প্রতীকী ছবি।
বছর শেষের ছুটি কাটাতে মুম্বই যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন হুগলির সঞ্জীব চৌধুরী। কিন্তু, রেলের অফিসিয়াল সাইট আইআরসিটিসি থেকে টিকিট কাটতে গিয়ে দেখেন একটা টিকিটও পড়ে নেই। ভেবেছিলেন স্বামী-স্ত্রীর টিকিট শেষের দিকে গিয়ে তৎকালে কেটে নেবেন। সেই মতো অন্য সব ব্যবস্থাও করে রেখেছিলেন। কিন্তু, তৎকালে সেই টিকিট তিনি কাটতে পারেননি। পরে বন্ধুর মাধ্যমে এক টিকিট-দালালের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তিন গুণ বেশি দামে শেষমেশ তাঁর কপালে টিকিট জোটে।
একই অভিজ্ঞতা রানাঘাটের গৌতম বিশ্বাসেরও। বাবার চিকিৎসার জন্য ভেলোর যাওয়ার বড়ই প্রয়োজন ছিল তাঁর। আইআরসিটিসিতে না মেলায় তাঁকেও সেই দালালে আস্থা রাখতে হয়। এবং পকেট থেকে চার গুণ টাকা খরচা করে।
শুধু সঞ্জীব বা গৌতম নন, এমন অভিজ্ঞতা এ দেশের বেশির ভাগ মানুষেরই হয়েছে। তৎকালে কোনও ভাবেই অনলাইনে টিকিট মেলে না। অথচ সেই টিকিটই দালালের কাছে কড়ি ফেললে অনায়াসে মেলে। দীর্ঘ দিন ধরে এমন অভিযোগ পেয়ে শেষে নড়েচড়ে বসে কেন্দ্র। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই)কে। কিন্তু, সর্ষের মধ্যেই যে ভূত ছিল তা প্রাথমিক ভাবে কল্পনা করতে পারেননি গোয়েন্দারা। তদন্তে নামার বেশ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বড় এক টিকিট-চক্রের পর্দা ফাঁস করেছেন তাঁরা। এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করেছে সিবিআই।
আরও পড়ুন: আদিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে টাস্ক ফোর্স গঠনের উদ্যোগ
ঘটনাচক্রে ধৃত সেই ব্যক্তি সিবিআই-এরই এক গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী। গোয়েন্দা সংস্থার অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রামার অজয় গর্গ। তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, টিকিট-চক্রের পিছনে আসলে অজয়েরই মাথা রয়েছে। গোটা চক্রটাই চলত তাঁরই ইশারায়। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ২০১২-য় সিবিআই-এ যোগ দেন অজয়। ‘নিও’ নামে একটি অবৈধ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ওই চক্র চালাতেন তিনি। ওই সফটওয়্যার ব্যবহার করে একসঙ্গে প্রায় ৮০০ থেকে ১ হাজার টিকিট বুক করা যেত। সেই টিকিটই পরে দালালের মাধ্যমে যাত্রীদের কাছে পৌঁছে যেত। আর তা থেকেই কয়েক হাজার লক্ষ টাকা কামাই করতেন অজয়। দিল্লি, মুম্বই, জৌনপুর-সহ ১৪টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে প্রায় নগদ ৯০ লক্ষ টাকা এবং ৬১ লক্ষ ২৯ হাজার টাকার সোনার গয়না, এক কেজি ওজনের সোনার বার এবং ১৫টি ল্যাপটপ-সহ বেশ কিছু যন্ত্রপাতি উদ্ধার করে সিবিআই। অভিযুক্তকে বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হলে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
আরও পড়ুন: বদলে যাচ্ছে টিকিট পরীক্ষকদের ইউনিফর্মের রং
তদন্তকারীরা আরও জানান, সিবিআইয়ে যোগ দেওয়ার আগে ২০০৭-২০১১ পর্যন্ত আইআরটিসি-র ডেভেলপার হিসাবে কাজ করতেন গর্গ। ফলে সেই ওয়েবসাইটের খুঁটিনাটি এবং কী ভাবে সেটাকে কাজে লাগিয়ে জালিয়াতি করে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করা যায়, সেই পথও খুঁজে নিয়েছিলেন। রেল তো বটেই, সাধারণ যাত্রীদেরও প্রতারণার ফাঁদে ফেলেছেন। শুধু তাই নয়, মোটা টাকার বিনিময়ে দালাল ও ট্র্যাভেল এজেন্টগুলোকেও ওই ভুয়ো সফটওয়্যার তিনি বিক্রি করেছেন বলে এক বিবৃতিতে দাবি করেছে সিবিআই। গত এক বছর ধরেই নাকি এই ব্যবসা ফেঁদেছিলেন তিনি। আর এর মধ্যেই বেশ ফুলে ফেঁপে উঠেছিল গর্গের ব্যবসা। তদন্তকারীদের আরও দাবি, বিটকয়েন ও হাওয়ালার মাধ্যমেই গর্গ ও তাঁর দলবলের কাছে টাকা আসত। গর্গের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই একটি মামলা রুজু করেছেন তদম্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy