বগিবিল সেতু।
দাবিটা প্রথম উঠেছিল চিন যুদ্ধের পরে, ১৯৬৫ সালে। ১৯৭৭ সালে প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের আমলে ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিব্রুগড়ে সেতু তৈরির প্রস্তাব এলেও কথা বিশেষ এগোয়নি। ১৯৮৫ সালে অসম চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল এই সেতু। শেষ পর্যন্ত ছোট্ট একটা চিরকুটের হাত ধরেই আজ দেশের দীর্ঘতম দোতলা সেতু বগিবিলের উদ্বোধন হল।
১৯৯৬ সালে দেবগৌড়া সরকারের শরিক অসম গণ পরিষদের দুই মন্ত্রী বীরেন্দ্র বৈশ্য ও মুহিরাম শইকিয়া বার বার অসমের জন্য কিছু চেয়েও না পেয়ে ক্ষিপ্ত ছিলেন। রেল বাজেটেও ডিব্রগড়ে ব্রহ্মপুত্রের উপরে সেতু চেয়ে পাননি। ক্রুদ্ধ বৈশ্যকে ঠান্ডা করতে প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়া তাঁকে বুদ্ধি দেন, ‘‘রেল বাজেটে বড় কিছু ঘোষণা সম্ভব। বরং রেলমন্ত্রীর বাজেট ভাষণের সময়ে ‘ছোট্ট চিরকুটে’ ডিব্রুগড়ে ‘ছোট সেতু’র আবদার পাঠিয়ে দিন।’’ চিরকুট হাতে পেয়ে বাজেটের মধ্যেই সেই ‘সেতু’ নির্মাণের কথা ঘোষণা করেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান। পরে তিনি বুঝতে পারেন, সেই ‘ছোট সেতু’ গড়া আদতে মহাযজ্ঞ। ১৯৯৭ সালে সেতুর শিলান্যাস করে দেন দেবগৌড়া। কাজ শুরু ২০০২ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ীর আমলে। পরে মনমোহন সিংহ একে জাতীয় প্রকল্প ঘোষণা করেন। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অটলবিহারীর জন্মদিনে সেই সেতুর উদ্বোধন করলেন।
পাঁচ প্রধানমন্ত্রীর নাম জড়ানো এই সেতু ও দু’পারের সংযোগকারী রাস্তা তৈরিতে ৫৯২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ভারতের দীর্ঘতম ও এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বিতল সেতুতে প্রয়োজনে নামতে পারবে যুদ্ধবিমানও! ৭৭ হাজার মেট্রিক টন ইস্পাতে তৈরি, ৪২টি স্তম্ভের উপরে থাকা, ভূকম্পরোধী প্রযুক্তিতে তৈরি সেতুর আয়ু ১২০ বছর। আগে যে দূরত্ব নৌকায় পার হতে তিন ঘণ্টা লাগত এখন ১০ মিনিটেই সেই দূরত্ব পার করা যাবে।
উদ্বোধনে নরেন্দ্র মোদী ও অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল।
ডিব্রুগড়ের দিকে সেতুর ফিতে কেটে উদ্বোধন পর্ব সেরে ধেমাজির দিকে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সেতুর উপরে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে থাকেন মোদী। মাথায় সুতিয়া জনজাতির পাগড়ি, হাতে আহোম তরবারি, গায়ে নিশি জ্যাকেট পরা মোদী বলেন, “অসম-অরুণাচলের মানুষের জীবনরেখা হতে চলা এই সেতু প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।’’ উত্তর-পূর্বে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের খতিয়ান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেন, “স্বাধীনতার পরে ষাট বছরে ব্রহ্মপুত্রের উপরে তিনটি সেতু তৈরি হয়। আর আমাদের চার বছরেই যোগ হল আরও তিনটি সেতু।’’
ছবি: পিটিআই ও নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy