সুনসান: প্রায় জনমানবশূন্য পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সামনের রাস্তা। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
পাইলিন-সহ ঘূর্ণিঝড়ের নামগুলো গড়গড় করে বলছিল লক্ষ্মী নায়েক। দশম শ্রেণির ছাত্রী লক্ষ্মীর সবক’টা নাম মুখস্থ। জগন্নাথ মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে সেটাই বলছিল বছর পনেরোর কিশোরী। পাশে দাঁড়ানো লক্ষ্মীর কাকিমা সুভদ্রা হেসে বললেন, ‘‘পুরীতেই জন্ম আমাদের। তাই ঘূর্ণিঝড় কবে, কোথায় হয়েছে, সবটাই জানা আমাদের। মনেও থাকে সকলের। তবে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে এত আগে থেকে এত আলোচনা শুনিনি!’’
এই আলোচনার কারণ রয়েছে, বলছেন আবহবিজ্ঞানীদের একাংশ। এর আগে অবশ্য ১৯৯৯ সালের সুপার সাইক্লোনের অভিজ্ঞতা রয়েছে পুরীর, কিন্তু তা সম্পূর্ণ প্রস্তুতিহীন অবস্থায়! একদম অতর্কিতে যে ‘দাপট’ সামলাতে হয়েছিল। আবহবিজ্ঞানীদের কথায়, এবার ফণীর আসন্ন দুর্যোগ সম্পর্কে ঠিক সময়ে যেমন পূর্বাভাস দেওয়া গিয়েছে, তেমন যথাসম্ভব সতর্কতাও অবলম্বন করা গিয়েছে। দিল্লির মৌসম ভবনের এক আবহবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘পূর্বাভাস দেওয়ার কারণে তবু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া গিয়েছে।’’ আর আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলছিলেন, ‘‘চারিদিকে আলোচনার ফলে আসন্ন বিপর্যয় যদি এড়ানো যায়! সব ব্যবস্থাই তো নেওয়া হচ্ছে।’’
সতর্কতা যে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে, তা বৃহস্পতিবার পুরীর রাস্তা-ঘাটের ছবিতেই পরিষ্কার। সুনসান রাস্তাঘাট। অত্যুৎসাহী কয়েক জন সমুদ্রের উত্তাল রূপ দেখার জন্য জড়ো হয়েছেন বটে, কিন্তু তা সমুদ্র থেকে দূরে রাস্তায়। তার উপরে হঠাৎ লোডশেডিং, গাড়ির হেডলাইটের আলোতেই তখন রাস্তায় যেটুকু আলো। এটিএমের সামনে ভিড়।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
জল-জমা রাস্তার পাশেই জেলাশাসকের বাংলো ও দফতরের ভিতরে একই ‘সক্রিয়তা’! পুরীর জেলাশাসক জ্যোতিপ্রকাশ দাস জানান, মোট এক লক্ষ ৩০ হাজার বাসিন্দাকে স্থানান্তরিত করা প্রয়োজন। এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এক লক্ষ ১৩ হাজার মানুষকে ‘সাইক্লোন শেল্টার’-এ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকিদেরও সরানোর কাজ চলছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, স্থানান্তরিত হওয়া মানুষদের রান্না করা ও শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন হোটেল খালি করে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা নিজেরা পুরী থেকে এখনও বেরোতে পারেননি, তাঁদের বিশেষ ট্রেনে বা বাসে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, উপকূলবর্তী জেলাগুলির প্রায় ৮ লক্ষ মানুষকে সরানোর কাজ চলছে। ওড়িশার উপ-ত্রাণ কমিশনার প্রভাতরঞ্জন মহাপাত্র বলেন, ‘‘জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দশটি ব্যাটেলিয়ন ও দমকলের ৫০০টি দল মোতায়েন করা হয়েছে। নৌসেনা ও উপকূলবর্তী বাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি।’’ নৌসেনা জানিয়েছে, বিশাখাপত্তনম থেকে তিনটি জাহাজ ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে রওনা দিয়েছে। নজরদারি ও উদ্ধারের জন্য হেলিকপ্টারও তৈরি। সুপার সাইক্লোনে চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল নন্দনকাননও। তাই সেখানে বাড়তি সতর্কতা। সতর্ক সাধারণ মানুষও। বন্ধ দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সেবক গণেশদাস মহাপাত্র বলছিলেন, ‘‘প্রশাসন বাইরে বেরোতে বারণ করেছে আগামী ২৪ ঘণ্টা। তাই সব দোকান বন্ধ। না হলে তো এই সময়ে ভিড় গিজগিজ করে।’’
ভিড় নেই। কিন্তু তাতে খুশি ভক্তরা। দিল্লি থেকে তিরিশ জনের দল নিয়ে জগন্নাথ-দর্শনে এসেছেন সঞ্জয় গর্গ। তাঁদের কথায়, ‘‘খুব ভাল দর্শন করলাম। কোনও চিন্তা নেই। পুরীর কিচ্ছু হবে না।’’ আজ, শুক্রবার সকালেই ফণীর আছড়ে পড়ার কথা। তার আগে ‘কিচ্ছু হবে না’—এই আশাতেই বুক বাঁধছে নীলাচল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy