেশাতে হবে কেন? এই মিশেলে সংকর প্রজাতির চিকিৎসক তৈরি হবে। উল্টে আর্য়ুবেদ চিকিৎসকেরা হারিয়ে যাবেন। আমার মনে হয়, এটি একটি ভিত্তিহীন সিদ্ধান্ত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE