পুরী-কোণার্ক মেরিন ড্রাইভের পাশেই খাবারের দোকান সুতপা মোহান্তির। সুতপার রুটিরুজি কেড়েছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। সরকারি তৎপরতায় মাথা গোঁজার ঠাঁই মিললেও ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে এই মুহূর্তে ভাবার অবস্থা নেই বছর তিরিশের সুতপার। ত্রাণ মিললেও ঋতুকালীন সমস্যায় স্যানিটারি ন্যাপকিন মেলেনি কোথাও। সুতপার মতো একই অভিজ্ঞতা আলিপদা, খুরদার জয়ন্তী মহাপাত্র, সায়নী ষন্নিগ্রাহী, ফণীর সময় পুরীতে আটকে পড়া বেশ কিছু মহিলা পর্যটকের।
মহিলাদের এই সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে হ্যাম রেডিয়ো। পাটের স্যানিটারি ন্যাপকিন ওড়িশায় পাঠানোর জন্য কলকাতার ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সদস্যেরা ইতিমধ্যেই ইন্ডিয়ান জুট ইন্ডাস্ট্রিজ রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন বা ‘ইজিরা’র সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ইজিরা নিজেদের উৎপাদিত পাটের ন্যাপকিন এর আগে ব্যারাকপুর ও হুগলি চট শিল্পাঞ্চলের কুলি লাইনে বিলি করেছে বিনামূল্যে। ঋতুকালীন সমস্যা নিয়ে মহিলাদের সচেতনও করেছে। ইজিরার পরিচালন কমিটির সদস্য সমীরকুমার চন্দ্র বলেন, ‘‘এই বিপর্যয়ে আমরা ওড়িশার পাশে আছি। মহিলাদের সমস্যা মেটাতে আমরা যত দ্রুত সম্ভব স্যানিটারি ন্যাপকিন পাঠাতে চাই। সেই কাজে আমাদের সাহায্য করছে
হ্যাম রেডিয়ো।’’
ফণী ওড়িশা ছেড়েছে। কিন্তু তার তাণ্ডবে বেসামাল রাজ্যের বড় অংশ। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ওড়িশার ১১টি জেলা। তার মধ্যে কেন্দ্রপড়া, পুরী, জগৎসিংহপুর, খুরদায় ব্যাপক ক্ষতির কথা ঘোষণা করেছে ওড়িশা সরকার। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী থেকে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যেরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন দুর্যোগ-পরবর্তী পরিস্থিতির মোকাবিলায়। স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার পদক্ষেপ করেছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ত্রাণ পৌঁছনোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু সেই ত্রাণে ওষুধ, শুকনো খাবার, পানীয় জল থাকলেও স্যানিটারি ন্যাপকিন ছিল না।
ঝড় থামার পরে যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন ওড়িশায় জরুরি ভিত্তিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরিতে কাজ শুরু করেছে হ্যাম রেডিয়ো। রেডিয়ো ক্লাবের ছ’জন হ্যাম-সদস্য শুক্রবারেই পুরীতে পৌঁছে পুরী-কোণার্ক মেরিন ড্রাইভের কাছে, স্থানীয় হাসপাতাল ও প্রশাসনিক ভবনে অ্যান্টেনা বসিয়ে বায়ুতরঙ্গকে কাজে লাগিয়ে অস্থায়ী যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করেন। এই রেডিয়ো যোগাযোগের মধ্য দিয়েই ঝড়ে বিধ্বস্ত এলাকাগুলির খণ্ডচিত্র নজরে আসতে শুরু করেছে। ইউনিসেফ, সিভিল ডিফেন্স, এনডিআরএফ, স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে ফণী-পরবর্তী পরিস্থিতির মোকাবিলা এবং ত্রাণ পৌঁছনোর নানা প্রচেষ্টার মধ্যে যেটি নজর কাড়ছে, সেটি হল দুর্গত এলাকায় কয়েক হাজার মহিলার ঋতুকালীন সমস্যা সামাল দেওয়ার ব্যবস্থা।
হ্যাম রেডিয়োর তথ্য অনুযায়ী ওষুধের দোকান বন্ধ। সরকারি হাসপাতালের আইসিসিইউয়ে থাকা রোগীকেও বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ফণী আসার আগে। হাসপাতালে ওষুধের দোকানে এখন ন্যাপকিন খুঁজতে যাওয়া অর্থহীন। ইউনিসেফ সূত্রে জানা গিয়েছে, ফণীর গতিপথে ২৮ লক্ষ মানুষের বসবাস, যার মধ্যে ১০ লক্ষ শিশু। এই অবস্থায় নাবালিকা ও প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের ঋতুকালীন সমস্যার বিষয়টি দেখার কথা জানিয়েছে ইউনিসেফও।
ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এক দিকে লোকসভা নির্বাচনে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারি যোগাযোগ ব্যবস্থা সামালাচ্ছে হ্যাম রেডিয়ো। অন্য দিকে, ওড়িশার এই দুর্যোগে যে-জ্বলন্ত সমস্যাটি সামনে এসেছে, সেটি যথেষ্ট উদ্বেগের। আয়লার সময়েও এই সমস্যা হয়েছিল। আমরা বিষয়টি ওড়িশা প্রশাসনকে জানিয়েছি। একই সঙ্গে মহিলা হ্যামদের মাধ্যমে ফণী-বিধ্বস্ত এলাকার মহিলাদের কাছে নিজ উদ্যোগে স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy